প্রথাগত পদ্ধতিতে যারা মাছ চাষ করে আসছেন, তাদের অনেকেই এখন প্রথাগতভাবে চাষের পাশাপাশি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন। সেসঙ্গে রাজ্যের বহু যুবক স্বয়ম্ভরতার লক্ষ্যে বায়োফ্লক পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।
সিপাহীজলা জেলার বিশালগড় এলাকার অরূপ সরকার বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। প্রাথমিক অবস্থায় তিনি ৪টি ট্যাংকের মাছ চাষ করছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন। বর্তমানে তিনি তেলাপিয়া মাছ চাষ শুরু করেছেন।
বায়োফ্লক পদ্ধতি বেছে নিলেন কেন? এর জবাবে তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে লাভ অনেক বেশি হয়ে থাকে। কারণ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গায় মাছগুলো থাকে, তাই মাছের খাবার নষ্ট হয় না। যে পরিমাণ খাবারের প্রয়োজন হয় সেই পরিমাণ খাবার দিলে মাছ সব খাবার খেয়ে নেয়। এছাড়া বদ্ধ জায়গার মধ্যে থাকায় মাছের রোগবালাই হয় না বললেই চলে, পোনা মাছের মৃত্যুর হার খুব কম থাকে। ফলে পোনা মাছের ৯০ শতাংশ বেশি পূর্ণবয়স্ক হয় ও বিক্রি করা যায়। আর কিছুদিনের মধ্যে তার ট্যাংকের মাছগুলো বাজারে বিক্রির উপযোগী হয়ে যাবে বলেও জানান।
রাজধানী আগরতলা ভাটি অভয়নগর এলাকার যুবক ভাস্কর জ্যোতি দত্ত বাংলানিউজকে জানান, ইতোমধ্যে তিনি ৩০ হাজার লিটার পানি ধরার ক্ষমতা সম্পন্ন বায়োফ্লক ট্যাংক তৈরি করেছেন। এই ট্যাংকে তিনি পাবদা মাছ চাষ করবেন। এছাড়াও ১২ হাজার এবং ১৫ লিটার পানি ধরার ক্ষমতা সম্পন্ন আরো ৪টি ট্যাংক করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি আরো জানান ট্যাংকটি বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি করেছে। বাকিগুলোও একইভাবে তৈরি করবেন। এতদিনে বাকি ট্যাংকগুলো তৈরি হয়ে যেত। কিন্তু লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় বর্হি:রাজ্য থেকে ত্রিপল আনতে পারেননি। বাঁশ ছাড়াও এলুমিনিয়াম সিট, এমনকি সিমেন্ট দিয়েও ট্যাংক তৈরি করা সম্ভব। নতুন যে ট্যাংকগুলো তৈরি করবেন, এগুলোতে গুলাইয়া টেংরা, তেলাপিয়া, কৈসহ অন্যান্য মাছ চাষ করার পরিকল্পনা আছে।
উত্তর জেলার ধর্মনগরের বাসিন্দা রবীন্দ্র দেবনাথ ব্যবসায় কাপড়ের ব্যবসায়ী, ব্যবসার পাশাপাশি এখন বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরিকল্পনা নিয়েছেন। এই জন্য তিনি সিমেন্ট দিয়ে স্থায়ী দুটি ট্যাংক তৈরি করেছেন বলে জানান। এদের কেউই প্রথাগত প্রশিক্ষণ নেন মৎস্য দফতর থেকে। তবে সামাজিক যোগাযোগ ভিডিও দেখে তারা এই কাজ করছেন বলেও জানান।
এ বিষয়ে ত্রিপুরা সরকারের মৎস্য দফতরের অধিকর্তা ডি কে চাকমার বাংলানিউজকে জানান, এসকল মাছ চাষিদের জন্য ভারত সরকারের একটি স্কিম রয়েছে। স্কিমের নাম প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদা যোজনা। এই যোজনার মাধ্যমে মাছ চাষিরা বিশেষ সুবিধা পাবেন ভারত সরকারের কাছ থেকে। ত্রিপুরা সরকারের মৎস্য দফতরের মাধ্যমে এই সুবিধা নিতে হবে মাছ চাষিদের। এই স্কিমে মহিলা, তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি কংসের সুবিধাভোগীদের জন্য সরকার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তা দেবে এবং সাধারণ মাছ চাষিদের জন্য ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তা করবে সরকার।
তিনি আরো জানান, সাধারণ মানুষের মধ্যে দফতরের তরফে সরকারি এই সুবিধার কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২০
এসসিএন/জেআইএম