ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

সিডরের ১২ বছর

এখনো ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখে উপকূলবাসী

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৯
 এখনো ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখে উপকূলবাসী স্বজনের অপেক্ষায় উপকূলবাসী।

পাথরঘাটা (বরগুনা): আজ ভয়াল স্মৃতিবিজড়িত ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিনে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল স্মরণকালের ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় সিডর, যা আজও ভুলতে পারেনি উপকূলীয় এলাকার মানুষ। প্রতিনিয়তই উপকূলের মানুষ স্বজনদের অপেক্ষার প্রহর গুণছে। সিডরের একযুগ পেরুলেও আজও আশায় বুক বেধে অপেক্ষায় পথপানে চেয়ে থাকেন।

বিষখালী, বলেশ্বর আর বঙ্গোপসাগর। ত্রিমোহনার পদ্মার বাধ।

সিডর থেকেই এ বাঁধটি মানুষের মাঝে পদ্মা ভাঙন হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছে। এ বাঁধের পাশেই সিডরের আঘাতে অন্তত ৫২ জনের প্রাণহানি ঘটে। কেউ গাছের মাথায়, কেউ ঘরের চালের উপরে, কেউ ধান ক্ষেতের মধ্যে। আবার অনেকের মরদেহ খুজেও পাওয়া যায়নি। ভাগ্যক্রমে যারা বেঁচে আছেন তারাও নিখোজ স¦জনদের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।

সিডরের আঘাতে সর্বস্ব হারিয়ে যাওয়া আলমগীর ফকিরের পরিবার এখন ও স্বপ্ন দেখেন নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া পৈতৃক জমিটুকু ফিরে পাওয়ার। এই স্বপ্ন শুধু আলমগীর ফকিরের একার নয়। ১২ বছর ধরে একই স্বপ্ন আব্দুর রহমান, বেলায়েত, মতি মাষ্টার, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর, কবির খানসহ অনেক পরিবারের।

প্রলয়ঙ্কারী সিডরে বঙ্গোপসাগরের মোহনা বরগুনা পাথরঘাটা উপজেলা পদ্মা রুহিতা এলাকার বেরিবাঁধ ভেঙেই আব্দুর রহমানের পরিবারের ১১ ও জাকির হাওলাদারের পরিবারের সাতজনসহ ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে সিডরের স্রোত ঢুকে কয়েকশ’ বাড়িঘর, মানুষসহ প্রাণী সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায় অথৈ সাগরে। যারা পানির স্রোতের মধ্যে পড়েছে তাদের আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেকের মরদেহ পাওয়া গেছে ৩০/৪০ মাইল দূরে নদীপাড়ের বালু ও মাটির মধ্যে।

বিভীষিকাময় সেই আতঙ্ক এখনো দাপিয়ে বেড়ায় মনিরা বেগমসহ উপকূলবাসীদের। মনিরা বেগমও আজও অপেক্ষায় তার স্বামী আব্দুর করিমের জন্য। সিডরের এক সপ্তাহ আগে স্বামী আব্দুর করিম, দেবরসহ ১৬ জন জেলে সাগরে মাছ শিকার করতে যায়। সিডরের সময় গভীর সমুদ্রে ছিলেন তারা। কিন্তু সিডর শেষে আর ফিরে আসেনি স্বামী-দেবরসহ জেলেরা। আজও অপেক্ষায় রয়েছেন মনিরা বেগম।

তিনি বলেন, প্রতি মুহূর্ত স্বামী অপেক্ষায় থাকি। এই বুঝিত আসবে আমার স্বামী। কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেলেও আজও দেখা মেলেনি তার।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক জানান, বেরিবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে ওই এলাকার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। যা নিচ্ছে তাও আবার দায়সারা বলেও জানান তিনি।

পাথরঘাটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের জন্য সরকারের কাছে চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নেদারল্যান্ডসের একটি প্রতিনিধিদল পাথরঘাটার বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। দু-এক বছরের মধ্যে কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

বরগুনা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, সিডরের সময় সাগরে ৩৭৫টি ফিশিং ট্রলার নিখোঁজ হয়। এছাড়াও পাথরঘাটার শতাধিক জেলে এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলেও যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।