ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি রোয়ানু’তে ক্ষতিগ্রস্তরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি রোয়ানু’তে ক্ষতিগ্রস্তরা ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

তজুমদ্দিন (ভোলা) থেকে: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র পর ৩৯ দিন পেরিয়ে গেলেও ভোলার তজুমদ্দিনের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো আজো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। এখনও খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন অনেকেই।


 
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপ্রতুল ত্রাণ দেওয়া হলেও বেশিরভাগ পরিবারের ভাগ্যে তা জোটেনি বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের। সহায় সম্বল হারানো মানুষগুলো রোদে পুড়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রোয়ানুর আঘাতে তজুমদ্দিনের চাঁদপুর ইউনিয়নের মহাজনকান্দি, শশীগঞ্জ, বালিয়াকান্দি, ভুলাইকান্দি, দরি চাঁদপুর গ্রামে বেশি ক্ষতি হয়। এসব গ্রামের এক তৃতীয়াংশ লণ্ড-ভণ্ড হয়ে যায়। এদের মধ্যে অনেকেই ঘরভিটা, আসবাবপত্র ও গৃহপালিত পশু-পাখি হারিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ মানুষেরই ঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারগুলো ভেঙে যাওয়া সেই ঘর মেরামত করতে পারলেও দরিদ্র পরিবারগুলো সেই ভাঙা ঘর আজো মেরামত করতে পারেননি।
 
এসব পরিবারে চলছে চরম দুঃখ-দুর্দশা। মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই হারিয়ে তারা দিন কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে। সরকার ও এনজিও সংস্থার পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হলেও তা কোন কাজেই আসেনি এসব পরিবারের।

কারণ, বেশিরভাগ মানুষই পায়নি সে সাহায্য। আর যাদের ভাগ্যে জুটেছে তা দিয়ে নতুন করে ঘর নির্মাণ তো দূরের কথা পরিবার পরিজনের মুখে খাবার তুলে দেওয়াই দুস্কর। কিছুতেই যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না এসব মানুষ। এ অবস্থায় ত্রাণ নিয়ে হাজারো অভিযোগ তাদের।

মহাজনকান্দি গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা ইয়ানুর বেগম বলেন, ৪ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি, ঝড়ে ঘর ভেঙে গেছে, সেই ঘরটাও তুলতে পারিনি।

আইয়ুন আলীর স্ত্রী শিপন আক্তার বলেন, সরকারি কোন সাহায্য পাইনি, এনজিও থেকে একটি ত্রিপল দিয়েছে, সেই ছাউনির তলায় রয়েছি।

নিরু বেগম, ইয়াছিন, আরিফ, জরিনা, বিলকিস, সাফিজল, সুফিয়ান, নুরে আলম, লোকমানসহ অন্যদের অভিযোগ, সামান্য কিছু চাল পেলেও ত্রাণের টিন কিংবা নগদ টাকা জুটেনি তাদের ভাগ্যে। ভাঙা ঘর মেরামত করতেও পারেননি তারা।

ক্ষগিগ্রস্ত পারভীন আখতার বলেন, ভাঙা ঘর মেরামত করতে পারিনি রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভীজে দিন কাটাচ্ছি, এখন তাবু টানিয়ে স্বামীসহ সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি, কবে নতুন করে ঘর তুলবো তার কোন নিশ্চয়তা নেই। একই অবস্থা নুর জাহানের। তিনি বলেন, ৩ ছেলে ২ মেয়েকে নিয়ে অভাবে দিন কাটাচ্ছি। ঝড়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এখনও পড়ে রয়েছে ঝড়ের ক্ষতচিহ্ন, এখনও দুঃখ দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে গাছ-পালা, গাছের ডালায় ঝুলে রয়েছে ঘরের চালের টিন। বিধ্বস্ত ঘরগুলো মেরামত করার সামর্থ্য নেই ক্ষতিগ্রস্তদের।

এ ব্যাপারে ভোলার জেলা প্রশাসক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ৭ শতাধিক পরিবারের মধ্যে ৩শ’ টন চাল, ২৫০ বান্ডেল ঢেউ টিন এবং তার সঙ্গে বান্ডেল প্রতি ৩ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে চাল সব বিতরণ করা হলেও কিছু ঢেউটিন এখনও বিতরণ করা হয়নি, খুব শিগগিরই তা বিতরণ করা  হবে।

এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ভিজিএফ ও ভিজিডি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আরো দু’টি বেসরকারি বড় টিম সেখানে ত্রাণ দিবে বলে আমাদের জানিয়েছে।
 
এদিকে, রোয়ানুতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তজুমদ্দিন উপজেলায় জেলা প্রশাসনের হিসেবে ২ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসময় নিহত হয়েছেন দুইজন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন এক জেলে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।