ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

সংরক্ষণের অভাবে হারাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৭
সংরক্ষণের অভাবে হারাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ক্যাম্পের স্থানটি

আগরতলা: একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নয় মাসে শহীদ হয়েছেন বহু অখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা। ত্রিপুরা রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকায় রয়েছে বহু শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি ও স্মৃতিস্তম্ভ। অবহেলা আর অনাদরে হারিয়ে যাচ্ছে সেসব স্মৃতিচিহ্ন।

মুক্তিযুদ্ধকালে ত্রিপুরা রাজ্য ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে যুদ্ধের রণকৌশলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সে সময় ত্রিপুরার জনগণ বিপদাপন্ন বাংলাদেশিদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

এ কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মতো ত্রিপুরা রাজ্যেও উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রতিটি জেলাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন।  

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এমন একটি জায়গা হলো ত্রিপুরার সিপাহীজলা জেলার সেকেরকোট এলাকার শনখলা। ১৯৭১ সালে এখানে তৈরি হয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের বিশাল এক ক্যাম্প। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ১৭ কিমি দূরে ছিলো ক্যাম্পটি। আগরতলা থেকে রাজ্যের একেবারে দক্ষিণের শহর সাব্রুমগামী ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গিয়ে সেকরকোট চা বাগানের মধ্য দিয়ে কাঞ্চনমালা এলাকায় যাওয়ার রাস্তা ভাগ হয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে প্রায় ১ কিমি গেলেই শনখলা।

জাতীয় সড়ক যেখানে কাঞ্চনমালা যাওয়ার রাস্তায় ভাগ হয়েছে সেখানে এখন কিছু দোকান হয়েছে। দোকানগুলোর সামনে গিয়ে শনখলার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের কথা জিজ্ঞেস করা হলে ৫৩ বছর বয়সী সুজিত কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে ক্যাম্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। সঙ্গে করে নিয়ে যান সেই স্থানে যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিলো।

সুজিত কুমার জানান, তখন তিনি প্রথম অথবা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তেন। প্রতিদিনই ক্যাম্পে আসতেন। দেখতেন মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে নানা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সাফসাফাই করছেন আবার দল বেঁধে তারা যুদ্ধে বেরিয়ে যেতেন। ফিরে আসার সময় অনেকে আহত হয়ে কেউ আবার শহীদ হয়ে অন্য সেনাদের কাঁধে চড়ে ফিরতেন।  

মুক্তিযুদ্ধকালের স্মৃতিচারণ করে সুজিত কুমার আরও জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি জায়গাটিতে ভারতীয় সেনা বাহিনীর ক্যাম্পও ছিলো। সেনা সদস্যরা তাঁবু খাটিয়ে থাকতেন। ক্যাম্পে এলে সেনা জওয়ানরা শিশুদের রুটি খেতে দিতেন। সেনা বাহিনীর অন্যান্য কাজকর্ম দেখার পাশাপাশি রুটি খাওয়ার আগ্রহ থেকেও সুজিত কুমারসহ তার বয়সী ছেলেরা সেনা ক্যাম্পে আসতেন।

এখনও স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন সুজিত কুমার বিশ্বাসমুক্তিযুদ্ধের সময় যে জায়গায় সেনা ক্যাম্প ছিল এখন সেখানে চা বাগান ও রাবার বাগান গড়ে উঠেছে বলে জানান সুজিত। সেখানে এখন তৈরি হয়েছে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রও।

সুজিত কুমার বিশ্বাস জানান, প্রায় প্রতিদিনই শহীদ জওয়ান ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মরদেহ ফিরতো। তাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হতো ক্যাম্পের পাশে টিলার ঢালু জমিতে। শহীদদের স্মৃতিতে যুদ্ধের পর এখানে একটি শহীদ বেদী তৈরি করা হয়েছিলো। ক্যাম্পের যেসব সেনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তাদের নাম লেখা ছিলো ওই বেদীতে। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে বেদী ভেঙে পড়েছে। এখন শুধু সিমেন্ট বাধানো বেদীর নিচের অংশ রয়ে গেছে।

তবে এই স্মৃতিচিহ্নও বেশিদিন থাকবে না বলে জানান সুজিত কুমার বিশ্বাস। কারণ পাশেই রয়েছে সেকেরকোট রেলওয়ে স্টেশন; আর এখন সেখানে গড়ে উঠবে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালা তেল সরবরাহকারী সংস্থার ডিপো। এই ডিপোর জন্য রেলওয়ে স্টেশনের পাশের এক বর্গকিমি এলাকার জমি অধিগ্রহণ করা হবে। অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যেই পড়েছে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পের জায়গাটি। তাই অচিরেই হারিয়ে যাবে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচিহ্নটি।

বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের সরকার চাইলে শহীদদের স্মৃতিচিহ্নটি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারতো বলেও হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুজিত কুমার বিশ্বাস।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৭ 
এসসিএন/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।