ক্যারিয়ারের সপ্তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি উদযাপন করেন সাকিব। মাহমুদউল্লাহর তৃতীয়।
শনিবারের (১০ জুন) ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে অস্ট্রেলিয়া হেরে গেলেই সেমিতে উঠে যাবে টিম বাংলাদেশ। বার্মিংহামের এজবাস্টনে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায়। টানা দুই জয়ে সবার আগে শেষ চার নিশ্চিত করে ইংলিশরা।
বাংলাদেশের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিল কিউইরা। পয়েন্ট টেবিলে গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচ শেষে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে মাশরাফির দল। নেট রান রেট ০.০০০। বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত দুই ম্যাচ থেকে অজিদের সংগ্রহ ২।
বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড গড়েন দুই সেঞ্চুরিয়ান সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ। আগের কীর্তিটি ছিল তামিম-মুশফিকের (১৭৮)। ২০১৫ সালে ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে।
আরেকটি ঐতিহাসিক জয়ের মধ্য দিয়ে কার্ডিফে অপরাজিত থাকলো টাইগাররা। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল সেই সময়ের ‘আন্ডারডগ’ বাংলাদেশ। দীর্ঘ এক যুগ পর এলো ঘুরে দাঁড়ানো আরেকটি অবিস্মরণীয় জয়। দু’টিই আবার পাঁচ উইকেটে। সেই ম্যাচটির একমাত্র সাক্ষী মাশরাফি বিন মর্তুজা আজ দলের অধিনায়ক।
দলীয় ৩৩ রানের মাথায় মুশফিকুর রহিমের (১৪) বিদায়ে চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে। সেখান থেকে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বিপর্যয় সামলে দলকে টেনে তোলেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ।
তার আগে ১২ রান তুলতেই তিন উইকেট হারিয়ে চাপের মুখে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। একে একে সাজঘরে ফেরেন টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল (০), সাব্বির রহমান (৮) ও সৌম্য সরকার (৩)।
তিনটি উইকেটই তুলে নেন পেসার টিম সাউদি। প্রথম ওভারেই আউট হয়ে যান ফর্মে থাকা তামিম। এলবিডব্লু হওয়ার পর রিভিউ নিলেও কোনো লাভ হয়নি। আগের দুই ম্যাচে তামিমের ব্যাট থেকে আসে ২২৩ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত সেঞ্চুরির (১২৮) পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন ৯৫ রানের ঝলমলে ইনিংস।
সাউদি সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন। মুশফিককে অ্যাডাম মিলনি ও সেঞ্চুরিয়ান সাকিবের উইকেট লাভ করেন ট্রেন্ট বোল্ট।
এর আগে টাইগারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষদিকে বড় স্কোর গড়তে ব্যর্থ হয় ব্ল্যাক ক্যাপসরা। নির্ধারিত ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় আট উইকেট হারিয়ে ২৬৫। সর্বোচ্চ ৬৩ রান করেন রস টেইলর। রানআউট হওয়ার আগে কেন উইলিয়ামসনের ব্যাট থেকে আসে ৫৭।
মাঠ খেলার অনুপযোগী হওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা পর ম্যাচ শুরু হয়। তবে কোনো ওভার কাটা হয়নি। বৃষ্টি শঙ্কায় কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনসে ৩০ মিনিট বিলম্বে হওয়া টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন।
অষ্টম ওভারের মাথায় বিপদজনক হয়ে ওঠা গাপটিল-রনকি জুটি (৪৬) ভেঙে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন একাদশে ফেরা তাসকিন আহমেদ। উঠিয়ে মারতে গিয়ে মিডঅনে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে ধরা পড়েন লুক রনকি (১৬)। তাসকিনের পর আঘাত হানেন রুবেল হোসেন। ১৩তম ওভারে দুর্দান্ত ডেলিভারিতে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন মার্টিন গাপটিল (৩৩)।
টেইলর-উইলিয়ামসন জুটি (৮৩) ভেঙে আবারো ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। টেইলরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে নন স্ট্রাইকিং প্রান্ত সিঙ্গেল নিতে গিয়ে ক্রিজে ফিরে আসার আগে শর্ট ফাইন লেগ থেকে মোসাদ্দেক হোসেনের থ্রোতে উইলিয়ামসনকে (৫৭) রানআউট করেন সাকিব আল হাসান।
এরপর নেইল ব্রুমকে নিয়ে আরও ৪৯ রান যোগ করেন টেইলর। ব্যক্তিগত ৫৩ রানে তাসকিনের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। ৪৪তম ওভারে কিউই ব্যাটিং লাইনআপে জোড়া আঘাত হানেন মোসাদ্দেক।
নেইল ব্রুমকে (৩৬) তামিম ইকবালের তালুবন্দি করার পর কোরি অ্যান্ডারসনকে (০) প্রথম বলেই এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন। নিজের পরের ওভারে (৪৬তম) আবারো স্পিন ভেলকি দেখান মোসাদ্দেক। এবার স্ট্যাম্পিং হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন জিমি নিশাম (২৩)। সপ্তম উইকেটের পতন ঘটে।
শেষদিকে এসে উইকেটের খাতায় নাম লেখান মোস্তাফিজ। ৪৯তম ওভারে অ্যাডাম মিলনিকে (৭) ক্লিন বোল্ড অষ্টম উইকেটের পতন ‘কাটার মাস্টার’। আর উইকেট যায়নি। আট উইকেট হারিয়ে কিউদের স্কোর দাঁড়ায় আট উইকেটে ২৬৫। মিচেল স্যান্টনার ১৪ ও টিম সাউদি ১০ রানে অপরাজিত থাকেন।
স্পিন বোলিংয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট শিকার করেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক। তাসকিন দু’টি ও একটি করে নেন মোস্তাফিজ ও রুবেল।
চার পেসার নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। একাদশে আনা হয় দু’টি পরিবর্তন। মেহেদী হাসানের মিরাজের জায়গায় দলে ফেরেন তাসকিন আহমেদ। অন্যদিকে, বাদ পড়েন ইমরুল কায়েস। ফেরানো হয় মোসাদ্দেক হোসেনকে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৪ ঘণ্টা, ১০ জুন, ২০১৭
এমআরএম