আগরতলা (ত্রিপুরা): ভারত সরকারের একমাত্র ব্যাম্বু অ্যান্ড কেইন ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিসিডিআই) ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত। তারা বাঁশ দিয়ে বিজ্ঞানসম্মত এবং অত্যাধুনিক মানের বোতল তৈরি করছে।
ইতোমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত বাঁশের বোতল ভারতজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। খ্যাতিমান বলিউড অভিনেত্রী রাভিনা ট্যান্ডন এখন ত্রিপুরার বাঁশের বোতল ব্যবহার করছেন এবং তিনি একথা টুইটারে জানিয়েছেন। শুধু তিনিই নন, আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি এ বোতল ব্যবহার করছেন।
বিসিডিআইর পরিচালক ড. অভিনব কান্ত বাংলানিউজকে জানান, এ প্রতিষ্ঠানটি বাঁশভিত্তিক নতুন সামগ্রী উদ্ভাবনে নিয়োজিত এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিল্পীদের বাঁশের শিল্প সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়।
হঠাৎ বাঁশের পানির বোতল তৈরির চিন্তা এলো কী করে? বাংলানিউজের করা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এ বোতল তৈরির অনুপ্রেরণা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক দূষণ রোধের জন্য মোদী একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি একবার ব্যবহার হয় পানির বোতল। তাই তিনি চিন্তা করলেন বাঁশ দিয়ে পানির বোতল তৈরি করলে এ সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে।
তবে এক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘক্ষণ বাঁশের বোতলে পানি রাখলে তা চুইয়ে পড়ে যায়। তাছাড়া বোতলের গায়ে ফাঙ্গাস জন্মায়। তাই বাঁশের ভেতর কাঁচের বোতল ও তামার বোতল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এতে একদিকে যেমন পানি চুইয়ে বের হয় না, তেমনি পানির গুণগত মান সঠিক থাকে। পাশপাশি বাঁশ তাপ কুপরিবাহী হওয়ায় ঠাণ্ডা বা গরম পানি রাখলে তা দীর্ঘ সময় একই রকম থাকে। এ বৈশিষ্ট্যের জন্য বাঁশের বোতলের চাহিদা অনেক বেশি।
কী বাঁশ ব্যবহার করা হয় বোতল তৈরিতে এবং স্থায়ীত্ব কেমন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, মৃত্তিঙ্গা বাঁশ খুব শক্ত হওয়ায় বোতল তৈরিতে তা ব্যবহার করা হয়। আর বাঁশের মধ্যে থাকা গ্লুকোজ ঘুণপোকা খেয়ে নষ্ট করে। তাই বোতল তৈরির আগে বাঁশ প্রক্রিয়াজাত করে এ গ্লুকোজ নষ্ট করে ফেলা হয়। দীর্ঘ সময় ঠিক থাকে প্রক্রিয়াজাত বাঁশ। আবার কাঁচ ও তামার বোতলের বাইরে বাঁশের প্রলেপ থাকায় এগুলো আঘাত সহনশীল হয়। প্রক্রিয়াজাত বাঁশ পরবর্তী সময় যন্ত্রের সাহায্যে কেটে, সঠিক আকার দিয়ে এবং কাঁচ অথবা তামার বোতল ভেতরে ঢুকিয়ে বোতলের আকার দেওয়া হয়।
নতুন নতুন বাঁশজাত পণ্য উদ্ভাবন করাই এ সংস্থার প্রধান কাজ। এ সংস্থা থেকে কখনো কোনো ধরনের সামগ্রী বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের পরিকল্পনা নেই বলেও জানান তিনি।
তাদের কাজ শুধু বাঁশ এবং বেতভিত্তিক নতুন পণ্য সামগ্রী উদ্ভাবন এবং সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এগুলোর বাণিজ্যিক উৎপাদন নিশ্চিত করা।
আগরতলার যুবক অতনু ভৌমিক অনলাইনে পণ্য বিক্রির স্টার্টআপ চালু করেছেন। তিনি বাংলানিউজকে জানান, কয়েকদিন আগে তারা তাদের সাইটে বাঁশের বোতল বিক্রির বিষয়টি উল্লেখ করেন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল অর্ডার আসতে শুরু করেছে। সবমিলিয়ে ত্রিপুরায় উদ্ভাবিত বাঁশের বোতল যে বিশ্ব মাতাবে, তা ইতোমধ্যেই আঁচ করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২০
এসসিএন/এফএম