বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বার্মিংহামের এজবাস্টনে সেমিফাইনালে বাংলাদেশের মুখোমুখি হতে হবে ভারতকে। স্বভাবতই সামনের ম্যাচ নিয়ে দু’দলের ছক কষার কথা।
বাংলাদেশ দল তা-ই করছে। একদিনের ছুটি দেওয়া হলেও রুবেল-মোস্তাফিজ-তাসকিন-সৌম্যদের সেই ছুটির দিনেই অনুশীলনে মগ্ন থাকতে দেখা গেছে। কোচ হাতুরুসিংহে বলছেন, তারা পূর্ণোদ্যমে মাঠে নামবেন। সেজন্য তার শিষ্যরা যথেষ্ট পরিশ্রম করছে।
কিন্তু ভারত? দক্ষিণ আফ্রিকাকে সেমিফাইনাল নির্ধারণী ম্যাচে হারানোর পরই যেন ‘মনে মনে’ ফাইনালে উঠে গেছে। সেমিফাইনালে যেন তাদের জয় অবধারিতই অথবা ‘আগে থেকেই নিশ্চিত’। শেবাগ টুইট করে ভারতকে সেমিফাইনাল ও ফাইনালের জন্য শুভকামনা জানাচ্ছেন। কোহলি বলছেন, ‘সবাই’ ভারত-ইংল্যান্ড ফাইনাল দেখতে চাইছে। গাঙ্গুলী সন্দেহ প্রকাশ করছেন ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের দাঁড়ানোর সামর্থ্য নিয়ে।
সেমিফাইনালে ‘জয়’ ধরে নিয়ে শেবাগ-কোহলিরা কি এ লড়াইয়ের প্রতিপক্ষকে অসম্মান করছেন না? নাকি আসলে ‘ভীতি’ ঢাকার চেষ্টা করছেন? এই পর্যায়ে এসে এখন পরের প্রশ্নটাই কি জোর বেশি পাবে না? আর গাঙ্গুলী তার যে শক্তিশালী ভারতীয় দলের কথা বলছেন, এই দল কি ২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে নাকানি-চুবানি খেয়ে টুর্নামেন্ট থেকেই বিদায় হওয়া সেই তারকায় ঠাসা দলের চেয়েও শক্তিশালী? অথবা ২০১৫ সালে বাংলাদেশে এসে ওয়ানডে সিরিজে নাস্তানাবুদ হয়ে যাওয়া সেই ভারতের চেয়েও শক্তিশালী? কিংবা তারও আগে ২০১২ সালের এশিয়া কাপে টাইগারদের সামনে পাত্তা না পাওয়া দলের চেয়েও ভয়ঙ্কর?
বাংলাদেশকে গোনায় না ধরা উচিত ছিল কিনা সে ফয়সালা এজবাস্টনেই হবে। বাংলাদেশ শিবিরও এজবাস্টন নিয়েই ঘাম ঝরাচ্ছে।
কিন্তু গাঙ্গুলী-শেবাগ-কোহলিরা যে বাংলাদেশ সমর্থকগোষ্ঠীর ভদ্রমহলে ক্ষোভের আগুন ছড়ালেন, তার কী হবে? ‘বুলি’র জবাবের বদলে বরং সেটারও জবাব আসুক মাঠ থেকে। যেমনি এসেছে অতীতে। যে অতীত টাইগার সমর্থক গোষ্ঠীর বুকের পাটা চড়চড় করে বাড়িয়ে দেয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ভারতকে উড়িয়ে দেওয়ার পরিসংখ্যান বাদ দিয়ে যদি দু’পক্ষের বিগত শেষ চার ম্যাচের মুখোমুখি লড়াই সামনে আসে। তাতে ফলাফল ২-২। ২০১৫ এর মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ সফরে আসা ভারত ৩ ম্যাচের সিরিজে একটি মাত্র জয় পেলেও তাদের অপর জয়টি এসেছে বিশ্বকাপে, সেই বিতর্কিত জয়। যে ম্যাচের আম্পায়ারিং নিয়ে খোদ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত মন্তব্য করেছিলেন।
আর যদি দুই দলের বিগত ৭ ম্যাচের ফলাফল দেখা হয়, তাতে দেখা যায় বাংলাদেশ ৭টি ম্যাচের মধ্যে ৪টিতে জিতেছে (বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচ বাদে), যেখানে ভারতও সেই একইসংখ্যক ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৫টিতে।
যেহেতু এটি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, সেহেতু আইসিসির টুর্নামেন্টে দু’দলের পারফর্ম বিবেচনায় আনলে দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের বড় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ছেড়ে কথা বলেনি ভারতকে। সে গাঙ্গুলী-শচীন-দ্রাবিড়-কুম্বলে-জহিরের মতো তারকায় ঠাসা (২০০৭ বিশ্বকাপ) টিম হোক। অথবা কোহলি-যুবরাজ-রায়না-রোহিতদের নিয়ে গড়া (২০১২ এর এশিয়া কাপ) টিম হোক হোক।
অর্থাৎ সাম্প্রতিক পরস্পর লড়াই বা অন্য কারও সঙ্গে লড়াই অথবা আইসিসি টুর্নামেন্ট, ফলাফলে ভারতের চোখে চোখই রেখে আছে বাংলাদেশ। আর দু’দলের তুলনামূলক অগ্রগতির হিসাব? সে হিসাবে ভারতীয়দের চেয়ে ঢের এগিয়ে লাল-সবুজের বাংলাদেশ। কোনো ক্ষেত্রে ভারত ৪ বছর পিছিয়ে তো, কোনো ক্ষেত্রে ১৫ বছর, কোনো ক্ষেত্রে ২০ বছর পর্যন্ত।
যেমন ভারত ১৯৩২ সালে টেস্ট খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও তারা এ ফরম্যাটে প্রথম জয় পেয়েছে ২০ বছর পর, ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সে বিবেচনায় বাংলাদেশ ২০০০ সালে টেস্ট খেলার যোগ্যতা অর্জনের মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই প্রথম জয় তুলে নেয়, ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
ভারত ১৯৭১ সালে ওয়ানডে খেলার যোগ্যতা লাভের পর তাদের প্রথম জয় পেতে অপেক্ষা করতে হয় চার বছর। ১৯৭৫ সালে ভারতীয় টিম এ জয় পায় ইস্ট আফ্রিকার বিপক্ষে। আর ১৯৯৮ সালে ওয়ানডে খেলার যোগ্যতা অর্জনের মাত্র একবছরের মাথায়ই প্রথম জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ দল, ১৯৯৮ সালেরই অক্টোবরে কেনিয়ার বিপক্ষে।
টেস্ট খেলা শুরু করার পর ভারতের ব্যাটসম্যানরা প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পান ৩২ বছর পর। ১৯৫৫/৫৬ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন পলি উমরিগড় (২২৩)। আর বাংলাদেশ টেস্ট খেলা শুরু করার ১২ বছরের মধ্যেই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি আদায় করে ফেলেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরিটি হাঁকান মুশফিকুর রহিম (২০০)।
এতোসব পরিসংখ্যান-হিসাবে যোজন যোজন বাংলাদেশের এগিয়ে থাকায়ই কি ভয় পেয়ে জোরে জোরে ‘বুলি’ আওড়াচ্ছেন গাঙ্গুলী, শেবাগ বা কোহলিরা? কিন্তু সংস্কার মতে, এই ভয়ই যে পিছিয়ে দেয়, হারিয়ে দেয়!
বাংলাদেশ সময়: ২২৪২ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৭
এইচএ/