ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

দুর্গাপূজা এলেও মুখে হাসি নেই প্রতিমাশিল্পীদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২০
দুর্গাপূজা এলেও মুখে হাসি নেই প্রতিমাশিল্পীদের

আগরতলা (ত্রিপুরা): সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় পূজা হচ্ছে দুর্গোৎসব। এ পূজার অন্যতম বড় অংশীদার হলো মৃৎ-প্রতিমাশিল্পীরা।

আগামী শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজা। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে এবারের দুর্গোৎসবের জৌলুস ম্লান হয়ে গেছে। তাই ত্রিপুরা রাজ্যের প্রতিমাশিল্পীদের মুখে হাসি নেই।

দুর্গাপূজার অন্যতম বড় আকর্ষণ হচ্ছে দেবীপ্রতিমা। প্রতিটি ক্লাব, সার্বজনীর দুর্গাপূজা কমিটির মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা চলে কে কার চেয়ে বড় প্রতিমা তৈরি করতে পারে, কাদের প্রতিমাগুলোর চমক বেশি। কিন্তু করোনার জন্য ত্রিপুরা সরকারের তরফে পূজা উদ্যোক্তাদের কিছু বিধি-নিষেধ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বড় হচ্ছে দুর্গাপ্রতিমা ১০ ফুটের বেশি উঁচু করা যাবে না। ফলে এবছর সব প্রতিমা হচ্ছে ছোট ছোট আকারের।  

ত্রিপুরা মৃৎশিল্পী সমিতির সভাপতি উত্তম চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, এবছর প্রতিমার আকার ছোট হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন রাজ্যের প্রতিমাশিল্পীরা।

উত্তম চক্রবর্তী বলেন, আকারে প্রতিমা ছোট হওয়ায় মাটি ও খড় কম লাগছে। কিন্তু প্রতিমার সাজ-সজ্জার সামগ্রী, অলঙ্কার, কাপড়, অস্ত্র এগুলো বর্হিঃরাজ্য থেকে তৈরি হয়ে চলে এসেছে। এগুলোর একটি নির্দিষ্ট পরিমাপ মেনে তৈরি করা হয় তাই এগুলোর চাইলেই ছোট আকারের তৈরি করা সম্ভব নয় এবং যে দাম রয়েছে সেই দামে কিনতে হবে। কিন্তু ছোট আকারের প্রতিমার জন্য পূজা উদ্যোক্তারা বড় প্রতিমার সমান মূল্য কখনোই দেবেন না এবং দিচ্ছেন না।  এবারের চেয়ে বছরগুলোর তুলনায় প্রতিমার দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাই একটি প্রতিমা তৈরি করে একজন শিল্পীর যে পরিমাণ লাভ থাকে, এবছর তার বড় অংশ চলে যাবে সাজ-সজ্জাসামগ্রী কিনতে।  

গত বছরগুলোর তুলনায় এবছর করোনার কারণে দুর্গাপূজার সংখ্যা কি কমে এসেছে? এ কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, গত বছরের মতো এবছরও সমান সংখ্যায় দুর্গাপূজা হচ্ছে। গত বছর ৪৫টি প্রতিমা গড়ার অর্ডার পেয়ে ছিলেন এবছরও তাই। তবে সব প্রতিমার আকার ছোট। রাজ্যের অন্যান্য জেলায়ও আগের বছরগুলোর মত সমান সংখ্যক পূজা হচ্ছে বলে তাদের সমিতির সূত্রে খবর পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছরগুলোতে এত দিনে প্রতিমা কুমারটুলি থেকে প্যান্ডেলে চলে যেতো। সেখানে গিয়ে শিল্পীরা দুর্গা প্রতিমার চূড়ান্ত রূপ দিতেন এবছর এখনো প্রতিমা শিল্পীর অস্থায়ী শেডেই রয়েছে, এখানেই শিল্পীরা কাজ করছেন। অন্যান্য বছর প্রতিমা অনেক আগেই প্যান্ডেলে পাঠিয়ে দেওয়া হতো কারণ প্যান্ডেলের ভেতরে প্রতিমা প্যান্ডেল শিল্পীরা কাজ করতেন। কারণ অন্যান্য বছর দর্শকরা স্যান্ডেলের ভেতর ঢুকে প্রতিমা দর্শন করতেন। তাই প্যান্ডেলের সামনের দিকে এবং ভেতরে অনেক শৈল্পিক কারুকার্য করা হতো। কিন্তু এবছর সরকার থেকে পূজা উদ্যোক্তাদের বলা হয়েছে প্যান্ডেলের সামনের দিক উন্মুক্ত রাখতে হবে। যাতে মানুষ বজায় রেখে প্রতিমা দেখতে পারেন। তাই প্রতিমার কাজ সম্পূর্ণ শেষ করেই পূজা প্যান্ডেলে নিয়ে যাওয়া হবে বছর।

উত্তম চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, সরকার সার্বজনীন দুর্গাপূজা করার অনুমতি দেওয়ায় শিল্পীরা অনেকটাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন, সরকার এই সিদ্ধান্ত না নিলে চরম বিপাকে পড়তেন তারা। বাংলা নববর্ষের দিন দোকানে দোকানে অনুষ্ঠিত হয় গণেশ পূজা এরপর ঝুলন যাত্রা, বিপদনাশিনী পূজা, মনসা পূজা, বিশ্বকর্মা পূজা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর শিল্পীরা এসব পূজার জন্য প্রতিমা তৈরি করলেও করোনা মহামারির কারণে বিক্রি হয়নি বললেই চলে। অবিক্রিত নানান সব দেব-দেবীর প্রতিমা পড়ে রয়েছে শিল্পীদের স্টুডিওতে। এই প্রতিমাগুলো তৈরি করতে যে খরচ হয়েছে তাও উঠে আসেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২০
এসসিএন/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।