ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

বেড়িবাঁধ না থাকায় ভোগান্তিতে বহরবুনিয়ার মানুষ

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০
বেড়িবাঁধ না থাকায় ভোগান্তিতে বহরবুনিয়ার মানুষ বেড়িবাঁধ না থাকায় ভোগান্তিতে বহরবুনিয়া ইউনিয়নের মানুষ। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট:বহরবুনিয়া। বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত একটি ইউনিয়ন।

পানগুছি ও কেওড়া নদী সংলগ্ন এই ইউনিয়নের অবস্থান। ৩৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই ইউনিয়নে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষের বসবাস। ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে ৬৭টি ছোট-বড় খাল। এসব বর্ণনায় মতে হতে পারে কতই না শান্তিতে আছে এই ইউনিয়নবাসী।

কিন্তু দুর্ভোগের শেষ নেই বহরবুনিয়াবাসীর। নদীবেস্টিত ইউনিয়ন হওয়া সত্বেও ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবণ পানির প্রবেশ টেকাতে এই ইউনিয়নের জন্য নেই কোনো বেড়িবাঁধ। ফলে জোয়ার ভাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেঁচে থাকতে হয় ইউনিয়নবাসীকে।  

প্রতিবছর কয়েকবার জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে ভাসেন স্থানীয়রা। জোয়ারের পানি একটু বেশি হলেই রাস্তা-ঘাট, বাজার ও বাড়ি-ঘর তলিয়ে যায় বহরবুনিয়াবাসীর। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে বার বার আবেদন করলেও কোনো উপকার হয়নি এদের। তবে বহরবুনিয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষকে ঝড় জলোচ্ছ্বাস ও লবণ পানির হাত থেকে রক্ষার জন্য একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান খান।

স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। উন্নয়ন ও জনগণের জান মালের নিরাপত্তার জন্য উপকূলীয় জনপথে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে সরকার। কিন্তু নদী সংলগ্ন হওয়া সত্বেও অনেক ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ হয়নি।

স্থানীয় মো. মাসুদ শিকদার বলেন, আমরা বিচ্ছিন্ন একটি এলাকায় বসবাস করি। রাস্তা-ঘাট নেই। ভাল স্কুল-কলেজ নেই। নেই হাসপাতাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় বাজারের জন্য আধুনিক মার্কেট। এরপরেও বাপ দাদা এখানে বসবাস করেছেন তাই আমরাও আছি। তবে এই ইউনিয়নের মানুষদের রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা হলে একসময় ইউনিয়ন ছেড়ে বেশিরভাগ মানুষ অন্যত্র পাড়ি জমাবেন।

...বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ওষুধ ব্যবসায়ী সোহাগ বলেন, আমরা দেশের একটি দ্বীপ ইউনিয়নে বসবাস করি। এই ইউনিয়নের চারপাশেই নদী। নদীর পানি থেকে রক্ষার জন্য আমাদের ইউনিয়নে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। ইউনিয়ন থেকে কোথাও যেতে হলে নৌকা বা ট্রলারই একমাত্র ভরসা। ইউনিয়নের অভ্যন্তরের রাস্তা-ঘাটও অনেক খারাপ।

লতিফ তালুকদার নামে এক ব্যক্তি বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় বছরে কয়েকবার আমরা পানিতে ভেসে যাই। আমাদের রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা ডুবে যায় জোয়ারের পানিতে। নদী ও খালে একটু পানি বাড়লেই ঘরের সামনে তলিয়ে যায়।

নুরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, সুলতান মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, আমাদের এলাকার নদী খালে বছরের বেশিরভাগ সময় লবণ পানি থাকায় এখানে ধানসহ তেমন কোনো ফসল হয় না। ফলে বেশিরভাগ মানুষই মাছ চাষ ও নদী খালে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু জোয়ারের পানিতে এবং প্রাকৃতিক জলোচ্ছ্বাসে মাছের ঘেরও ভেসে যায়। আসলে আমাদের বিপদের কোনো শেষ নেই।

বহরবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার রিপন হোসেন বলেন, যুগ যুগ ধরে জোয়ার ভাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবন চলছে আমাদের। উপজেলা ও জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ট্রলার ও নৌকা। অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসার জন্য নিতে হয় উপজেলা বা জেলা সদরের হাসপাতালে। মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকির মধ্য দিয়েই নিয়ে যেতে হয়। তারপরও ঘটে মৃত্যুর ঘটনা।

চেয়ারম্যান তালুকদার রিপন হোসেন বলেন, বিভিন্ন কারণে স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের এই ইউনিয়নে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আজ বিংশ শতাব্দীতে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে আমরা ইউনিয়নের জন্য একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানাই। তাহলে লবণ পানির অত্যাচার ও ঝড় জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে আমরা রক্ষা পাব।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান খান বলেন, ৩৫/২ পোল্ডারের আওতায় মোরেলগঞ্জের সন্ন্যাসী থেকে রামপাল হয়ে মোংলার জয়মনির ঘোল পর্যন্ত প্রায় ৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশাকরি প্রকল্পটি অনুমোদন হলে ওই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে দাবি করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।