ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

ভালো নেই চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের জেলেরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২০
ভালো নেই চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের জেলেরা

চাঁদপুর: মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষার নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রস্তুতি নিয়ে পদ্মা-মেঘনায় মাছ আহরণে নেমেছে জেলেরা। কিন্তু যে পরিমাণ খরচ করে নদীতে জাল ও নৌকা নিয়ে নামছেন এবং মাছ আহরণ করছেন জেলেরা, তাতে তাদের কোনো ভাবেই খরচ উঠছে না বরং লোকসান দিতে হয়। তাই মেঘনা উপকূলীয় জেলেপাড়ার জেলেরা তাদের নৌকা ও জাল এখন ডাঙ্গায় উঠিয়ে রেখেছেন। 

শনিবার (৯ মে) সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় জেলেপাড়ার জেলে ও ইলিশ আহরণকারী নৌকার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৫২ হাজার ১৯০ জন।

এর মধ্যে অধিকাংশ জেলেই পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশসহ অন্য মাছ আহরণ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। তারা মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় দুই বারের অভয়াশ্রমকালীন সময়ে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেও অন্য পেশার সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে না। সরকার তাদের এই সময়ে বিকল্প হিসেবে খাদ্য সহায়তা ও অন্য প্রণোদনা দিয়ে আসছে। তবে এবছর জেলেদের অভিযোগ তারা সরকারের খাদ্য সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন।

সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের জেলে আনোয়ার দিদার বাংলানিউজকে বলেন, অভিযান শেষ হওয়ায় ৩০ এপ্রিল দিনগত রাতে আটজন নিয়ে মেঘনায় ইলিশ শিকারে নামি। সকাল পর্যন্ত যা ইলিশ পেয়েছিলাম, তা বিক্রি করেছিলাম পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু আমাদের খরচ হয়েছে আরও বেশি। যার কারণে নৌকা ডাঙায় উঠিয়ে নোঙর করে রেখেছি।

একই উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের জেলে মো. হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার পরে একদিন ইলিশ আহরণে নদীতে নেমেছিলাম। তবে ইলিশ না মেলায় এখন আর নামছি না। কারণ নিষেধাজ্ঞার দুই মাসে চাঁদপুরের বাইরে থেকে অসাধু জেলেরা এসে জাটকাসহ সব ধরণের মাছ আহরণ করেছেন। এখন নদীতে মাছের সংখ্যা খুবই কম। মাছ না পাওয়ায় আমাদের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট করতে হচ্ছে।  
ভালো নেই চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের জেলেরাএকই ইউনিয়নের সাখুয়া গ্রামের জেলে নৌকার মালিক জয়নাল বেপারী বাংলানিউজকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি কারেন্ট জাল তৈরি বন্ধ করতে হবে। যেসব জাল দিয়ে নদীর ছোট রেনু পোনা ধ্বংস হয়, সেসব জাল নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের আইন করতে হবে। যেমন গুল্টিজাল দিয়ে নদীর সব ধরণের ছোট-বড় মাছ শিকার করা হচ্ছে। আমরা চাই সরকার পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার সময় নিয়োজিত নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করুক এবং অসাধু জেলেদের যেন জাটকা নিধনের সুযোগ না দেওয়া হয়। তাহলে সরকারের নিষেধাজ্ঞা স্বার্থক হবে এবং ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদ্বীপ দে বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে অনেক জেলেই জাটকা নিধন থেকে বিরত থাকেন। নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে একটু সময় পার হলে অবশ্যই নদীতে জেলেরা ইলিশ পাবেন।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকি বাংলানিউজকে বলেন, নিরাপদ নদী এলাকায় ইলিশের বিচরণ থাকে। নিষেধাজ্ঞার সময় যেভাবে জেলেরা একত্রে জাল পেলে জাটকা নিধন করেছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমাদের জেলা টাস্কফোর্স করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধকালীন সময়ও জাটকা নিধন থেকে জেলেদের বিরত থাকার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। জেলেরা যদি ছোট ইলিশকে বড় হওয়ার সুযোগ দেন, তাহলেই এর সুফল তারাসহ পাবে দেশবাসী।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।