ভেতরে-বাইরে এখন অনেক গল্প। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রায় সবকিছুই অনাকাঙ্ক্ষিত।
মঙ্গলবার মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৩৪ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা, করে ১৭১ রান। ওই রান ৯১ বল আগেই তাড়া করে কিউইরা।
অল্প রান তাড়া করতে নেমে সাবধানী শুরু করে নিউজিল্যান্ড। দলটির দুই উদ্বোধনী ব্যাটার গড়েন ৪৯ রানের জুটি। তাদের এই জুটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। ৬ চারে ২৬ বলে ২৮ রান করা ফিন অ্যালেন তার বলে ডিপ ফাইন লেগে দাঁড়ানো উইল ইয়ংয়ের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ঠিক তার পরের বলেই দুর্দান্ত একটি ডেলেভারিতে অভিষিক্ত ডিন ফক্সক্রফটকে বোল্ড করে গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস ফেরান শরিফুল।
তার ভেতরে ঢোকা বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন ফক্সক্রফট। জাগিয়ে তোলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও। যদিও সেটি করতে পারেননি তিনি। তবে ওই স্পেলে দুর্দান্ত বল করেন শরিফুল।
তবে ম্যাচের মোড় এরপর হেনরি নিকোলসকে নিয়ে ঘুরাতে থাকান উইল ইয়ং। এই ব্যাটার মুখোমুখি হওয়া নবম বলে গিয়ে পেয়েছিলেন প্রথম রানের দেখা। নাসুম আহমেদের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১০ চারে ৮০ বলে ৭০ রান করেন তিনি। ততক্ষণে অবশ্য নিকোলসের সঙ্গে ৭৯ রানের জুটিতে ম্যাচ বের করে ফেলেছেন তিনি। বাকি কাজটা সারেন নিকোলস ও ব্লান্ডেল। ৮৬ বলে ৫০ রানে নিকোলস ও ১৫ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন ব্লান্ডেল।
এর আগে এ ম্যাচে বাংলাদেশ দল খেলতে নামে নতুন এক উদ্বোধনী জুটি নিয়ে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে জাকির হাসানের। এই উদ্বোধনী ব্যাটার বছরের শুরুর দিকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে স্কোয়াডে ডাক পান। চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার পর একরকম অদৃশ্যই হয়ে পড়েন তিনি।
ঘরোয়া টুর্নামেন্টে পারফর্ম করলেও সুযোগ মিলছিল না জাতীয় দলে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুটি ম্যাচে স্কোয়াডে থাকলেও সুযোগ মেলেনি একাদশে। তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। ৫ বলে স্রেফ এক রান করে এডাম মিলনের গতিতে পরাস্ত হয়ে ব্যাটে বল লেগে স্টাম্পে চলে যায়।
তার উদ্বোধনী সঙ্গী তানজিদ হাসান তামিম বিশ্বকাপের বিবেচনায় আছেন ভালোভাবেই। কিন্তু তিনিও এদিন খুব ভালো কিছু করতে পারেননি। ট্রেন্ট বোল্টের একটি বল অবশ্য দারুণভাবে বাউন্ডারি ছাড়া করেছিলেন। কিন্তু ৫ বলে ৫ রান করে তার বলেই স্লিপে ক্যাচ দেন তানজিদ।
তাওহীদ হৃদয়ের মধ্যে ছিল কিছুটা তাড়াহুড়ো। ১৮ রানের ইনিংসে তিনটি চারও হাঁকিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এডাম মিলনেকে তুলে মারতে গিয়ে উইল ইয়ংয়ের হাতে ক্যাচ দেন মিলনের বলে। আরেকদিক আগলে থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়কত্বের অভিষেক হওয়া এই ব্যাটার ঠিক রাখেন রান তোলার গতিও।
কিন্তু তিনি আরও একা হয়ে পড়েন মুশফিকুর রহিম ফিরলে। ২৫ বল খেলে ১৮ রানে লুকি ফার্গুসনের বলে বোল্ড হয়ে যান মুশফিক। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্য প্রতিটি ম্যাচই বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়ার পরীক্ষা। আগের ম্যাচে চল্লিশ ছাড়ানো ইনিংস খেললেও এ ম্যাচে তিনি থেমেছেন ২৭ বলে ২১ রান করে। মিলনের ফুল লেন্থের বল মাহমুদউল্লাহর ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক টিম ব্লান্ডেলের গ্লাভসে।
রিয়াদের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি ভেঙে যাওয়ার পর একটি রেকর্ড গড়েন শান্ত। ওয়ানডের অধিনায়কত্বের অভিষেকে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এখন তার। ১৯৯৮ সালে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ভারতের বিপক্ষে করা ৭০ রানকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। অধিনায়কত্বে ফিফটি আছে আরও দুজনের- সাকিব আল হাসান ও হাবিবুল বাশার সুমন।
শান্ত অবশ্য সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ম্যাককোনকিকে রিভার্স সুইপ করতে গেলে তার প্যাডে বল লাগে। ৮৪ বলে ৭৬ রান করে সাজঘরে ফেরত যান শান্ত। তার বিদায়ের পর বাংলাদেশের অলআউট হওয়া ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
এমএইচবি/আরইউ