এছাড়া রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ৭ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর দেড় শতাংশ নির্ধারণ, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ, ডেভলপারদের ভ্যাট ও উৎস কর থেকে পাঁচ বছরের জন্য অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আবাসন খাতের এ সংগঠন।
আসন্ন বাজেট উপলক্ষে শনিবার (১৩ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ১২ দফা বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরে রিহ্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন রিহ্যাবের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়া।
আবাসন শিল্প রক্ষার্থে অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক রি-ফাইন্যান্সিং ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন রিহ্যাবের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, ক্রেতারা যাতে চাহিদামত ঢাকা শহরের আশেপাশে বা পৌর এলাকার পাশে ১৫০০ বর্গফুট বা তার চেয়ে ছোট ফ্ল্যাট কেনার জন্য স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নিতে সক্ষম হন। এ ক্ষেত্রে সব অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহজ শর্তে গৃহঋণ বিতরণ করা যেতে পারে।
সরকার চাইলে ফ্ল্যাটের সাইজের উপর ভিত্তি করে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ ১০ শতাংশের নিচে স্বল্প সুদের হার নির্ধারণ করতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা খুব জরুরি।
২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাকাসহ সারা দেশে রিহ্যাবের এক হাজার ৭৪টি সদস্য ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে পরিকল্পিত নগর নির্মাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান রিহ্যাব ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট।
জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ১৫ শতাংশ অবদান রাখার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ২৬৯ লিংকেজ শিল্প বিকাশে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখছে রিহ্যাব।
বিভিন্ন রেজিস্ট্রেশনের খরচ ১৪ শতাংশ জানিয়ে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, সার্কভুক্ত দেশসমূহের রেজিস্ট্রেশন বাবদ ব্যয় ৪-৭ শতাংশের বেশি নয়। রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ৭ শতাশ করেলে অপ্রদর্শিত টাকার পরিমাণ কমাতে সহায়ক হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিএফআই’র তথ্য তুলে ধরে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট জানান, বাংলাদেশ থেকে ২০১৩ সালে পাচার হয়েছে ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ৭২ হাজার কোটি ৮৭২ কোটি টাকা।
অর্থ পাচার রোধে কোনো শর্তছাড়া আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আগামী ১০ বছর এ সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান।
নতুন আইনে ভ্যাট কার্যকর হলে আবাসনসহ লিংকেজ শিল্পে ভয়াবহ অবস্থা নেমে আসবে জানিয়ে রিহ্যাব নেতা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মূল্য সংযোজন কর হ্রাস করে ১ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ এবং নতুন করে মূল্য সংযোজন কর আরোপ না করার দাবি করেন।
পাশাপাশি গেইন ট্যাক্সের পরিমাণ ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হলে অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসবে বলে মনে করে রিহ্যাব।
আবাসন খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ৩০ বছর মেয়াদে দীর্ঘমেয়াদী রি-ফাইন্যান্সিং চালু করার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
আবাসন শিল্পের ক্রেতাদের আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে রাজউক ও সিডিএ এলাকাভুক্ত সব জমির ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশের ৫৩-এইচ ধারায় আরোপিত কর প্রত্যাহারের দাবি করে রিহ্যাব।
ক্রেতা, জমির মালিক ও ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে সংকট থেকে উদ্ধারের জন্য অসমাপ্ত প্রকল্পগুলোতে বিশেষ ঋণের প্রচলন প্রয়োজন বলে মনে করে রিহ্যাব।
সাপ্লায়ার ভ্যাট ও উৎস কর সংগ্রহের দায়িত্ব থেকে ৫ বৎসরের জন্য ডেভেলপারকে অব্যাহতি দেওয়া, শহর এলাকায় ৫ বছর এবং শহরের বাইরের এলাকায় ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডের মাধ্যমে উৎসাহিত করণ এবং নামমাত্র রেজিস্ট্রেশন ব্যয় নির্ধারণ করে সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থার প্রচলন করা জরুরি বলে মনে করেন রিহ্যাব ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট।
প্রস্তাবগুলো আসন্ন জাতীয় বাজেটে সংযোজিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানায় রিহ্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব পরিচালক জহির আহমেদ, মহিউদ্দিন শিকদার, কামাল মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএইচ