একদিন পরেই আষাঢ়ের প্রথম দিনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে বাংলাদেশের মুখোমুখি হচ্ছে ভারত, স্থান ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম। গত ক'বছরে ক্রিকেট বিশ্বে এই দু’দেশের ম্যাচগুলো যেন যুদ্ধে পরিণত হচ্ছে।
ভারতকে হারানো বাংলাদেশের অনেক পুরনো অভ্যাস। শুরু সেই ২০০৪ সালের ডিসেম্বর থেকে। তবে ভারতীয় গণমাধ্যম সেটি ভুলে বারবার ২০০৭ এর পোর্ট অব স্পেনের কথাই বলছে। কারণ সেই বিশ্বকাপে ভারতকে ছিটকে দিয়েছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে এখন ক্রিকেট তারকা রয়েছে অনেক। সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোস্তাফিজ বা মাশরাফি। তবে ২০০৪ সালের ওই দলে কিন্তু এতো তারকা ছিল না। আশরাফুল, আফতাব, পাইলট আর মাশরাফি মিলে কিছু কিছু রান করেছিলেন। আফতাবেরই ছিল শুধু হাফ সেঞ্চুরি। ২৩০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ২১৪ রানেই মুখ থুবড়ে পড়ে ভারতের ইনিংস। মাশরাফি, রফিক, তাপস বৈশ্য, খালেদ মাহমুদ নেন দুটি করে উইকেট নেন।
কোনো একক কৃতিত্ব নয়, বরং দলীয় পারফরমেন্সেই জয় আসে বাংলাদেশের। এই টোটাল ক্রিকেটের মাধ্যমেই বিশ্বের বাঘা বাঘা দলকে ঘোল খাইয়ে এসেছে টাইগাররা। এরপর থেকে সব জয়েই দলীয় পারফরমেন্স বা টিম ওয়ার্কই বাংলাদেশ দলের মূল শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতকে বড় টুর্নামেন্ট থেকে আউট করার অভ্যাসও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পুরনো। ২০০৭ সালে পোর্ট অব স্পেনে বিশ্বকাপ থেকে প্রথম পর্বেই ভারতকে বিদায় করে আশরাফুলরা। সেই ক্ষত আজও ভোলেনি ভারতের ক্রিকেট জগৎ।
২০১৫ সালে এক অন্য বাংলাদেশকে চেনে ভারত। ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের অপূর্ব সমন্বয়। পেস বোলিংয়ে বিশ্বের বিস্ময় হয়ে হাজির হলো মুস্তাফিজ। যার বল বোঝার আগেই স্ট্যাম্প গুঁড়িয়ে দিতে শুরু করে। আর ক্যাপ্টেন মাশরাফিতো ভারতের পুরনো আতংকের নাম। পেসার রুবেল উইকেট পেয়ে যে তাণ্ডবে মাতেন সেটা কোহলি মাত্রই স্মরণ করতে পারেন। আর তাসকিনও উইকেট পেতে শুরু করেছেন। তাই যে কোনো তিনজন পেসারই এখন ভারতের ব্যাটিং লাইন চূর্ণ করতে সক্ষম।
এদিকে চমৎকার ফর্মে ফিরেছেন মোসাদ্দেক। অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক কার্ডিফেও নিউজিল্যান্ডের ইনিংস ছোট করতে বাধ্য করেছেন। আর প্রয়োজনের সময় মাহমুদুল্লাহর ঠান্ডা মেজাজে বিধ্বংসী ব্যাটিং তো নতুন নয়।
ক্রিকেট এখন অলরাউন্ডারদের। তাইতো সাকিব, রিয়াদ আর সাব্বিরদের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়েই পারফরমেন্স করতে প্রস্তুত মোসাদ্দেক।
ব্যাটিংয়ে নিশ্চিতভাবেই তামিম তার সেরা সময়টা পার করছে। ওপেনিংয়ে সৌম্য বা ইমরুল কায়েস ব্যাকআপ দিতে পারলেই বড় ইনিংস খেলা বা তাড়া করা কোনোটাই অসম্ভব নয়। আর মাঝে মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিক যে ইনিংসকে টেনে অনেকদূর নিতে পারেন, তার প্রমাণ তিনি অনেকবারই রেখেছেন।
সৌম্য আর সাব্বিরের সঙ্গে মোস্তাফিজও যে এখন দুর্দান্ত ফিল্ডিং করছেন, সেটা চোখে পড়ে। গালিতে দাঁড়িয়ে অসাধারণ ক্যাচ ধরতে সক্ষম তিনি।
ইতোমধ্যেই কোচ হাথুরুসিংহে বলেছেন, ভারতকে অন্য আট-দশটা টিমের মতোই দেখছেন তার শিষ্যরা। তিনটি বিভাগেই সেরাটা দিয়ে জয় তুলতে চায় তার দল।
তিন বিভাগে ভালো করেই টোটাল ক্রিকেটের ছাপ রাখতে চায় টাইগাররা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে জয় তোলাই এখন মাশরাফিবাহিনীর মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৭
এমএন/এএ