সরকার স্বীকৃত তথ্য অনুসারে ত্রিপুরা রাজ্যে মোট ১৯টি জনজাতি গোষ্ঠী রয়েছে, সেই সঙ্গে রয়েছে তাদের বহু উপজাতি গোষ্ঠী।
এ সব জনজাতি ও উপজাতি গোষ্ঠীর প্রায় সব নারীরা পরিধানের জন্য রিয়া ও পাছরা ব্যবহার করেন।
প্রাচীনকাল থেকে জনজাতি সমাজে রিশা পরিয়ে সম্মান জানানোর রীতি চলে আসছে। তা এখনো অব্যাহত। বরং এ প্রথা এখন ত্রিপুরা রাজ্যের জনজাতি সমাজ ছাড়িয়ে অন্যান্য জাতি গোষ্ঠির মধ্যে প্রবেশ করেছে।
যুগ যুগ ধরে জনজাতি অংশের মানুষ নিজেরাই তাদের ঘরে হস্ত তাঁতে প্রয়োজনীয় কাপড় তৈরি করে আসছেন। তাই জনজাতি গোষ্ঠী ভেদে তাদের রিয়া পাছরায় নিজস্ব শৈলী রয়েছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় জনজাতি অংশের মানুষ মর্ডান পোশাকে অভ্যস্ত হয়ে পড়লেও সামাজিক অনুষ্ঠানে এখনো তারা চিরাচরিত পোশাক পরে অংশ নেন। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় তাদের চিরাচরিত তাঁতের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় পুরুষের জন্য ফ্যাসনেবল শার্ট, কোট, ব্যাগ ইত্যাদি।
জনজাতির পাশাপাশি আজকাল অন্য জাতিগোষ্ঠীর নারীরাও নানা অনুষ্ঠানে রিয়া-পাছরা পড়ছেন।
আগরতলা থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরের মান্দাই এলাকার জনজাতি গৃহবধূ সবিতা দেববর্মা বাংলানিউজকে জানান, বাড়ির নিত্যদিনের কাজ শেষে অবসর সময়ে দৈনিক দেড়-দুই ঘণ্টা করে কাজ করলে একটি রিয়া তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় একমাস ও একটি পাছরা তৈরি করতে সময় লাগে ১৫দিন। এক জোড়া রিয়া পাছরা নূন্যতম দাম ৪ হাজার রূপি থেকে শুরু হয়ে ১০ হাজার রূপি পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়। মূলত কারু কাজের ভিত্তিতে এগুলির দাম স্থির হয়।
এতো সুন্দর একটি কাপড় সম্পর্কে ভারত ও ভারতের বাইরের অনেকেই পরিচিত নন। বিষয়টি ভাবায় বিজেপি সভাপতি বিপ্লব কুমার দেবকে। তাই এবার ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বিষয়টি খুব প্রচারে নিয়ে আসেন বিজেপি সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব। তিনি বিভিন্ন প্রচার সভায় বলেন, যে বিজেপি ত্রিপুরা রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় এলে জনজাতিদের প্রথাগত কাপড়কে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এমনকি বিদেশে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি ত্রিপুরা রাজ্যের রিয়া-পাছরাকে তুলনা করেন গুজরাট রাজ্যের গ্রামীণ নারীদের আমূল ব্রান্ডের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিনি বলেন ওরা পারলে আমরা কেন পারবো না।
জনজাতি অংশের নারীরা খুশী, আগরতলায় এখন চলছে হস্ততাঁত শিল্প মেলা ও প্রদর্শনী। এখানে জনজাতি মহিলারা তাদের তাঁতে তৈরি সামগ্রী নিয়ে এসেছেন।
তাদের একজন সবিতা দেববর্মা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে তারা খুশী, কারণ রাজ্য সরকার তাদের উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রির উদ্যোগ নিলে তারা লাভবান হবেন। অপর এক নারী হিরণমালা দেববর্মা জানান, মেলা ও প্রদর্শনীতে বিক্রি ভালই হচ্ছে। রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিলে তারা নিজেরাও দোকান করতে পারবেন। এখন তাদের দোকান নেই বলেও জানান বাংলানিউজকে।
ভারত সরকারের তরফে ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকায় ক্লাষ্টার তৈরি করে জনজাতি নারীদের তাঁতের সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ও ক্লাষ্টার তাদের উৎপাদিত কাপড় কিনে নিচ্ছে বলেও জানান।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১১ ঘণ্টা, ৫এপ্রিল ২০১৮
এসসিএন/আরএ