এক সময় অগ্রহায়ণ মাস এলে নতুন ধানের চাল দিয়ে পায়েস পিঠাপুলি তৈরি হতো। আর এগুলোর ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়তো পাড়ার এপ্রান্তে-ওপ্রান্তে।
তবে এখন বাংলার চিরাচরিত পিঠাপুলি চলে এসেছে বাজারে। বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা হলো ভাপা পিঠা। শীতকাল এলেই আগরতলা শহরে বসে মেলা, হরিনাম সংকীর্তন আরও কত কী। এ মেলাকে ঘিরে বসে নানা ধরনের খাবারের দোকান। এসব দোকানের মধ্যে অন্যতম হলো পিঠাপুলির দোকান। এগুলোতে ভাপাপিঠা, পাটিসাপটা, মালপোয়া ইত্যাদি পাওয়া যায়।
সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হচ্ছে ভাঁপাপিঠে বলে বাংলানিউজকে জানান আগরতলার শীতকালীন পিঠাবিক্রেতা জয়া।
মেলার পাশাপাশি এ সময় বেশ কয়েকজন নারী শহরের শকুন্তলা রোড, চৌমুহনী নেতাজি সুভাস রোড ইত্যাদি এলাকায় ডসে ভাপাপিঠা তৈরি করেন। সন্ধ্যা পর পিঠা তৈরি শুরু করলে বিন্নি চালের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর বাতাসে। ঘ্রাণে এসব দোকানগুলোতে ভিড় জমান নানা বয়সী লোকজন।
আগরতলার পোস্ট অফিস চৌমুহনী এলাকার পিঠাবিক্রেতা জয়া সরকার বাংলানিউজকে জানান, শুধুমাত্র শীতকালেই তিনি পিঠাপুলি বিক্রি করে থাকেন। বেশির ভাগ সময়ই তিনি ভাপাপিঠা তৈরি করেন। কারণ ভাঁপাপিঠার চাহিদাই বেশি। এছাড়াও মাঝেমধ্যে পাটিসাপটা তৈরি করেন। বিন্নি চালের গুড়ো, কুড়ানো নারিকেল ও চিনি এই পিঠের মূল উপাদান। এই তিনটি সামগ্রী পরিমাণ মতো মিশিয়ে তার সঙ্গে সামান্য পানি ছিটিয়ে দিয়ে মেখে নেন। তারপর স্টোভের ওপর একটি হাঁড়িতে পানি গরম করেন ও হাঁড়ির মুখটি মাঝখানে ছিদ্র যুক্ত একটি মাটির সরা দিয়ে দেখে রাখেন। গরম পানি যখন ভাপ হয়ে সরার ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন এর উপর মশারির এক টুকরো নেট দেন ও এরপর ছোট বাটিতে করে মিশ্রিত গুড়োর পিণ্ড সরার যেদিকে গরমপানির ভাপ উঠছে তার ওপর রেখে দেন। অল্প সময় পর পানির ভাপ নিয়ে গুড়োর মিশ্রণ তুলতুলে নরম কেকের আকার ধারণ করে।
তিনি আরও জানান, শীতের সময় পিঠাপুলির চাহিদা একুট বেশি থাকে, তাই শুধু এই সময়ে পিঠা তৈরি করেন। বছরের অন্য সময় বাড়ি ও অন্যান্য কাজ করে থাকেন। বাজার থেকে নিজে চাল কিনে বাড়িতে গুঁড়ি তৈরি করে এই পিঠা তৈরি করে থাকেন বলেও জানান তিনি।
মধ্যবয়স্ক জয়ন্ত দে নামে এক ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, এখন সবাই ব্যস্ত, ঘরে আর পিঠা তৈরি করার লোক নেই, সময়ও নেই। তাই রাস্তার ধারের এই পিঠাবিক্রেতারাই এখন একমাত্র ভরসা। তারা যতদিন আছেন ততদিনই এই পিঠার স্বাদ পাওয়া সম্ভব আর তারা পিঠা তৈরি বন্ধ করলে হয়তো শহর থেকে হারিয়ে যাবে এই পিঠে। তবে, এসব পিঠাতেও এখন ব্যবসার ছাপ চলে এসেছে ।
কল্পনা রানি দে নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, তিনি দিনের বেলায় অন্য জায়গায় কাজ করেন এবং সন্ধ্যায় এই পিঠা তৈরি করেন। তবে, তিনি বাজার থেকে প্যাকেট করা চালের গুড়ো দিয়ে ভাপাপিঠা তৈরি করেন। এই সময় প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে ১২শ রুপির পিঠা বিক্রি করেন। পিঠা তৈরি করতে খরচ কেমন হয়? উত্তরে তিনি জানান, খরচ খুব বেশি নয়, কিন্তু এতে লাভ ভালো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯
এসসিএন/এএটি