কাগজে-কলমে বর্তমান ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের চেয়ে বাংলাদেশ বেশ শক্তিশালী। কারণ ক্যারিবীয় দলটিতে তাদের নিয়মিত অধিনায়কসহ মূল তারকা খেলোয়াড়দের অধিকাংশই বাংলাদেশ সফরে আসেননি।
কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। টাইগারদের এই দলটি গত প্রায় ১ বছর টেস্ট ক্রিকেট থেকে দূরে ছিল। এখানেই উইন্ডিজ কিছুটা এগিয়ে। কারণ করোনাকালেও তাদের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেট খেলে এসেছেন। করোনা বিরতির পর সবমিলিয়ে ৫টি টেস্ট খেলেছে ক্যারিবীয়রা। সেখানে বাংলাদেশ একটাও খেলেনি। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারানোর এই ফরম্যাট থেকে দূরে টাইগাররা।
তবে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড সফরে উইন্ডিজ সর্বশেষ ৫ টেস্টের ৪টিতেই হেরেছে। জিতেছে একটিতে। দলটির ব্যাটিং লাইনআপ অনেকটা জার্মেইন ব্ল্যাকউড, অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েট এবং জন ক্যাম্পবেলের ওপর নির্ভরশীল। টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার পর গত বছর সাউদাম্পটন টেস্টে ৯৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ব্ল্যাকউড।
গত এক বছরে উইন্ডিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্ল্যাকউড। ব্র্যাথওয়েট তুলনায় অধারাবাহিক হলেও বিশেষ করে বাংলাদেশের বিপক্ষে বেশ সফল। অন্যদিকে ক্যাম্পবেল সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে ভালো খেলেছেন এবং বিসিবি একাদশের বিপক্ষেও সেই ফর্ম ধরে রেখেছেন।
বোলিংয়ে উইন্ডিজের সবচেয়ে বড় অস্ত্র শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। গত তিন বছর ধরে এবং সর্বশেষ ৫ টেস্টেও দারুণ সফল ছিলেন এই ডানহাতি পেসার। শেষ ৫ টেস্টে তিনি ১৭ উইকেট তুলে নিয়েছেন। কেমার রোচ এবং আলঝারি জোসেপও ভালো পারফর্মার। তবে বাকিদের ছাপিয়ে নায়ক বনে যেতে পারেন রাকিম কর্নওয়াল। চট্টগ্রামে প্রস্তুতিমূলক ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে কিছুটা আভাস এই দীর্ঘদেহী স্পিনার দিয়েই রেখেছেন। ১৪ মাস আগে আফগানিস্তান টেস্টে ৭৫ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি অভিজ্ঞতা। সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিতে হিসাবটা নিজেদের পক্ষেই নিয়েছে স্বাগতিকরা। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘদিন না খেলার কারণে কিছুটা পিছিয়ে থাকবে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। যদিও জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচ ব্যাটিং বান্ধব। ফলে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের জন্য প্রথম কয়েকদিন দারুণ সুযোগ থাকছে ফায়দা তুলে নেওয়ার।
টাইগারদের জন্য সবচেয়ে বড় সুসংবাদ সাকিব আল হাসানের ফেরা। সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজে বল ও ব্যাট হাতে দারুণ পারফর্ম করেছেন এই অলরাউন্ডার। হয়েছেন সিরিজ সেরাও। তিনি ফেরায় দলের স্পিন আক্রমণ আরও শানিত হয়েছে। সাকিব ও মেহেদী হাসান মিরাজ স্পিন আক্রমণে নেতৃত্ব দেবেন। সঙ্গে থাকবেন নাঈম হাসান, যিনি সর্বশেষ টেস্টে ৯ উইকেট পেয়েছিলেন। এছাড়া ডমিঙ্গো ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন, এই ম্যাচ দিয়ে লাল বলের ক্রিকেটে ফিরছেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান।
টাইগারদের ব্যাটিং আগের মতোই তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান এবং মুধফিকুর রহিমের ওপর নির্ভর করবে। এছাড়া বড় ভূমিকা রাখতে পারেন সাইফ হাসান এবং নাজমূল হোসেন শান্ত। আর লিটন দাসের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগানোর সুযোগ থাকছে। যদিও সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে নিজের ছায়া হয়েই ছিলেন এই ডানহাতি।
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে স্থানীয় সময় সকাল ৯-৩০ মিনিটে গড়াবে ম্যাচটি। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম এবং মোস্তাফিজুর রহমান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্ভাব্য একাদশ: ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), জন ক্যাম্পবেল, এনক্রুমাহ বোনার, জার্মেইন ব্ল্যাকউড, জশুয়া ডা সিলভা (উইকেটরক্ষক), কাইল মায়ার্স, রাকিম কর্নওয়াল, রেইমন রেইফার/আলঝারি জোসেপ, জোমেল ওয়ারিক্যান, কেমার রোচ এবং শ্যানন গ্যাব্রিয়েল।
বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২১
এমএইচএম