ঢাকা: ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে তামাকজাত পণ্যের করারোপে ‘মূল্যস্তর প্রথা’ তুলে না দিলে এটি কর ফাঁকির প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াবে বলে দাবি করেছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো।
তাদের দাবি, এবারের বাজেটে প্রস্তাব ছিলো সিগারেটের কর নির্ধারণের জন্য মূল্যস্তর প্রথা তুলে দিয়ে সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপ করা।
রোববার (১২ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘তামাক কর: বাজেট প্রতিক্রিয়া ২০১৬-১৭' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করা হয়।
প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্সের (আত্মা) উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো বাজেট পরবর্তী এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রুমানা হক।
তিনি বলেন, তামাকজাত পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধির কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া এবারের বাজেট কাঠামোগতভাবে শুধু অপযার্প্তই নয়, ত্রুটিপূর্ণও।
তিনি বলেন, দামি সিগারেটের বিদ্যমান কর ৪৫ শতাংশ বহাল রেখে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আবারও রেহাই দেওয়া হয়েছে। কম দামি সিগারেট ও বিড়ির ওপর প্রস্তাবিত কর হার পণ্য দু’টির মূল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হলেও ব্যবহার কমানোর জন্য কার্যকরী নয়। তবে জর্দা ও গুলের ওপর সম্পূরক শুল্কের হার প্রায় ৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে তা ইতিবাচক।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল মালিক বলেন, বাংলাদেশকে সিরিয়াসলি ধূমপানমুক্ত করতে হবে। কারণ, যুব সমাজ প্রথমে ধূমপানে আসক্ত হয়, এরপর ড্রাগের দিকে এগিয়ে যায়।
তিনি বলেন, সরকারের ধূমপান বন্ধ করার ইচ্ছা আছে। তবে কার্যকর অ্যাকশন নেই। ইচ্ছা থাকলে হবে না, অ্যাকশনে যেতে হবে। মূল্যস্তর তুলে দিয়ে কর বাড়াতে হবে। তাহলে জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অনুমোদনের আগে তামাকজাত পণ্যের ওপর করারোপের জন্য কয়েকটি সুপারিশ বাজেটে রাখার প্রস্তাব করা হয়। সেগুলো হলো- সিগারেটের ওপর করারোপের জন্য মূল্যস্তর প্রথা তুলে দেওয়া, সব ধরনের সিগারেটের ওপর একই হারে অর্থাৎ খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ সমপরিমাণ সুনির্দিষ্ট হারে এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ, বিড়ির ওপর উচ্চ হারে সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ, তামাকের ব্যবহার কমানোর জন্য সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সিগারেটের সমপরিমাণে কর আরোপ, তামাকের কর প্রশাসন শক্তিশালী করা, কর সংগ্রহ ব্যবস্থা উন্নত করা এবং কর ফাঁকি রোধকল্পে তামাকপণ্যের শুল্কমুক্ত বিক্রয় প্রথা তুলে দিয়ে করারোপ করা।
এছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তামাকপণ্যের ওপর ২ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করা, তামাকের চুল্লি প্রতি বার্ষিক ৫ হাজার টাকা লাইসেন্স ফি আরোপ এবং এ খাত থেকে আদায় করা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় তামাক নিয়ন্ত্রণ এবং অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় ব্যয়েরও দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন উবীনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আক্তার, আত্মার যুগ্ম আহবায়ক নাদিরা কিরণ, দ্য ইউনিয়নের পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, প্রত্যাশার সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৬
এমসি/এএসআর