শুধু ওই শিশুরাই কেন? এদেশের তরুণ, যুবক এমনকি বয়জেষ্ঠদের কাছেও লাল-সবুজের ক্রিকেটারদের চেয়ে বড় আইকন বোধ করি আর কেউই নেই। আর এদেশের সুন্দরী মেয়েদের স্বপ্নের যুবরাজের দৌঁড়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের চেয়ে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, তাসকিনরা সম্ভবত এগিয়ে।
আজ এদেশের অধিকাংশ বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের বুয়েট, মেডিকেল কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডির চেয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের গন্ডিতে দেখতেই অধিক পছন্দ করেন।
কেবল বাবা-মায়েরাই নন। আজ যে তরুণটি বাসার বারন্দায়, গ্যারেজে কিংবা পাড়ার মাঠে ক্রিকেট খেলে সেও ভবিষ্যতে নিজেকে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে দেখতে চায়। অনাগত দিনে সে মাশরাফির মতো বীরদর্পে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার স্বপ্ন বোনে। সাকিবের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হয়ে বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চায়। তামিমের মতো বিধ্বংসী ব্যাটে গুড়িয়ে দিতে চায় প্রতিপক্ষের বোলিং লাইন আপ। মোস্তাফিজ, রুবেল ও তাসকিনের মতো উড়িয়ে দিতে চায় প্রতিপক্ষের স্ট্যাম্প।
সেই দেশের ক্রিকেটাররাই যখন স্ত্রীকে নির্যাতন করে, গৃহকর্মীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে জেল হাজতে যায়, নারী কেলেঙ্কারিতে জড়ায়, তখন বিষয়টি আসলে কী দাঁড়ায়? যে দেশের কোটি কোটি তরুণ তাদের মতোই হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তাদের স্বপ্ন ভাঙে।
ছোট এই ব-দ্বীপের কোটি কোটি মানুষ যারা তাদের নিয়ে এতদিন গর্ববোধ করতেন লজ্জায় তাদের মাথা নুইয়ে যায়। যেন প্রিয় সেই ক্রিকেটারদের নাম মুখে আনতেও কুন্ঠাবোধ করেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কলুষিত হয় বাংলাদেশের নাম।
আজ হঠাৎ করে এই কথাগুলো বলার প্রয়োজন মনে হত না, যদি না রোববার (৯ জুলাই) বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনিয়মিত পেস বোলার মোহাম্মদ শহীদের স্ত্রী স্ব-শরীরের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে এসে স্বামীর নামে চার পাতার এক অভিযোগপত্র জমা দিয়ে না যেতেন। সেই অভিযোগপত্রে কতটা ন্যাক্কারজন কথা তার সম্পর্কে বলা হয়েছে সেটা নিশ্চয়ই আপনারা দেখেছেন, জেনেছেন।
দারুণ অনভিতপ্রেত এই বিষয়টিকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অশনী সংকেত হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক পরিচালক খন্দকার জামিল উদ্দিন। দেখছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের বর্তমান উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ধ্বংসের অবশ্যম্ভাবী এক অনুঘটক হিসেবে।
শহীদের স্ত্রী ফারাজানা আক্তার শহীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন সেগুলো প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে বিসিবিকে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা তিনি করার পরামর্শ দিয়েছেন যাতে করে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন ঘটনা ঘটানোর চিন্তাও মনে আনতে না পারে।
তার মতে, ‘এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিসিবির উচিৎ একটি শক্ত পদক্ষেপ নেয়া। যতক্ষণ পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে শহীদকে সাময়ীকভাবে অব্যাহতি দেয়া অবশ্য করণীয়। আর সে দোষী প্রমাণিত হলে তাকে সারা জীবনের জন্য বহিষ্কার করতে হবে। কারণ ক্রিকেটাররা আমাদের দেশের আইডল। আমাদের ছেলে-মেয়েরা ক্রিকেটারদের মতো চুল কাটে, তাদের মতো কাপড় পড়ে, এমনকি তাদের মতো সবকিছু করতে চায়। আর যারা আইডল তারা এধরনের কর্মকাণ্ড করবে এটা কখনই কাম্য হতে পারে না। আমাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা তাহলে কাকে আইডল বিবেচনা করবে?’
খন্দকার জামিলের অভিযোগ, এর আগেও এমন ঘটনা যে সকল ক্রিকেটাররা ঘটিয়েছেন তাদের প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কঠোর পদক্ষেপ নিলে শহীদ আজ এমন ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস দেখাতো না। ওইসব ক্রিকেটারদের কারণে বাংলাদেশের সুনাম ও সুখ্যাতি ইতোমধ্যে যথেষ্টই কলুষিত হয়েছে।
তাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনাগত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বার্থে এবং ক্রিকেটারদের এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা বন্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কঠোর অবস্থানের কোনো বিকল্পই দেখছেন না এই স্বনামধন্য ক্রীড়া সংগঠক।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, ১০ জুলাই ২০১৭
এইচএল/এমআরপি