ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলের গ্রামের স্কুলে তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারে বাধা

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৪
উপকূলের গ্রামের স্কুলে তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারে বাধা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লক্ষ্মীপুর ও ভোলা ঘুরে এসে: উপকূলের গ্রামের স্কুলে তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারে ৫টি বাধা রয়েছে। এই জগতে প্রবেশে পড়ুয়াদের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও বাধাগুলোই তাদের আগ্রহে ভাটা ফেলছে।



ছাত্র-শিক্ষকেরা বলেছেন, স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব থাকলেও বিদ্যুত সংকটের কারণে নিয়মিত তথ্যপ্রযুক্তির পাঠদান সম্ভব হয় না। এছাড়াও ধীরগতির ইন্টারনেট, শিক্ষক স্বল্পতা, স্থান সংকট আর ল্যাব ও কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণের নেই কোনো বরাদ্দ।

উপকূলের গ্রামের স্কুল ঘুরে এ চিত্র মিলেছে। তবে শত বাধার মাঝেও লক্ষ্মীপুর ও ভোলার মেঘনাতীরের গ্রামের স্কুলপড়ুয়াদের মাঝে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেক অপেক্ষার পর বিদ্যুৎ এলে পড়ুয়ারা দলে দলে ছোটে কম্পিউটার ল্যাবে। বসে যায়, কম্পিউটারের মনিটরের সামনে। নতুন ক্লাসে স্যারের কাছ থেকে তারা জানতে চায় আরও অনেক কিছু।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মেঘনাতীরের স্কুল ফলকন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র মিরাজ অনর্গল বলছিল ইন্টারনেটের সুবিধা সম্পর্কে।

সে বললো, ‘ইন্টারনেট আমাদের কাছে দর্পনের মতো। এখানে আমরা সবকিছু জানতে পারি, দেখতে পারি। ইন্টারনেট বিশ্বজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। ইন্টারনেটে যুক্ত হলে আমরা বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যাই। ’

একই শ্রেণীর ছাত্রী স্বপ্না আকতার বললো, ‘ক্লাসের একটা পড়া তৈরির জন্য আমরা ইন্টারনেটের সহায়তা নিতে পারি। ইন্টারনেট আমাকে সহজে জানতে সহায়তা করে। দৈনন্দিন খবরাখবর থেকে শুরু করে সবই আমরা জানতে পারি। এটা বলা যায়, ইন্টারনেট আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিচ্ছে। ’          

ফলকন উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের দোতলায় কম্পিউটার ল্যাবে পড়ুয়ারা জড়ো হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে এখানেই আলাপ ওদের সঙ্গে। ইতিবাচক আলোচনার সঙ্গে ওরাই উত্থাপন করলো নানামুখী সমস্যার কথা। উপকূলের প্রান্তিকে অবস্থান বলে জীবনের সঙ্গে এতটা ঘনিষ্ঠ একটা জগতে ওরা নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারছে না। পড়ুয়ারা বললো, বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে ওরা নিয়মিত তথ্যপ্রযুক্তির ক্লাস করতে পারছে না। আবার ইন্টারনেটে রয়েছে ধীরগতি।

এই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা জান্নাত জানালেন, বিদ্যালয়ের দোতলায় একটি কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। এখানে ৯টি ডেস্কটপ ও ২টি ল্যাপটপ রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি অচল অবস্থায় পড়ে আছে। আরও রয়েছে স্ক্রিনসহ ২টি প্রজেক্টর। ২০১২ সালে এই উপকরণগুলো এ স্কুলে এসেছে। নবম ও দশম শ্রেণীর তথ্যপ্রযুক্তির ক্লাস কম্পিউটার ল্যাবে করানো হয়; ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর ক্লাস হয় নিজেদের ক্লাসে।

ফাতেমা জান্নাত বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ক্লাসে ছেলেমেয়েদের যথেষ্ট আগ্রহ লক্ষ্যণীয়। তবে বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে সব ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দিনের বেলায় গড়ে ২-৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। রাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বেশি থাকলেও তখন তো ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে ক্লাসে সমস্যা হচ্ছে। স্কুলের কম্পিউটার ল্যাবে একটি সিটিসেল মডেম দেওয়া হলেও সেটা এখন অচল।

বিদ্যালয় সূত্র বলছে, কম্পিউটার শাখা পরিচালনার জন্য এখানে একজন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। তাকেও আবার অবসর সময়ে অন্য ক্লাস নিতে হয়। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি শাখা পরিচালনায় শিক্ষক সংকট একটি বড় সমস্যা।

অন্যদিকে, বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শাখার জন্য স্থান সংকটও প্রকট। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পড়ুয়াদের সঙ্গে আলাপে বোঝা গেল, কম্পিউটার ল্যাব ও কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণে কোনো বাজেট বা লোকবল নেই।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু জাকের বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় কম্পিউটারের সংখ্যা অনেক কম। একইভাবে প্রজেক্টরের সংখ্যাও কম। এগুলো নিয়ে ক্লাস নেওয়া খুবই কঠিন। অনেক সময় অপচয় হয়। এর ওপর বিদ্যুৎ সমস্যা তো আছেই। এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে এই প্রান্তিক জনপদে তথ্যপ্রযুক্তির দ্বার পুরোপুরি উন্মুক্ত হতে পারে।

কমলনগরের এই বিদ্যালয়টির মতোই অবস্থা লক্ষ করা গেল, ভোলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের টগবী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব, কম্পিউটার, প্রজেক্টর, সবই আছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সমস্যা বিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে বাধা সৃষ্টি করছে।

মেঘনাপাড়ের ভাঙন কবলিত এলাকার এই স্কুলের অধিকাংশ পড়ুয়া আসে দরিদ্র পরিবার থেকে। ভাঙনের কারণে তাদের পরিবারে সংকটের শেষ নেই। নিয়মিত স্কুলে আসাটাই যেন তাদের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। তারপরও তারা তথ্যপ্রযুক্তির ক্লাসের প্রতি আগ্রহী। বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবে একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপে উঠে আসে নানান সমস্যার কথা।

বিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক অসীম আচার্য্য বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ক্লাস পরিচালনায় সব ব্যবস্থা থাকলেও বিদ্যুৎ সংকটে অনেক ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক সমস্যাই সমাধান হতে পারে। গ্রামীণ জনপদে বইবে তথ্যপ্রযুক্তির সুবাতাস।

[পশ্চিমে সাতক্ষীরা, পূর্বে টেকনাফ, উপকূলের এই ৭১০ কিলোমিটার তটরেখা বেষ্টিত অঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে পিছিয়ে থাকা জনপদের খবরাখবর তুলে আনছে বাংলানিউজ। প্রকাশিত হচ্ছে ‘উপকূল থেকে উপকূল’ নামের বিশেষ বিভাগে। আপনি উপকূলের কোন খবর বাংলানিউজে দেখতে চাইলে মেইল করুন এই ঠিকানায়: ri_montu@yahoo.com ]

বাংলাদেশ সময়:০২৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।