একটার পর একটা সাক্ষাৎকারের আবদার সাঈদ আজমলের জন্য। তার তাতে ক্লান্তি নেই।
একসময় দুনিয়ার সেরা স্পিনার ছিলেন। কিন্তু বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষায় উতরে যেতে পারেননি। এরপর বদলে যায় ক্যারিয়ারের গতিপথও। ক্রিকেট ছেড়ে আজমল এখন মনোযোগী কোচিংয়ে। এবারের বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের মেন্টরের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি।
ঢাকা পর্বের প্রথম ভাগ শেষে বিপিএলের সিলেট পর্ব শুরু হচ্ছে। রোববার সিলেটেই বাংলানিউজের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন নিজের প্রশ্নবিদ্ধ ক্যারিয়ার, সাকিব আল হাসান ও বিপিএল নিয়ে...
বাংলানিউজ : বিপিএলের অভিজ্ঞতা কেমন?
আজমল : আমি বিপিএল খেলতাম আগে। এমনিতেও বাংলাদেশে অনেক খেলেছি। দুটি বিশ্বকাপ খেলেছি। ২০১১ ও ২০১৪ বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ খেলেছি। এখানে যখনই এসেছি, উপভোগ করেছি। দর্শকরা খুব ভালো। ঢাকাতে যোগ দিয়েছি। আগেও দলে খেলেছি। এখানে মেন্টর হিসেবে যোগ দিয়ে খুব ভালো লাগছে।
আজকের অনুশীলনে আমি তাদেরকে দেখিয়েছি বলে কীভাবে ফ্লাইট দিতে হয়। সব বল আর্মার যেন না করে। যদি বল স্পিন করাতে পারে, উইকেট নিতে পারবে। কিন্তু ক্রিকেট এখন অনেক দ্রুতগতির। সব বোলারই জোরে করতে চায়। দ্রুতগতিতে বল করলেই কাজ হবে না এসব বলেছি।
বাংলানিউজ: আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছিল ভীষণ বর্ণিল। এখন কোচিং জীবন কেমন উপভোগ করছেন?
আজমল : কোচিং ক্যারিয়ার খুব ভালো যাচ্ছে। আমার পুরো দুনিয়াজুড়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। আমি পুরো দুনিয়ায় ক্রিকেট খেলেছি। কোচিং খুব কঠিন কিছু না। কারণ ক্রিকেটাররা ইতোমধ্যেই খেলছে। আপনার তাদের কোচিং করানোর কিছু নেই। শুধু তাদের মাথায় ঠিক জিনিসটা ঢুকিয়ে দিতে হয় যেন তারা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারে।
বাংলানিউজ : আপনি ছিলেন অফ স্পিন জাদুকর। এখনকার অফ স্পিনারদের মধ্যে কি ওই জাদুটা দেখেন
আজমল : যদি অফ স্পিনারদের ভ্যারিয়েশন আপনি তুলে নেন, নিষিদ্ধ করে দেন, তাহলে তো তাদের হারিয়ে যেতেই হবে। আইসিসি যখন বলেছে এটা করতে পারবে না, ওটা পারবে না; তখন এমনিতেই অফ স্পিনার কমে গেছে। খুবই বিরল এখন অফ স্পিনার। মেহেদী হাসান মিরাজ বল করছে, (রবীচন্দ্রন) অশ্বিন অবসর নিয়েছে, এর বাইরে আছে কেবল নাথান লায়ান। কেবল দুজন!
বাংলানিউজ : বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসান। তিনি এখন খুব ঝামেলার মধ্যে আছে। বোলিং নিষিদ্ধ হয়েছে। আপনারও এই অভিজ্ঞতা আছে...
আজমল : সাকিব বাংলাদেশের সুপারস্টার ক্রিকেটার। আমি জানি না সরকারের সঙ্গে কী হয়েছে। কেন তার পেছনে লেগেছে। ক্রিকেটের ওপর, খেলার ওপর কোনো ধরনের রাজনীতি থাকা উচিত না। ওর খেলা দরকার। সে আপনাদের তারকা। বাংলাদেশের ক্রিকেটার। এখনও খুব ভালো। সব ফরম্যাটেই ভালো, পৃথিবীর এক নম্বর।
আর অ্যাকশন ঠিক করা সহজ! খুব কঠিন কোনো কাজ না। আমি জানি না কেন নিষিদ্ধ করেছে। ১৫-১৭ বছর ধরে খেলছে সে। এখন হঠাৎ ইংলিশ ক্রিকেটারদের মনে হয়েছে নিষিদ্ধ করা দরকার সাকিবকে। এটা অনায্য। যদি করতে হয়, প্রথম দিনই করে দাও। ১৭ বছর পর কেন নিষিদ্ধ করতে হবে? যদি তার এটা থেকে বের হতে হয়, খুব কঠিন কিছু না। আমার বিশ্বাস সে চাকিং করছে না। এত দারুণ বোলার, বিশ্ব ক্রিকেটে ৭০০-৮০০ উইকেট আছে।
বাংলানিউজ: এভাবে নিষিদ্ধ হওয়া তো মানসিকভাবেও বড় ধাক্কা?
আজমল : যারা ওখানে পরীক্ষা করায়, সবাই-ই ১৫ ডিগ্রি পার করে। ওই মেশিনই ঠিক নেই! যে কোন পেসার, স্পিনার পরীক্ষা দেক, তার ১৫ ডিগ্রির বেশি আসবে। যার এটা পাশ দরকার, সে করে ফেলবে।
বাংলানিউজ : এমনিতে সাকিবের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক তো পুরোনো। আপনি তো তার কাছ থেকে বোলিং কোচ হওয়ার প্রস্তাবও বোধ হয় পেয়েছিলেন?
আজমল : সাকিবের সঙ্গে কাউন্টিতে খেলেছি। সে আমাকে একবার অফার করেছিল। কিন্তু তখন পাকিস্তানে ব্যস্ততা ছিল এজন্য রাজি হইনি। এখন যদি ভালো অফার হয়, অবশ্যই করবো। যদি মিলে যায়, তাহলে করবো। আমি পরিবারকে সময় দিতে চাই। এজন্য বের হতে চাই না।
বাংলানিউজ: শেষ একটা জিনিস। ২০১১ বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকারকে আউট দিয়েছিলেন মাঠের আম্পায়ার। পরে রিভিউতে যে বদলে যায়...
আজমল : এটা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। সবাই জানে কী হয়েছে, সবাই জানে আমি কী বলেছি। আম্পায়ার আউট দিয়েছে। আমি জানতাম ওটা আউট ছিল। নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা গম্ভীরেরও তেমনই মনে হয়েছে। সে রিভিউতে নেওয়ার পক্ষে ছিল না।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৫
এমএইচবি/এমএইচএম