বাংলাদেশ দল কর্তৃক শ্রীলঙ্কার তারকা অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে 'টাইমড আউট' করা নিয়ে ক্রিকেটবিশ্বে একপ্রকার ঝড় বয়ে গেছে। কেউ এর পক্ষে, তো কেউ বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরছেন।
টাইমড আউট বিতর্ক নিয়ে এবার মুখ খুললেন ভারতের প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়। তার মতে, টাইমড আউট ক্রিকেট আইনে বৈধ। তাই এটা কেউ মেনে চললে কিংবা প্রয়োগ করলে তাকে দোষী বলার সুযোগ নেই। তবে তিনি এ-ও বলেন, দল হিসেবে ভারত হয়তো টাইমড আউটের সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতো না।
বেঙ্গালোরের এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আগামীকাল (১২ নভেম্বর) বিশ্বকাপের লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে ভারত। এই ম্যাচের আগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দ্রাবিড়ের কাছে টাইমড আউট নিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়। জবাবে ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, 'একেক মানুষের প্রতিক্রিয়া একেক রকম। আমাদের নিজস্ব মস্তিষ্ক আছে, নিজস্ব চিন্তা আছে। নির্দিষ্ট পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রত্যেক মানুষ ভিন্নভাবে ভাবতে পারে। '
'আসলে সত্যিকারের সত্য কিংবা মিথ্যা বলে কিছু নেই। আপনি দুই দিক থেকেই ভাবতে পারেন। আপনি বিতর্ক করতে পারেন যে আমাদের নিয়মের ওপর অটুট থাকতে হবে, আবার মাঝে মাঝে ক্রিকেট চেতনার কথাও ভাবতে হবে। কিন্তু সবসময় দুই পক্ষেই লোক থাকবে।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে প্রথমবারের মতো টাইমড আউটের সাক্ষী হয় ক্রিকেটবিশ্ব। বিশ্বকাপের ম্যাচে উইকেট পড়ার পর ক্রিজে নেমে ব্যাটিংয়ের জন্য যথাসময়ে প্রস্তুত না হতে পারায় টাইমড আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ম্যাথিউস। সাধারণত মাঠে নামার পর একজন ব্যাটার প্রথম বল মোকাবিলার জন্য ৩ মিনিট সময় নিতে পারেন। কিন্তু এই বিশ্বকাপের কন্ডিশন অনুযায়ী সময়টা দুই মিনিট। এই সময়ের মধ্যে প্রস্তুত না হতে পারলে টাইমড হতে হবে।
ম্যাথিউস যথাসময়ে মাঠে নামলেও হেলমেটের স্ট্র্যাপ ছিঁড়ে যাওয়ায় আবার তা বদলাতে ক্রিজ ছেড়ে যান। ততক্ষণে তার সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় একজন ফিল্ডারের পরামর্শে আম্পায়ারের কাছে টাইমড আউটের আবেদন করেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাঠের আম্পায়ার বিষয়টি যাচাই করে আউটের সিদ্ধান্ত দেন। আর তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টাইমড আউট হন ম্যাথিউস। এ নিয়ে মাঠেই এবং পরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রাগ ঝেড়েছেন লঙ্কান ক্রিকেটার।
বিষয়টি নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়ে যায় এরপরই। সাকিবের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন অনেক সাবেক ক্রিকেটার। এটা ক্রিকেট চেতনাবিরোধী কাজ বলে মোটা দাগে বলে বসেছেন কেউ কেউ। আবার 'আইনে আছে' যুক্তিতে তার পক্ষেও দাঁড়িয়েছেন অনেকে। 'ক্রিকেট চেতনা বনাম ক্রিকেট আইন বিষয়ক' এই লড়াই থামানোর জন্য এমনকি আসরে নামতে হয়েছে খোদ ক্রিকেটের সব ধরনের নিয়মকানুনের প্রবর্তক মেরিলেবোরন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। তারা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছে, টাইমড আইনসিদ্ধ। এর অনুসরণ অন্যায় বা ভুল কিছু নয়। অর্থাৎ সাকিব ভুল করেননি, অন্যায়ও করেননি।
সাকিবের সিদ্ধান্তের পক্ষে বলেছেন দ্রাবিড়ও, 'পার্থক্য থাকতেই পারে। কেউ কেউ একমত হবেও না, আবার কাছে নিয়ম যদি আমাকে এটা করার অধিকার দেয়; তাহলে তো ঠিকই আছে। কেউ যদি আইনের নিয়ম মেনে চলতে চায়, তা নিয়ে অভিযোগ করা যায় না। কারণ সত্যিকার অর্থে সে তো নিয়ম মেনেই চলছে। আপনি হয়তো করতেন না, আমরা হয়তো করতাম না; কিন্তু নিয়মের মধ্যে থাকায় তাকে দোষীও বলতে পারবেন না। আপনি করতে চান কি না সেটা আপনার ব্যাপার। '
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
এমএইচএম