ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

কুক-লারার মাঠে অনন্য ইতিহাসের সামনে টাইগাররা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৭
কুক-লারার মাঠে অনন্য ইতিহাসের সামনে টাইগাররা কুক-লারার মাঠে অনন্য ইতিহাসের সামনে টাইগাররা

বার্মিংহাম থেকে: এজবাস্টনের সামনে এসে দাঁড়াতেই স্মৃতির দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করলো ২০১১ সালের ১০ আগস্ট ভারতের বিপক্ষে চার ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অ্যালিস্টার কুকের গড়া সেই মহাকাব্যিক ২৯৪ রানে ইনিংসটি। যার বদৌলতে ধোনিদের এক ইনিংস ও ২৪২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছিলো স্বাগতিক ইংল্যান্ড।

এজবাস্টনের ১৩৫ বছরের জন্মের ইতিহাসে আন্তর্জাতিক  ক্রিকেটের যে কোনো ফর্মেটে এটিই কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
 
এই মাঠেই ক্রিকেটের আরেকটি অবিস্মরণীয় ব্যাটিং মহাকাব্য রচিত হয়েছিল ১৯৯৪ সালে।

কাউন্টিতে ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে ডারহামের বিপক্ষে ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারা এই মাঠেই খেলেছিলেন ৫০১ রানের ক্লাসিক এক ইনিংস। এটা অবশ্য প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে। বার্মিংহামের এই মাঠটি এই দুই ব্যাটসম্যানকে দুহাত ভরে দিয়েছে সেকথা অনায়াসেই বলা যায়।
          
১৫ জুন বার্মিংহামের এই মাঠেই আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে উঠার অনন্য ইতিহাস গড়ার মিশনে নামবে মাশরাফি ও তার দল।
 
ইংল্যান্ডে আসার পর প্রথম যেদিন বার্মিংহামকে দেখি সেদিনই মনে হয়েছিল শহরটি বেশ ঐহিত্যবাহী। রাস্তা, ঘাট, বাড়ি, ঘর, মসজিদ, গির্জা, সরকারি বেসরকারি ভবন, স্কুল, ইউনিভার্সিটি, দোকান, পাট, পার্ক সব কিছুতেই কেমন বড় বড় আর ঐতিহ্যের ছোঁয়া।
 
ইংল্যান্ড ও ওয়েলশ’র অন্য আট দশটি শহরের মতো অল্প স্বল্প পরিসরে এরা যেন কোনো কিছুই ভাবতে পারে না। বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় চেইন ফাস্ট ফুড শপ ম্যাকডোনাল্ডস দিয়েই উদারণটি দেই। লন্ডন কিংবা কার্ডিফে ম্যাকডোনাল্ডস যেটুকু আয়তনের মধ্যে দাঁড়ানো তার চাইতে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি আয়তনের মধ্যে এখানকার এক একটি ম্যাকডোনাল্ডস।
 
এখানকার মানুষের জীবন যাত্রাও বেশ স্বস্তির। জনসংখ্যার দিক থেকে লন্ডনের পরেই ব্রিটেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এটি। কিন্তু জীবন যাপন ও চলাফেরা এতটুকুও ঘিঞ্জি নয়। রাস্তায় বের হলে দেখা যায়, মানুষের কমতি নেই কিন্তু লন্ডনের মতো কারো গায়ের সঙ্গে গা লেগে যায় না।
 
সেই সুযোগও অবশ্য নেই। কেননা বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও রাস্তাগুলো এতোটাই বিশাল যা আপনাকে আপনার মত করে চলাফেরার সুযোগ করে দেবে।
 
বার্মিংহামের প্রাকৃতিক পরিবেশও দারুণ মনোরম। ঘণ গাছপালা শহরটিকে সবুজে ভরে রেখেছে। শহরের যে প্রান্তেই আপনি যান না কেন সবুজের কোনো কমতি দেখবেন না। এরপর শহর থেকে সাবআর্ব কিংবা কান্ট্রিসাইডের দিকে গেলে মনে হবে আপনি গভীর কোনো অরণ্যে চলে এসেছেন।
 
মধ্যযুগের ছোট একটি মার্কেট শহর বার্মিংহাম। কিন্তু আজ তার কী রূপান্তর! আর ছোট সেই শহরটির আজকের এই রূপান্তরের পেছনে চালকের ভূমিকা পালন করেছে অষ্টাদশ শতকের শিল্প বিপ্লব। মূলত তারপর থেকেই তথ্য প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও অর্থনিতীতে বৃটেনের অন্য আট দশটি শহরকে ছাপিয়ে গেছে বার্মিংহাম।
 
বার্মিংহাম বিশেষত প্রস্তুতকারক শিল্পের জন্যই বিশ্বব্যাপী বেশি পরিচিত। ১৭৯১ সালে বিশ্বের প্রথম প্রস্তুতকারক শিল্প শহর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বৃটেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরটি। এই শহরে বসেই জেমস ওয়াট আবিষ্কার করেছেন বাষ্পীয় ইঞ্জিন। তার জীবনের ৪৪টি বছর কেটেছে বার্মিংহামের ছায়া সুশীতল এই শহরে।
 
শুধু জেমস ওয়াটই কেন অক্সিজেনের আবিষ্কারক জোসেফ প্রিসলিও এই বার্মিংহামেই কাটিয়েছেন জীবনের এক দশকেরও বেশি সময় (১৭৮০-৯১)।       
 
জেমস ওয়াট, জোসেফ প্রিসলি, অ্যালিস্টার কুক, ব্রায়ান লারা, বাংলাদেশের অনন্য ইতিহাস গড়ার হাতছানির শহর বার্মিংহামে সব মিলে সময়টা মন্দ কাটছে না। আর ১৫ জুন মাশরাফিরা যদি তাদের ফাইনালে উঠার ইতিহাসটি এই এজবাস্টনে রচনা করতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই। না পারলেও ক্ষতি নেই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমি ফাইনাল, এই অর্জন কী কম গৌরবের?
    
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৭
এইচএল/বিএস
 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।