ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

মাছেই ঘোরে জীবনের চাকা

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
মাছেই ঘোরে জীবনের চাকা ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাথরঘাটা (বরগুনা): পেশা থেকেই বংশের পরিচয়। নাম বিনয় ভুষন কর্মকার, সবাই তাকে ডাকেন খোকন কর্মকার।

পূর্ব পুরুষ থেকেই স্বর্ণের ব্যবসা করেন। কেমন চলছে ব্যবসা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আরে ভাই সাগরে মাছ নাই। কেমনে চলবে ব্যবসা’।

বাবার হাত ধরে এ ব্যবসায় নেমে পড়েন খোকন কর্মকার। স্বর্ণের ব্যবসায়ী হলেও মাছের ওপর নির্ভরশীল এসব ব্যবসায়ীরা।

কথা হয় ৯৯ দোকানী মো. বেল্লাল হোসেনের সঙ্গে। ১ টাকা থেকে ৯৯ টাকায় ক্রেতাদের নাগালে অনেক কিছুই পাওয়া যায়। কিন্তু সাগরে মাছ না পাওয়ায় তিনিও হতাশ।

পাথরঘাটা পৌর শহরের সংকল্প ট্রাস্টের নিচতলায় ৯৯ দোকানের মালিক মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘ভাই সাগরে মাছ থাকলে জেলেদের মুখে যেমন হাসি থাকে, তেমনি আমাদের মতো ছোটখাটো ব্যবসায়ীদেরও পেট বাঁচে। সাগরে মাছ না পাওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে বলে আমরাও অসুবিধায় আছি’।

এতো গেলো স্বর্ণ ব্যবসায়ী খোকন কর্মকার ও ৯৯ দোকানি বেল্লাল হোসেনের কথা। উপকূলের প্রতিটি ঘরে ঘরে চলছে হতাশা আর যন্ত্রণা। আবদুল্লাহ, সেলিম হাওলাদার, শামিম মীর, লাভলু মীর, জাকির মিয়াসহ পাথরঘাটা উপকূলের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ সরাসরি মাছের ওপর নির্ভরশীল। আর ২০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে মৎস্য সেক্টরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাগরে মাছ থাকলেই উপকূলের মানুষের জীবনের চাকা ঘুরে যায়।

চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু সাগরে নেই মাছের দেখা। দেশের দক্ষিণ উপকূলের মৎস্য ব্যবসায়ীদের হা-হুতাশ বাড়ছে। লাখ লাখ টাকা আগাম দাদন নেওয়া ট্রলার মালিক-আড়তদার-ব্যবসায়ী-জেলেরা দুশ্চিন্তায়। দাদনদারদের মাথায় হাত। অনেক আশা-ভরসা নিয়ে ৫/৭দিন আগে সাগরে কিছু সংখ্যক ট্রলার গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো ভালো খবর নেই।

সরেজমিনে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বিএফডিসি ফাঁকা এবং নীরব। অথচ প্রতি বছর এ মৌসুমে ইলিশের চাপে পা ফেলাই দায় হয়ে পড়তো। যেখানে এ সময়টাতে শ্রমিক, আড়তদার, পাইকার আর দূর-দূরান্ত থেকে আসা মাছ পরিবহনকারী ট্রাকের ভিড়ে স্বাভাবিক হাঁটা-চলা করাও যেতো না, সেখানে এবার দেখা গেছে শুধুই নীরবতা। অকশন সেডের বেশিরভাগ কর্মচারী ও শ্রমিকদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। আর ঘাটে দেখা যায়নি একটি ট্রলারও।

কথা হয় ট্রলার মালিক ও আড়তদার হাজী মো. টিপু খানের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সাগরের খবর ভাই ভালো না। ট্রলার পাঠাইছি, এখন পর্যন্ত জেলেরা ভালো সংবাদ দিতে পারে নাই। তবে এখনও আশা ছাড়ছি না।

মৎস্য শ্রমিক শামিম মীর বলেন, ‘মোগো এহন কষ্টের সীমা নাই, সংসার চালাতে অনেক কষ্ট অয়’।

সমাজসেবক রফিকুল ইসলাম কাকন বলেন, সাগরে মাছ না থাকায় জেলে সম্প্রদায়ের জীবনের চাকায় মরিচা পড়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।