ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

ত্রিপুরায় একাত্তরের স্মৃতি

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৭
ত্রিপুরায় একাত্তরের স্মৃতি ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের সহ- সভাপতি তাপস দে

আগরতলা (ত্রিপুরা) থেকে ফিরে: আগরতলার পোস্ট অফিস চৌমুহনী। যেখানে প্রায় ৯শ’ শহীদ বীর সেনানীর স্মৃতি স্তম্ভ। তার পাশে দাঁড়িয়ে একাত্তরের স্মৃতিচারণ করে স্তম্ভটি দেখাচ্ছিলেন ব্যাংকার মনোজ চৌধুরী।

এই স্মৃতিস্তম্ভ এলাকায় সংরক্ষিত পরাজিত পাক বাহিনীর ফেলে যাওয়া ট্যাংক ও কামান যেনো মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী হয়ে আছে আজো। ত্রিপুরার আগরতলার পোস্ট অফিস মোড় চৌমুহনীতে স্মৃতি স্তম্ভের অবস্থান।


 
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাক বাহিনী আত্মসমর্পণের পর ফেলে যাওয়া ট্যাংক ও কামান ত্রিপুরাবাসীর জন্য উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল অররা সিং। স্মৃতিস্তম্ভটি স্থাপন করা হয় ১৯৭২ সালে।

সরেজমিন দেখা যায়, আগরতলা পোস্ট অফিস মোড় চৌমুহনীতে বীর সেনাদের স্মৃতিস্তম্ভের পাশে রাখা হয়েছে কামান ও ট্যাংক। পাশেই কংগ্রেস ভবন। যে ভবনটি স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন এ অঞ্চলের অনেক ইতিহাসের সাক্ষী।
৭১ এর যুদ্ধে পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া কামান
ত্রিপুরা রাজ্যের কংগ্রেসের সাবেক এমএলএ ও বর্তমান ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের সহ- সভাপতি তাপস দে বাংলানিউজকে বলেন, এই স্মৃতিস্তম্ভ হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন দিবসে এখানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘ।

তাপস দে বাংলানিউজকে বলেন, ৭১ সালের যুদ্ধের সময় মিত্র দেশ হিসেবে ভারত সরকার সব ক’টি সীমান্ত খোলে দিয়েছিলো। ত্রিপুরা সীমান্তের সব ক’টি খালি জায়গায় তাঁবু টানিয়ে শরণার্থীদের জায়গা করে দেওয়া হয়। তিনি নিজেও শরণার্থী শিবিরে খাবার বন্টন করেছেন। বাংলাদেশের শরণার্থীদের নিজের আপনজন হিসেবে নিয়েছিলাম আমরা।    

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিলেন দাদা শহীদ রমনী মোহন চক্রবর্তী। দাদার স্মৃতিচারণ করে নাতি বাট্চু চক্রবর্তী বলেন, ’৭১ সালে তখন আমাদের বাড়ি কুমিল্লায়। দাদা যুদ্ধে গিয়ে আর ফিরেননি। স্মৃতির আয়নায় দাদার সেই মুখখানা এখনও ভেসে ওঠলে স্মৃতিস্তম্ভের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি।
ত্রিপুরায় ৭১ এর স্মৃতি স্তম্ভ ও পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া কামান

সাবেক বিধায়ক লক্ষী নাগ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার ছোট ভাই অমল নাগ এয়ারফোর্সে ছিলো। সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেয়। এক পর্যায়ে নোয়াখালী জেলার মাইজদীতে পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যায়। তাকে অনেক নির্যাতন করা হয়েছিলো। নির্যাতনের সেই ক্ষতচিহ্ন নিয়ে এখন বেঁচে আছেন অমল নাগ।

১৯৭১ সালের ষোল ডিসেম্বর তাকে ফাঁসি দেওয়ার কথা থাকলেও দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়াতে সে বেঁচে যায়। ওই সময় বাংলাদেশি পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছিল ক্যাপ্টেন নাগ মুক্ত। তখন জানতে পারি, সে বেঁচে আছে। যুদ্ধকালীন সময়ে অমল নাগ ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
 
শরীরে পাক বাহিনীর ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়ানো অমল নাগকে অনেক বিশ্বাস করতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর জীবন সংকটাপন্নের কথা তিনি আগেই বলেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষকে এতোই বিশ্বাস করতেন যে, তিনি অপলকে অমল নাগকে বলেন, আমাকে আবার কে মারবে!
 
বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৭
এনইউ/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।