ঢাকা: আসন্ন ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য চমক থাকছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার দেশের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। তারই অংশ হিসেবে আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ব্যবসা করতে ক্ষমতায় আসেনি। আমরা ব্যবসায়ী নই। আমরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করি। ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করি। ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটান যৌথ ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছি। বাংলাদেশ-মায়ানমার-চীনেও যৌথ ব্যবসার ব্যবস্থা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ স্বাধীন করার সঙ্গে সঙ্গে মাত্র ৯ মাসের মধ্যে একটি সংবিধান দিয়েছিলেন আমাদের। স্বাধীনতার পর দেশ গড়তে তিনি সবরকম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশকে তিনি সে সময় থেকেই আধুনিক করতে কাজ শুরু করেছিলেন। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি করে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
এসময় ভারতের সংসদে বহুল প্রতীক্ষিত স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল পাস প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্বার্থে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন সরকার এখন সেসব পদক্ষেপই বাস্তবায়ন করছে। ছিটমহলবাসীদের দুর্দশার কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় থাকাকালে এ চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেটা পঁচাত্তরের কালরাত পরবর্তী দুঃসময়ে বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আমরা তার সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছি।
এসময় স্থল সীমান্ত চুক্তি সম্পাদন করতে সংবিধান সংশোধনের অনুমোদন দেওয়ায় ভারতের সংসদ সদস্যদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে আমরা যেমন উদ্যোগ নিয়েছি, তেমনি এখন সীমান্তবাসীর খাবার, শিক্ষা, যোগাযোগসহ সব ধরনের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, স্থল সীমানা চুক্তি যখন আমরা করি, তখন আমাদের বিরুদ্ধে বলা হয়েছিল- আমরা নাকি সব ভারতকে দিয়ে দিয়েছি। এমনকি ফেনী পর্যন্ত নাকি ভারত নিয়ে যাবে। আমি বলতে চাই- আমি এ কথাগুলো যত সহজে বলেছি, কাজগুলো এতো সহজে হয়নি আমাদের। সেই বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই। আমরা প্রথম ক্ষমতায় এসে যে কাজগুলো করেছি এবং বঙ্গবন্ধু থাকাকালেও যে কাজগুলো করা হয়েছিল- তার জন্যও অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বপ্ন একটাই। আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। সে হিসেবে মাথা উঁচু করেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই- এটা জাতির জনকের স্বপ্ন, যা বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার কাজ করছে।
‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- জাতির পিতার এ নীতির জন্যই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে সফলতা অর্জনে সক্ষম হচ্ছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন। তাই আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন ভাবনা থাকে আমরা স্বাধীন দেশ নিয়ে বিশ্বেও নেতৃত্ব দেবো। আত্মনির্ভরশীল হবো। আর তাই সম্মানের সঙ্গে জাতি হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছি। আরও এগিয়ে যাবো।
শেখ হাসিনা বলেন, যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসি, তখন বিশ্ব মন্দার কথা বলে আমাদের বিভিন্ন নেতিবাচক কথা শুনতে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করিনি কোনো মন্দা। তখন কোনো মন্দা আমাদের ছুঁতে পারেনি। আমরা এগিয়ে গেছি। এটাই সফলতা আমাদের।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই ৬ বছরে ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে এখন। আমরাই গোল্ড রিজার্ভ করেছি, এখনও যা চলছে। খাদ্য উৎপাদনেও আমরা বিশাল অর্জন করেছি, এখন এক্ষেত্রে আমরা আত্মনির্ভরশীল। আমরা চাহিদার চেয়েও এখন বেশি খাদ্য উৎপাদন করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যত বাড়বে, তত বাজার সম্প্রসারিত হবে। এ বাজার নিজের দেশেই আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বড় বড় কল-কারখানা গড়ে তুলতে হবে।
বড় ব্যবসায়ীদের দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের দেশে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যতো বাড়বে, অর্থনৈতিক উন্নয়নও ততো দ্রুতগতিতে হবে। এতে আমরা আরও এগিয়ে যাবো। দেশের মানুষ এগিয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে। একইসঙ্গে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কও উন্নত করছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের হাহাকার ছিল দেশে, তা দূর করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। বেসরকারি খাত সব থেকে বেশি সুবিধা পেয়েছে আওয়ামী লীগ আমলে। ব্যাংক, বিমা, প্রতিষ্ঠান সব সব কিছুই আমরা বাড়িয়েছি।
নতুন করে ১ কোটি মানুষকে চাকরি দিয়েছে সরকার- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরও চাকরি দিতে চাই। বিগত ৬ বছরে ১ কোটি মানুষ চাকরি পেয়েছে। সেই সঙ্গে নারী উদ্যোক্তা তৈরি করছি আমরা। আরও সুযোগ দিতে চাই নারী-পুরুষ সাবাইকেই।
তিনি বলেন, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এখন অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে। ১৩ হাজার ৭শ' মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে ৭০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। আরও উৎপাদন বাড়াচ্ছি আমরা। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবো, এর মধ্যে কোনো হতদরিদ্র থাকবে না দেশে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের লক্ষ্য-উদ্দেশের কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য- বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত হবে। আমরা আমাদের সুবর্ণজয়ন্তী সেভাবেই উদযাপন করতে পারবো। সে বিশ্বাস আমার আছে। পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আসুন এ জন্য আমরা একযোগে কাজ করি।
বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৫
এমইউএম/আইএ/এইচএ/
** দেশের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ তৈরি করছি
** চাহিদার চেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে
** বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছি আমরা