ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

আগের ৯ টেস্টে বাংলাদেশ-ভারত

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৯
আগের ৯ টেস্টে বাংলাদেশ-ভারত ছবি: সংগৃহীত

২০০০ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ দশম টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে আইসিসি'র সদস্যপদ লাভ করে। সে বছর ১০-১৪ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ তাদের প্রথম টেস্ট খেলতে নামে। অভিষেক ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। স্বাগতিক বাংলাদেশকে সেই ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নাইমুর রহমান দুর্জয় আর সফরকারী ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলী।

১৪ নভেম্বর ইন্দোরের ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের যাত্রা। এ পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে ৯টি টেস্ট।

একটি বাদে সবগুলো ম্যাচই হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। ৯ ম্যাচের সাতটিতেই জয় পেয়েছে ভারত। বাকি দুটি ড্র হয়েছিল। আগামী ১৪ নভেম্বর টেস্টে দুই দল মুখোমুখি হবে দশমবারের মতো। বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন মুমিনুল হক আর ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন বিরাট কোহলি।

দেখে নেওয়া যাক আগের ৯ ম্যাচের সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রথম টেস্ট: ২০০০ সালে ১০ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ভারত ৯ উইকেটে জয় লাভ করে। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে আগে ব্যাট করতে নেমে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সেঞ্চুরি (১৪৫) এবং হাবিবুল বাশারের ফিফটিতে (৭১) তোলে ৪০০ রান। ভারতের হয়ে বল হাতে ৫টি উইকেট নেন সুনিল যোশি আর দুটি করে উইকেট নেন অভিষিক্ত পেসার জহির খান ও অজিত আগারকার। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সৌরভ গাঙ্গুলী (৮৪) সুনিল যোশির (৯২) ব্যাটে ভারত তোলে ৪২৯ রান। বাংলাদেশের স্পিনার মোহাম্মদ রফিক ৩টি ও নাইমুর রহমান ৬টি উইকেট পান।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৯১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। হাবিবুল বাশার (৩০) খালেদ মাসুদ (২১) রান করেন। ভারতের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন সুনিল যোশি ও জাভাগাল শ্রীনাথ। মাত্র ৬৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় সফরকারী ভারত। রাহুল দ্রাবিড় ৪১ ও শীব সন্দুর দাশ ২২ রান করেন। বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র উইকেটটি পান হাসিবুল হোসেন শান্ত। ম্যাচ সেরার পুরস্কারটি পান ভারতের সুনিল যোশি।

দ্বিতীয় টেস্ট: ভারতের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে বাংলাদেশকে অপেক্ষায় থাকতে হয় প্রায় চার বছর। ২০০৪ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। ভারত ইনিংস এবং ১৪০ রানের ব্যবধানে হারায় স্বাগতিকদের। প্রথম ইনিংসে আগে ব্যাট করতে নেমে ১৮৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। মোহাম্মদ আশরাফুল(৬০)ও মোহাম্মদ রফিক (৪৭) রান করেন। ভারতের হয়ে ইরফান পাঠান ৫টি এবং অনিল কুম্বলে ২টি উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসে ভারত ৫২৬ রানের বিশাল সংগ্রহ পায়। শচীন টেন্ডুলকার একাই করেন ২৪৮ রান, যা বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের রানের থেকেও বেশি। এছাড়া লোয়ারঅর্ডারে জহির খান করেন ৭৫ রান। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ রফিক ও মুশফিকুর রহমান।

দ্বিতীয় ইনিংসে ২০২ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের হয়ে মাঞ্জারুল ইসলাম (৬৯), নাফিস ইকবাল (৫৪) রান করেন। ভারতের ইরফান পাঠান ৬টি ও অনিল কুম্বলে ২টি উইকেট পান। বাংলাদেশ ইনিংস এবং ১৪০ রানে পরাজিত হয়। ম্যাচ সেরা হন ইরফান পাঠান।

তৃতীয় টেস্ট: ২০০৪ সালের ১৭  ডিসেম্বর চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারত প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে করে ৫৪০ রান। রাহুল দ্রাবিড় ১৬০ ও গৌতম গম্ভীর করেন ১৩৯ রান। মোহাম্মদ রফিক ৪টি ও মাশরাফি বিন মর্তুজা ৩টি উইকেট পান। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে মোহাম্মদ আশরাফুলের অপরাজিত ১৫৮ রানের ইনিংসে ৩৩৩ রানে অলআউট হয়। এছাড়া আফতাব আহমেদ করেন ৪৩ রান। ভারতের হয়ে জহির খান ২টি ও অনিল কুম্বলে পান চারটি উইকেট।

ফলোঅনে আবারও ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের ১২৪ রানে অলআউট করে ইনিংস ও ৮৩ রানে ম্যাচ জেতে ভারত। বাংলাদেশের মোহাম্মদ রফিক (২২) ও তালাহ জুবায়ের (৩১) রান করেন। ভারতের ইরফান পাঠান ৫টি ও অনিল কুম্বলে ২টি উইকেট পান। ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান মোহাম্মদ আশরাফুল।

চতুর্থ টেস্ট: ২০০৭ সালের ১৮ মে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয়, তৃতীয় আর পঞ্চম দিনের কয়েকটি সেশন ভেস্তে যায়। ভারত প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ৩৮৭ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। সৌরভ গাঙ্গুলী ১০০ ও টেন্ডুলকার ১০১ রান করেন। বাংলাদেশের মাশরাফি বিন মর্তুজা ৪টি ও শাহাদাত হোসেন ৩টি উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ২৩৮ রানে অলআউট হয়। মাশরাফি বিন মর্তুজা ৭৯ আর রাজিন সালেহ ৪১ রান করেন। রুদ্রপ্রতাপ সিং ও বিক্রম সিং ৩টি করে উইকেট পান।

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ১০৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। দিনেশ কার্তিক ২২ ও টেন্ডুলকার ৩১ রান করেন। মোহাম্মদ রফিক ৩টি ও শাহাদাত হোসেন ২টি উইকেট পান। বাংলাদেশ ৪৩ ওভারে ২৫৩ রানের টর্গেটে ব্যাট করতে নামলে ২৮ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ১০৪ রান তোলে। পরে ম্যাচটি ড্র হয়। জাভেদ ওমর ৫২ আর হাবিবুল বাশার ৩৭ রান করেন। রমেশ পাওয়ার ও রুদ্রপ্রতাপ সিং ১টি করে উইকেট পান। ম্যাচ সেরা পুরস্কার পান মাশরাফি বিন মর্তুজা।

পঞ্চম টেস্ট: ভারতের বিপক্ষে ২০০৭ সালের ২৫ মে মিরপুরে খেলতে নামে বাংলাদেশ। ভারত প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেটে ৬১০ রান করে ইনিংস ঘোষাণা করে। ওয়াসিম জাফর ১৩৮, দিনেশ কার্তিক ১২৯, টেন্ডুলকার ১২২*, দ্রাবিড় ১২৯ রান করেন। মোহাম্মদ রফিক ২টি ও মাশরাফি ১টি উইকেট পান। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাট করতে নামলে ১১৮ রানে অলআউট হয়। খালেদ মাসুদ ২৫ ও সাকিব আল হাসান ৩০ রান করেন। জহির খান ৫টি ও অনিল কুম্বলে ৩টি উইকেট পান।

ফলোঅনে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯২ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ ২৫৩ রানে অলআউট হয়। আশরাফুল ৬৭ ও মাশরাফি ৭০ রান করেন। রমেশ পাওয়ার ৩টি ও টেন্ডুলকার ২টি উইকেট পান। ম্যাচটি ভারত ইনিংস ও ২৩৯ রানে জিতে নেয়। ম্যাচ সেরা হন জহির খান।

ষষ্ঠ টেস্ট: ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। প্রথম ইনিংসে ভারত ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪৩ রানে অলআ‌উট হয়। টেন্ডুলকার ১০৫ ও শেওয়াগ ৫২ রান করেন। সাকিব ও শাহদাত ৫টি করে উইকেট নেন। বাংলাদেশ ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ২৪৩ রানে অলআউট হয়। মাহমুদউল্লাহ ৬৯ ও মুশফিক ৪৪ রান করেন। ভারতের জহির খান ও অমিত মিশ্র ৩টি করে উইকেট নেন।

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ৪১৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। গৌতম গম্ভীর ১১৬ ও ভিভিএস লক্ষন ৬৯ রান করেন। বল হাতে বাংলাদেশের সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ ২টি করে উইকেট নেন। ৪১৪ রানের টার্গেটে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামলে ৩০১ রানে অলআউট হয়। মুশফিক ১০১ ও তামিম ৫২ রান করেন। অমিত মিশ্র ৪টি ও ইশান্ত শর্মা ৩টি উইকেট পান। ভারত ম্যাচটি ১১৩ রানে জিতে নেয়। ম্যাচ সেরা হন টেন্ডুলকার।

সপ্তম টেস্ট: ২০০৭ সালের ২৪-২৭ জানুয়ারি মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৩৩ রানে অলআউট হয়। আশরাফুল ৩৯ ও মাহমুদউল্লাহ ৯৬ রান করেন। ভারতের জহির খান ৩টি ও ইশান্ত শর্মা ৪টি উইকেট পান। প্রথম ইনিংসে ভারত ৮ উইকেটে ৫৪৪ রান করে। দ্রাবিড় ও টেন্ডুলকার দুইজনই সেঞ্চুরি হাঁকান। বাংলাদেশের হয়ে শফিউল ইসলাম ৩টি ও সাকিব ২টি উইকেট পান।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিতে ভর করে তোলে ৩১২ রান। ভারতের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ২ রান। ভারত ১০ উইকেটে ম্যাচটি জিতে নেয়। ম্যাচ সেরা হন জহির খান, দ্বিতীয় ইনিংসে ৭টি উইকেট পান তিনি।

অষ্টম টেস্ট: ২০১৫ সালের ১০-১৪ জুন ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। ভারত প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৪৬২ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। শিখর ধাওয়ান ১৭৩ ও মুরালি বিজয় ১৫০ রান করেন। সাকিব ৪টি ও জুবায়ের হোসেন লিখন ২টি উইকেট পান। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাট করতে নেমে ২৫৬ রানে অলআউট হয়। ইমরুল কায়েস ৭২, লিটন দাস ৪৪ রান করেন। রবীচন্দ্রন অশ্বিন ৫টি ও হরভজন সিং ৩টি উইকেট পান।

ফলোঅন এড়াতে না পারায় বাংলাদেশ আবার ব্যাটিংয়ে নামলে ১৫ ওভারে ২৩ রান তোলে। এরপরই শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে ম্যাচের দ্বিতীয় দিন খেলা হয়নি। এছাড়া কয়েকটি সেশনের খেলা না হওয়ায় ড্র হয়। ড্র ম্যাচের ম্যাচ সেরা হন শিখর ধাওয়ান।

নবম টেস্ট: এই ম্যাচটি অবশ্য বাংলাদেশের মাটিতে হয়নি। টেস্ট অভিষেকের পর প্রথমবারের মতো ২০১৭ সালে ভারত সফরে এই টেস্টটি খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। হায়দ্রাবাদের রাজিব গান্ধি স্টেডিয়ামে ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ম্যাচটি গড়িয়েছিল পঞ্চম দিন। স্বাগতিক ভারত ২০৮ রানের ব্যবধানে ম্যাচটি জিতেছিল। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে ৬৮৭ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। দলপতি বিরাট কোহলি ২০৪ রান করেন। এছাড়া, মুরালি বিজয় ১০৮ আর রিদ্ধিমান সাহা ১০৬ রান করেন। তাইজুল ইসলাম ৩টি উইকেট পান। বাংলাদেশ ৩৮৮ রানে অলআউট হয়। মুশফিকুর রহিম ১২৭ রান করেন। উমেশ যাদব ৩টি উইকেট পান।

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ৪ উইকেটে ১৫৯ রান তুলে ইনিংস ঘোষাণা করে। চেতশ্বর পুজারা ৫৪ রান করেন। তাসকিন আহমেদ ২টি উইকেট পান। ৪৫৮ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামলে ২৫০ রানে অলআউট হয়। মাহমুদউল্লাহ ৬৪ রান করেন। অশ্বিন ৪টি উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন বিরাট কোহলি।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
এমআরপি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।