আগরতলা,(ত্রিপুরা): অর্কিড দেখেননি এমন মানুষ খোঁজে পাওয়া মুশকিল। আর বিশেষ করে ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ে, জঙ্গলে প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্মায় ওই অর্কিড, ফলে রাজ্যের প্রায় সব মানুষই অর্কিডের মুখোমুখি হয়েছেন।
অর্কিডের সংখ্যা নেহাত কম নয়। প্রায় ২৫ হাজার প্রজাতির এবং দুই লাখের বেশি হাইব্রিড অর্কিড পাওয়া যায়। তবে, তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশেজ্ঞদের মতে, আন্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর সব প্রান্তেই অর্কিড বেড়ে ওঠে। আগরতলার পার্শ্ববর্তী মহেশখলা এলাকায় অর্কিডের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেছেন পূর্ণেন্দু দত্ত। তার সংগ্রহে আছে ত্রিপুরা রাজ্যেও স্থানীয় প্রজাতির পাশাপাশি দেশ-বিদেশের নানা জাতের অর্কিড। খয়েরপুর-আমতলী বাইপাস সড়ক থেকে মহেশখলা এলাকার রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই ১৫ বিঘা জায়গাজুড়ে তার নার্সারি। এখানেই তিলে তিলে গড়ে তোলেছেন অর্কিড সাম্রাজ্য। কিছু কিছু জাতের অর্কিড ঝুলছে বাইরের বড় গাছে গাছে, আবার কিছু ঝুলছে আংশিক ছায়াযুক্ত জায়গায় ঝুলন্ত টবে। আর কিছু রয়েছে টবের মধ্যে ছায়াযুক্ত সেডের তলায়। এগুলো চাহিদা অনুসারে কোকোপিট, পাথর, কাঠের গুড়া ইত্যাদি আলাদা আলাদা পরিমাণে মিশিয়ে ভিন্ন ভিন্ন জাতের গাছের জন্য মিডিয়াম তৈরি করে রাখা হয়েছে। আর কিছু কিছু একটুকরো শুক্ন কাঠের টুকরার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা আছে, অর্কিডের শেকড় কাঠের টুকরোকে এমনভাবে আকড়ে ধরছে যা আপনে আপনেই দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে। সবমিলিয়ে পূর্নেন্দুর সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ৪৫০ জাতের অর্কিড রয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান। যেগুলোর মধ্যে আছে প্রাকৃতিক এবং হাইব্রিড অর্কিড। ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাকৃতিক পরিবেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জাতের অর্কিড খোঁজে পাওয়া গেছে, এর মধ্যে তার সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ৩৫ জাতের। এগুলোর সব কটি রয়েছে তার সংগ্রহে। এছাড়াও সিকিম, অরুনাচলপ্রদেশসহ সমগ্র উত্তরপূর্বাঞ্চল, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য, হিমালয়ের পাদদেশের নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনাম, থ্যাইল্যান্ড, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্কিড রয়েছে তার সংগ্রহে। পূর্ণেন্দুর বাবা নীহারেন্দু দত্ত ছিলেন বন অধিদপ্তরের কর্মচারী, এখন অবসরপ্রাপ্ত। তাই ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে নানা জাতের গাছ, লতাগুল্মের সঙ্গে পরিচিত হন। তখন গাছ-পালার প্রতি আগ্রহ জন্মে। ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিচিত হন অর্কিডের সঙ্গে এবং এদের সৌন্দর্যের কারণে প্রেমে পড়ে যান এদের। এখনো তিনি মজে আছেন তিনি অর্কিড প্রেমে, তাই নিজেই গড়ে তুলেছেন অর্কিড সাম্রাজ্য। গুটি গুটি পায়ে ৩৯ বছর হয়ে গেছে গাছ-পালার সংসারের। আর ২০০৫ সালে তিনি মহেশখলার বাগান গড়ে তুলেছেন। অর্কিড বনজ সম্পদ তাই এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বন অধিদপ্তরের কিছু কঠোর বিধি-নিষেধ রয়েছে। তাই চাইলেই যে কেউ প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে অর্কিড তুলে নিজের বাড়িতে লাগাতে পারেন না। এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন হয়। তিনি অর্কিড চাষের জন্য বনদপ্তর থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়েছেন। অনুমতি দেওয়ার আগে বন অধিদপ্তরের উচ্চ আধিকারিকরা বাগান পরিদর্শন করে নিশ্চিত হওয়ার পর এই অনুমোদন দিয়েছেন। অর্কিড সংগ্রহের এবং কি করে চাষ করা হয় তা জানার জন্য তিনি বিভিন্ন দেশ ঘুরে দেখেছেন। ওই সংগ্রহশালাকে আরও সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে পূর্ণেন্দুর। অর্কিডের পাশাপাশি তার এই বাগানে দেশ-বিদেশের মিলিয়ে রয়েছে কয়েক হাজার জাতের ফুল ও ফলের গাছ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিষ্টি জাতের জলপাই, বিভিন্ন জাতের আম, কাঁঠাল, বেল, সৌদি আরবের খেজুরসহ অন্যান্য ফলমূল। এছাড়াও নানা ধরনের ফুলের গাছ। রয়েছে ১৭ জাতের জল পদ্ম, ৩৩ জাতের শাপলা, সাকুলেন্ট, ক্যাকটাস পতঙ্গভুক উদ্ভিদসহ মৌসুমি ফুলের গাছ। সবমিলিয়ে তার বাগানে ১২ মাসই ফুল ফলে ভরে থাকে।
অর্কিডসহ যেসব গাছ-পালা বিক্রি অনুমতি রয়েছে এগুলো তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন। তবে, সব অর্কিড বিক্রির অনুমতি নেই। তাই এগুলো নেহাত শখের বসে সংগ্রহ করে রেখেছেন। তবে, পূর্ণেন্দুর এই অর্কিড বাগানের বাণিজ্যিক গুরুত্ব থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব রয়েছে অর্কিড রক্ষার দিক থেকে। রীতিমতো এটি অর্কিড সংগ্রহশালায় পরিণত হয়েছে। এখানে বসে অর্কিড গবেষকরা গবেষণা করে সুন্দর এই গাছগুলো সম্পর্কে আরও নতুন তথ্য দিতে পারবেন আগামীতে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
এসসিএন/এএটি