ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

সবুজে ঘেরা নেহেরু পার্ক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৭
সবুজে ঘেরা নেহেরু পার্ক সবুজে ঘেরা নেহেরু পার্ক

ত্রিপুরা থেকে ফিরে: মেঘের আঁধার কেটে আকাশে মিষ্টি রোদের হাসি। আগরতলার সবুজ সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সময়টা মানানসই। গন্তব্য গোর্খাবাসটিতে অবস্থিত নেহেরু পার্ক। পার্কে পৌঁছাতে বিকেল ৪টা ছুঁই ছুঁই। কয়েক মিনিট পরেই খুলবে প্রবেশদ্বার।

ইতোমধ্যে সামনের সড়কে হয়েছে অপেক্ষমাণ মানুষের জটলা। টিকিটের জন্য অপেক্ষাও যেন উৎসবমুখর।

৬ রুপির প্রবেশ ফি দিয়ে প্রবেশদ্বার পেরুতেই শান্ত ছিমছাম পরিবেশ। যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা সবুজ শ্যামল অপরূপ মায়াবী। চারপাশের বাতাসে তখন কিচিরমিচির শব্দ। মনে হলো পাখিরা স্বাগত জানাচ্ছে অতিথিকে।

লাল ইটের গাঁথুনির তিনটি পথ গিয়ে মিশেছে উদ্যানের ভেতর। সোজা তাকাতেই চোখে পড়লো বিশাল আকৃতির মানব প্রতিকৃতি। উদ্যানের নামকরণ থেকেই সহজেই অনুমান করলাম এটি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর। ডান দিকে কিছুটা এগোতেই দেখা হলো একদল শিশুর সঙ্গে। একে অপরের সঙ্গে খুনসুঁটিতে বাড়ি ফেরার তাড়া নেই তাদের। এটিই উদ্যানে শিশুদের জন্য ছোট্ট কর্নার।

সবুজে ঘেরা নেহেরু পার্ক

এখানে শিশুরা কেউ ব্যস্ত দোলনায়, মাছ কিংবা গাছের আকৃতির স্লিপারগুলোতে। পাত্তা নেই কোনোদিকে। তাদের এই ইতিউতি ব্যস্ততা দেখে চেনা মায়া খুঁজতে চায় মন। তাইতো নাগরিক জীবনের রুক্ষতা থেকে একটু হলেও দৃষ্টিরা স্থির এখানে।

হাঁটার পথ ধরে দেখা মিললো ফুল ও বাহারি পাতার বৃক্ষের। এরমধ্যে রয়েছে চাঁপা, কৃষ্ণচূড়া, রঙ্গন কলাবতী, পামগাছ, ঝাউ, নিম প্রভৃতি।

লেক, পানির ফোয়ারা, পদ্ম পুকুর, কৃত্রিম মিকি মাউস আর সারসপাখি দেখতে দেখতে উদ্যানে বনবিভাগের অফিসে সামনে দাঁড়ানো। এরই মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা কেটে গেছে।

সেখানে ফরেস্টার শৈলেন্দ্র রায়ের সঙ্গে দেখা। তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানালেন বনবিভাগের ৫ জন কর্মী, ১০ জন পরিচর্যাকারী উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করেন। বিকেলে মাত্র ২ ঘণ্টার জন্য পার্ক খোলা থাকলেও দু’তিনশ দর্শনার্থীর জনসমাগম হয়।

গল্পে-স্বল্পে শৈলেন্দ্র রায় আক্ষেপ করে জানালেন, ছোটবেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থাকতেন। ১৯৬৪ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রায়েরপুর হাট দাঙ্গায় সব সম্পত্তি ফেলে ভারতে আসেন। কষ্ট লাগে তাই বাংলাদেশে আসেন না।
 সবুজে ঘেরা নেহেরু পার্ক
ঘুরতে ঘুরতে ফিরে এলাম ভাস্কর ধ্রুব দাস নির্মিত নেহেরুর প্রতিকৃতিটির সামনে। সাদা টাইলসের ভিতের উপর দাঁড়ানো ভাস্কর্যটি। নেহেরু পার্কের গোড়াপত্তন হয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের হাত ধরে। ২০০৩ সালের ত্রিপুরা সরকার পার্কটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। একবছর পর ১৬ ফেব্রুয়ারি পার্কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।

সেসময় পার্কের মূল অংশে স্থাপন করা হয় নেহেরুর প্রতিকৃতিটি। পার্কের নামকরণও করা হয়েছে এই মহান নেতার নামে।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে শহরের মানুষগুলোর জন্য অবসর আর একরাশ বুকভরা নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা। আগরতলা ঘুরতে গেলে বিকেলে একচক্কর দিতে পারেন এ পার্কে।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।