১৯৮৭ সালের এই দিনে মাগুরায় জন্ম নেওয়া সাকিবের পিতার নাম মাশরুর রেজা। পিতা ফুটবল ভক্ত ছিলেন, তবে ছেলের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলার।
বাংলাদশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর তাকে জিম্বাবুয়ে সফরের ওয়ানডে দলে সুযোগ করে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের মধ্যেই বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারে পরিণত হন তিনি। দ্রুতই টেস্ট ক্রিকেটেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সেখানেও সেরা অলরাউন্ডারের তকমা জিতে নেন। ওয়ানডে অভিষেকের এক বছর পরেই ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় তার।
এরপর খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হলো। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ দল হিসেবে এখনও নড়বড়ে অবস্থানে থাকলেও সাকিব কিন্তু ঠিকই নিজ মহিমায় উজ্জ্বল। টি-টোয়েন্টির উপযোগী ব্যাটিং করার পাশাপাশি তার বোলিং অন্যতম সেরা, যা তাকে বিশ্বের প্রায় সব বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে জায়গা করে দিয়েছে। বিশেষ করে তার বাঁহাতি স্পিন সব ফরম্যাটেই সমান কার্যকর।
এখন পর্যন্ত ৫৫ টেস্টে ৬৪১৫, ১৯৫ ওয়ানডে ৫৫৭৭ ও ৭২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৪৭১ রান করেন সাকিব আল হাসান। টেস্ট ও ওয়ানডেতে তার শতকের সংখ্যা ১২টি। সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০৮৫৫ রানের মালিক সাকিব; বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
বোলার সাকিবের ঝুলিতে আছে ২০৫টি টেস্ট উইকেট, যা বাংলাদেশের রেকর্ড। ওয়ানডেতে ২৪৭ উইকেট, যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আর টি-টোয়েন্টিতে ৮৫ উইকেট, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ও বিশ্বে তৃতীয়।
অধিনায়ক সাকিবও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০০৯ সালে তার কাঁধে নেতৃত্বভার সঁপে দেওয়া দেয়। ২০১১ সালের বিশ্বকাপেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। একই বছর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে। মাঝখানে কয়েক হাত ঘুরে আবার তার হাতেই এখন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব।
সাকিবের ঝুলিতে আছে বেশ কয়েকটি রেকর্ড। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফরম্যাটেই বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন সাকিব। একই বছর মাত্র চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০০তম উইকেট ও ৪০০০ রান করার কীর্তি গড়েন তিনি।
একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট নেওয়া মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার সাকিব। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১০০০০ রান ও ৪৫০ উইকেটের বেশি নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করা তিনজনের একজন তিনি। এক ওয়ানডে ম্যাচে সেঞ্চুরি আর ৪ উইকেট এবং এক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৫ উইকেট ও ৪০-এর অধিক রান নেওয়ার কীর্তিও আছে তার ঝুলিতে।
তার এতসব অর্জন তাকে এনে দিয়েছে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি। ডাক পেয়েছেন এশিয়ান একাদশে। হয়েছেন উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার। সদ্যই জায়গা পেয়েছেন মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিশ্ব ক্রিকেট কমিটিতে।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে উম্মে আহমেদ শিশিরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সাকিব। ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর দুজনের ঘর আলো করে এসেছিল তাদের প্রথম কন্যা সন্তান আলাইনা হাসান অব্রি।
বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে তার উদয় না হলে বহু জয় থেকে বঞ্চিত হতে হতো টাইগারদের। ব্যাটে, বলে সমান দক্ষতা, দুর্দান্ত ফিল্ডিং আর অধিনায়কত্ব মিলিয়ে ক্রিকেটের ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’ বা ‘সব্যসাচী’ বলা হয় তাকে। আজ তার জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৯
এমএইচএম