বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে প্রথমবারের সংসবাদমাধ্যমকে একথা জানালেন তিনি।
নিজের ও সমাজের ওপর অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে ১৯৯০ সালের ১১ জুলাই আত্মসমর্পনকারী ত্রিপুরা ন্যাশনেল ভলন্টিয়ারের (টিএনভি) কয়েকজনকে নিয়ে অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (এটিটিএফ) গঠন করেছিলেন রঞ্জিত দেববর্মা।
ত্রিপুরা পশ্চিম জেলার এসরাই পাড়ার পৈত্রিক বাড়ি থেকে বের হয়ে শুরু হয় কঠিন লড়াই। এই লড়াইয়ে একদিকে যেমন ত্রিপুরা রাজ্যের সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠেছিলেন তেমনি রাজ্যসহ ভারত সরকারের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
এই লড়ায়ে সঙ্গীদের নিয়ে মিয়ানমারসহ অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গহীন জঙ্গলে যেমন রাতদিন কাটিয়েছেন তেমনি ছিলেন বিভিন্ন দেশের নানা শহরেও।
এই লড়াই সংগ্রামের জীবনে থেকেই মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের প্রায় ১৪ থেকে ১৫টি দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন রঞ্জিত। এমনকি জাতিসংঘের উদ্যোগে জেনেভায় আয়োজিত আলোচনা সভাও যোগ দেন তিনি।
এর মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের প্রায় সব বিচ্ছিনতাবাদি জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে তার। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছিলেন রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই। এই লড়াইয়ে শুধু যে সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরই ক্ষতি হয় তা কিন্তু নয়, ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষেরও।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ গিয়েছিলেন রঞ্জিত; সে খবর চলে যায় দেশটির গোয়েন্দা শাখার কাছে। এক পর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ও পরবর্তীতে বিজিবি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যদের হাতে তুলে দেয়।
মেঘালয় রাজ্যের ডাউকি সীমান্তে বিজিবি তাকে বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেয়। সেখান থেকে বিএসএফ তাকে ত্রিপুরা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে।
ত্রিপুরা পুলিশের খাতায় লিখিত মামলার ভিত্তিতে তাকে প্রায় ৪ বছর জেল খাটতে হয়। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি এখন এসরাই পাড়ার পৈত্রিক বাড়িতে রয়েছেন। অন্য সব সাধারণ মানুষের মতো আছেন বলে-ই তার দাবি।
তবে কাজহীন অলসভাবে সময় কাটাতে তার আর ভালো লাগছে না বলেই জানালেন তিনি। তবে এখন সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চান।
বাংলানিউজের এক প্রশ্নের উত্তরে রঞ্জিত বলেন, দুইভাবে জনগণের ভালো করা যায়। এক- রাজনীতিতে যোগ দিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করা যায়। দ্বিতীয়- সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দিয়ে।
তিনি বলেন, ত্রিপুরায় আঞ্চলিক দলের ভবিষ্যৎ নেই। তাই নিজে কোনো রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করবো না বা কোনো আঞ্চলিক দলে যোগও দেবো না। আমার বাবা সিপিআই (এম) নেতা, সেখানে যোগ দেবো কিনা তাও এখনো ঠিক করি না।
তবে তার পছন্দের তালিকায় রয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেস। রঞ্জিতের স্পষ্ট বক্তব্য, রাজনীতিতে এলে এই দুইদলের একটিতে যোগ দেবো।
দ্বিতীয় পরিকল্পনা নিয়ে তিনি জানান, পরিকল্পনা রয়েছে ত্রিপুরায় একটি ইকো পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার। রঞ্জিতের ভাষ্য, বিভিন্ন দেশের পর্যটন কেন্দ্রে গিয়েছি। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখিদের নিয়ে তৈরি একটি পর্যটন কেন্দ্র বেশ আকৃষ্ট করেছে আমায়। রাজ্যে এ ধরনের স্পট গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
তার কথা অনুযায়ী, রাজধানী আগরতলা থেকে ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে পাহাড়ি জনপদে হবে এ পর্যটন কেন্দ্র। সেখানে লোকজন তাদের পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাবে।
‘এটা হলে রাজ্যের মানুষ নতুন পর্যটন কেন্দ্র দেখতে পাবেন আবার কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। এ নিয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা অনেক এগিয়েছে,’ যোগ করেন রঞ্জিত।
জানালেন, এখনও কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। জঙ্গলের জীবন ছেড়ে লোকালয়ে ফিরলেও সরকারিভাবে তিনি আত্মসমর্পন করেননি।
আইনি এসব সমস্যা মিটে গেলে পুরোপুরিভাবে মানুষের জন্য কাজে নেমে পড়বেন বলেই জানালেন রঞ্জিত।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৮
এসসিএন/এমএ