আগরতলা (ত্রিপুরা): আগরতলা-আখাউড়া রেলপথে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশের দিকে প্রবেশের ভারতীয় অংশের শেষ রেল স্টেশনটি হচ্ছে নিশ্চিন্তপুর স্টেশন। এ স্টেশনটি সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৫০০ মিটার আগে অবস্থিত।
এ রেলপথের ত্রিপুরা অংশের নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে ভারতীয় নির্মাণ সংস্থা ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (আই আর সি ও এন )। রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থা কাজগুলোকে ভাগ করে স্থানীয় বিভিন্ন ঠিকাদারকে বরাত দিয়েছে। এরমধ্যে নিশ্চিন্তপুর রেল স্টেশন নির্মাণের বরাত পেয়েছেন আগরতলার ঠিকাদার শিবু চন্দ্র সাহা। এমন তথ্য বাংলানেউজকে জানান স্টেশনের শ্রমিক সুপারভাইজার বিজয় সাহা।
তিনি বলেন, স্টেশনের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছে। সর্বাধুনিক সব সুবিধা যুক্ত করে স্টেশনটি তৈরি করা হয়েছে। স্টেশন ভবনে প্রবেশের কাঁচের দরজাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিত হয়। ভেতরে যাত্রীদের বসার সুবন্দোবস্ত, বিনোদনের ব্যবস্থা, ফুড কোর্ট, ইমিগ্রেশন কাউন্টার থেকে শুরু করে ব্যাংক, এটিএমসহ আধুনিক রেল স্টেশনে যেসব সুবিধা থাকে তার সব ব্যবস্থা রেখে স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, কাজ শেষ তাই তারা এখন আই আর সি ও এনকে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন স্টেশনের দায়িত্ব বুঝে নেওয়া জন্য। এখন ওই সংস্থার কর্মকর্তারা এসে ইন্সপেকশন করবেন ও বুঝে নেবেন।
স্টেশনের শ্রমিক সুপারভাইজার বিজয় সাহা বলেন, এ কাজটি আরও আগে শেষ হয়ে যেত। করোনা মহামারির কারণে কাজ অনেকটাই পিছিয়ে গেছে। এর কারণ- গোটা কাজটিই বাইরের রাজ্যের অভিজ্ঞ শ্রমিকদের দিয়ে করানো হয়েছে। সেই সঙ্গে এ স্টেশন নির্মাণে যেসব নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে সবই এসেছে বাইরের রাজ্য থেকে।
নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে পাশেই পণ্য ওঠানো ও নামানোর ইয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রেনে করে আসা কন্টেইনার এখানে নামানো হবে। এরপর সড়ক পথ ধরে এবং ভারতীয় ট্রেনে করে এ পণ্যগুলো উত্তরপূর্বের বিভিন্ন স্থানে যাবে।
আগরতলা-আখাউড়া রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৫ কি.মি.। এরমধ্যে সাড়ে পাঁচ কি.মি. রয়েছে ভারতীয় অংশে আর বাকি অংশ বাংলাদেশে। রাজ্যের সাড়ে পাঁচ কি.মি. এর মধ্যে সাড়ে তিন কি.মি. রেলপথ হচ্ছে এলিভেটেড করিডোরের মাধ্যমে, অর্থাৎ আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে বাংলাদেশের দিকে যাওয়ার পথে সাড়ে তিন কি.মি. রেলপথ যাবে ওভার ব্রিজের ওপর দিয়ে। বাধারঘাট এলাকার জাতীয় সড়ক পথ অতিক্রম করবে ওভার ব্রিজের ওপর দিয়ে। এরপর রেলপথ নেমে যাবে মাটিতে।
বাধারঘাটের আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে এ সাড়ে তিন কি.মি. ওভারব্রিজের রেল পথের পিলার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। নিশ্চিন্তপুরের থেকে আগরতলা স্টেশনের দিকে অনেকটা রেলপথের পিলারের ওপরের ঢালাই সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। যেগুলোতে এখনো বাকি রয়েছে সেখানে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে।
এদিকে নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রেলপথ নির্মাণ হয়ে গিয়েছে। রেলপথের ট্র্যাকগুলো ডুয়াল গেজ করে পাতা হয়েছে। ডুয়াল গেজ হচ্ছে- ব্রডগেজে এবং মিটারগেজ। ভারতীয় অংশে ব্রডগেজ হলেও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে এখনো মিটারগেজ ট্রেন চালু রয়েছে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে কিছু ট্রেন লাইন ব্রড গেজ ও কিছু লাইন মিটার গেজ করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগের নতুন একটি পথ চালু হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। কবে আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন কাঁটাতারের সীমান্তের দু’প্রান্তের মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, অগাস্ট ০৯, ২০২২
এসসিএন/জেডএ