হাজীর হাট>মনপুরা>ভোলা থেকে: অনেকটা সময় হাতে রেখে শুকনো মৌসুমে বাঁধের কাজের টেন্ডার ডাকা হলেও বর্ষায় দুর্যোগ মৌসুমে দ্বীপের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। মার্চ মাস থেকে একের পর এক জটিলতা পেরিয়ে কার্যাদেশ দিতে বিলম্ব ঘটে।
এবারের বর্ষায় এই বাঁধ পূন:নির্মাণের কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে এ দুর্যোগ মৌসুমেও দ্বীপের মানুষ থাকছে অরক্ষিত।
এটা দ্বীপ জেলা ভোলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরার চিত্র। সমুদ্র মোহনায় মেঘনার বুকে জেগে ওঠা এ চরের চারিদিকে বাঁধের নিরাপত্তা বেস্টনি থাকার কথা থাকলেও এখানে নেই। দ্বীপের সর্ব দক্ষিণে দক্ষিণ সাকুচিয়া এলাকার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।
ক’দিন আগে এ বাঁধ ভেঙে পুর্ণিমার জোয়ারের পানি ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে গিয়েছিল। সব হারানো বহু মানুষ এখনও ঘরে ফিরতে পারেনি।
নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়া এবং পুরো মৌসুম জুড়ে এলাকার মানুষের ঝুঁকিতে থাকার বিষয়ে কেউই দায়দায়িত্ব নিতে চান না। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করার ঠিক আগ মুহূর্তেই বাঁধ ভেঙে গেছে।
বোর্ডের পক্ষে সেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কার্যাদেশ দেওয়া ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ায় কাজ শেষ করতে বর্ষা ঠেকেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, বর্ষায় দুর্যোগ মৌসুমে দ্বীপ মনপুরার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘বিকল্প বেড়ি বাঁধ নির্মাণ ও বাঁধ মেরামত প্রকল্পের’ আওতায় প্রথম টেন্ডার ডাকা হয় চলতি বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে। ২২ প্যাকেজের আওতায় প্রায় ১৫ কোটি টাকার কাজ হওয়ার কথা ছিল। টেন্ডার আহ্বানের পর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের কাজ পূন:মূল্যায়ন করে কাজের পরিধি ও বাজেট কমিয়ে আনে। কাজ শুরু হয় মে মাসের শেষ সপ্তাহে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব দেখিয়েছে, এই দ্বীপ উপজেলায় ৮ কিলোমিটার ৮০০ মিটারে নতুন বাঁধ, ৩ কিলোমিটার ৪০৫ মিটারে পুরাতন বাঁধ ছিল এবং ৩ কিলোমিটার ৩০০ মিটারে কোন বাঁধ ছিল না। মে মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়া ৮ প্যাকেজের কাজের আওতায় বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ করা হয়। এরমধ্যে ছিল উপজেলার সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ভেঙে যাওয়া বাঁধ।
ভেঙে যাওয়া বাঁধ এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আশপাশে জোড়াতালি দিয়ে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চলছে। লবণ পানি রোধে বাঁধের ওপর দেওয়া হয়েছে জিও ব্যাগ।
চলতি মাসের ১২ তারিখের পূর্ণিমার জোয়ারে বাঁধের যে অংশটি ভেঙে গিয়েছিল, সেটি এবারের বর্ষায় নতুন করে নির্মাণের কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে সামনের পূর্ণিমায় আবারও এ এলাকায় জোয়ারের পানিতে ভাসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এবার বর্ষার আগে মনপুরার দক্ষিণে ভাঙা বাঁধ পূন:নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই, এমন কথাই বাংলানিউজকে বলছিলেন মনপুরার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম।
তিনি বলেন, ঠিকাদার কাজ শেষ করার আগেই জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেসে গেছে। এতে তার বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতিপূরণ বোর্ড বহন করবে না। সুতরাং তাকে কাজের জন্য চাপও দেওয়া যাচ্ছে না।
অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে আনা এ বাঁধের কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অলি উল্লা কাজল বাংলানিউজকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যাদেশ দিতে বিলম্ব করেছে। ফলে কাজ শেষ করতে বর্ষা এসে গেছে।
দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বিপন্ন মানুষদের সঙ্গে আলাপকালে বার বার ফিরে আসে দুর্যোগ আতংকের কথা। একবার জোয়ারে ভেসে তারা আরও বেশি আতংকিত। বছরের সারা মৌসুম বিপদের মুখে থাকা এ মানুষেরা শুকনো মৌসুমেই বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান।
ক’দিন আগে মনপুরার জোয়ারে ভাসা মানুষের দুর্দশা দেখতে এসেছিলেন পানি সম্পদমন্ত্রী ও পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী। পানি সম্পদ মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, বর্ষায় আর কোনো বাঁধের কাজ হবে না। সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশও দিয়েছেন। এ নির্দেশ মনে করেই হয়তো এলাকার মানুষ আশায় থাকেন। কিন্তু নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে কী না, জানেন না তারা।
[পশ্চিমে সাতক্ষীরা, পূর্বে টেকনাফ, উপকূলের এই ৭১০ কিলোমিটার তটরেখা বেষ্টিত অঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে পিছিয়ে থাকা জনপদের খবরাখবর তুলে আনছে বাংলানিউজ। প্রকাশিত হচ্ছে ‘উপকূল থেকে উপকূল’ নামের বিশেষ বিভাগে। আপনি উপকূলের কোনো খবর বাংলানিউজে দেখতে চাইলে মেইল করুন এই ঠিকানায়: ri_montu@yahoo.com ]
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৪