মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) আগরতলার হাতিপাড়ায় রেইন ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আরএফআরআই) সভাকক্ষে এ কর্মশালার উদ্বোধন করা হয়।
ভারতের পরিবেশ ও বন এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের অন্তর্গত আরএফআরআই’র অসমের যোরহাট শাখার উদ্যোগে ও দেশটির ফরেস্ট রিসার্চ সেন্টার ফর লাইভলিহোড এক্সটেনশনের (এফআরসিএলই) সহযোগিতায় বনজ সম্পদের ক্ষতি না করে কীভাবে প্রয়োজনীয় সামগ্রী আহরণ ও চাষ করা যায় এটি নিয়ে এ কর্মশালা।
কর্মশালায় বক্তা হিসেবে উপস্থিত হোন আরএফআরআই যোরহাটের সিনিয়র সিনিওর সায়েন্টিস্ট ড. আর কে কলিতা।
বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের নিত্যদিনের কাজকর্মে অন্যতম একটি সামগ্রী হচ্ছে বাঁশ। এটিকে যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণ করে নিত্যদিনের কাজে ব্যবহার করা যায় তবে তা অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়। যার ফলে একদিকে যেমন আমাদের খরচ কমে তেমনি বনের ওপর প্রভাব কম পড়বে।
পাশাপাশি তিনি কী করে বাঁশকে দীর্ঘস্থায়ী করা যায় এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, বাঁশ খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়। এখন অন্যান্য গাছের পরিবর্তে বাঁশকে কাঠের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
কর্মশালায় উপস্থিত ত্রিপুরা সরকারের বন দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যবন সংরক্ষক রমেশ্বর দাস বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চল থেকে শুরু করে উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড, ছত্রিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ হয়ে মহারাষ্ট্রের একটা বিশেষ অঞ্চল মাওবাদীদের বাড়বাড়ন্ত রয়েছে। কিন্তু একটা সময় এই সব এলাকায় খুব উন্নতমানের লাক্ষা উৎপাদিত হতো যার কদর ছিল বিশ্বব্যাপী। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ লাক্ষা সংরক্ষণ না করতে পারায় সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনে বিশেষ প্রভাব পড়েছে এবং তারা মাওবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। এইজন্য সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের উপযোগী সব সামগ্রীর সঠিক এবং বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।
পাশাপাশি তিনি আরও জানান, ভারত বিখ্যাত কে সি পাল’র ছাতায় যে বাঁশের হাতল ব্যবহার করা হতো তা রপ্তানি করা হতো ত্রিপুরা রাজ্য থেকে, শুধু এখানেই শেষ নয় বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশের হাতে যে সকল বাঁশের লাঠি দেখা যেতো তা ত্রিপুরা থেকে সরবরাহ করা হতো। এমনকি ভারতের কর্ণাটক রাজ্য ধুপকাটি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। ধূপকাঠির বাঁশের শলা সরবরাহ হতো ত্রিপুরা রাজ্য থেকে। কিন্তু এই সকল বিষয়গুলি সময়োপযোগী না হওয়ায় আজ তা হারিয়ে গিয়েছে। তাই তিনি সবার প্রতি আহ্বান রাখেন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য।
যোরহাট থেকে আগত অপর এক সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. নিজারা বরঠাকুর উপস্থিত সবাইকে স্লাইড শো’র মাধ্যমে দেখিয়ে দেন কি করে লাক্ষা চাষ করে স্বনির্ভর হওয়া সম্ভব। আরো বলেন যে, এক সময় ভারত থেকে লাক্ষা বিদেশে রফতানি হলেও বর্তমানে ভারত অন্যান্য দেশ থেকে লাক্ষা আমদানি করছে। অথচ খুব সহজে এই পতিত জমিতে লাক্ষা চাষ করা সম্ভব। আগে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় প্রাকৃতিক ভাবে লাক্ষা চাষ হতো। মানুষ জঙ্গল থেকে লাক্ষা সংগ্রহ করে তা বিক্রি করতেন কিন্তু সঠিকভাবে তা সংরক্ষণ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আহরণ না করায় আজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে।
এফআরসিএলই’র ত্রিপুরা শাখার প্রধান পবন কুমার কৌশিক বলেন, তাদের এই সংস্থা সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান এবং প্রাকৃতিক বনকে রক্ষা করে পরিবেশ বাঁচানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য তারা কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৩ ঘন্টা, নভেম্বর, ২০১৯
এসসিএন/ইউবি