শারীরিক গড়নে ও ব্যাট চালানো দেখে হয়তো কাইল মায়ার্সকে অনেক ক্রিস গেইল ভেবে ভুল করতে পারেন। ‘ইউনিভার্সেল বস’র মতোই যেন ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ ২৮ বছর বয়সী এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান।
যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, মায়ার্সের মুখে হাসি ছিল না মোটেও। তবে তার ব্যাট হেসেছে। টাইগারদের জন্য যা ‘হায়েনার হাসি’। মায়ার্স একেকটি শটে ছড়িয়েছেন ফুলের সুবাস। কে বলবে, ক্যারিয়ারে মাত্র প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছেন তিনি! বাংলাদেশিদের ফিল্ডিং ব্যর্থতায় কয়েকবার জীবন পেয়ে অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে পেয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরি।
সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এনে দিলেন এক ঐতিহাসিক জয়। মায়ার্স যখন মাঠ ছাড়ছেন তখন তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ২১০*। তার জন্য তাকে খেলতে হয়েছে ৩১০ বল। ২০ চার ও ৭ ছয়ে জানিয়ে দিলেন, টেস্টে মাথা ঠান্ডা রেখে এগোনোর পাশাপাশি প্রয়োজনে বল সীমানা ছাড়া করতেও কম যান না তিনি।
চট্টগ্রাম টেস্টের পঞ্চমদিনে ফিল্ডিংয়ে নামার সময় বাংলাদেশ হয়তো কল্পনাও করেনি দিনশেষের আগে তাদেরকে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হবে। কারণ টার্গেটটা আকাশচুম্বি। ৩৯৫ রান। এশিয়ার মাটিতে এরচেয়ে বেশি লক্ষ্য তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই। ২০১৭ সালে নিজেদের মাঠ কলম্বোতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৮৮ রান তাড়া করে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা।
তার মধ্যে চতুর্থদিন শেষ করার আগে মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে টপ-অর্ডারের তিন উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল উইন্ডিজ। তবে পঞ্চমদিনে এনক্রুমাহ বোনারকে নিয়ে ব্যাটিং দৃঢ়তা দেখালেন মায়ার্স। চতুর্থ উইকেটে মাটি কামড়ানো ব্যাটিংয়ে দু’জনে গড়লেন ৪৪২ বলে ২১৬ রানের জুটি। বোনার ব্যক্তিগত ৮৬ রানে ফিরলেও দ্বিশতকে ক্যারিবিয়ানদের জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মায়ার্স।
সেই সঙ্গে অনেক রেকর্ডের পাতায় নিজের নামটা লিখিয়ে নিলেন তিনি। চতুর্থ ইনিংসে সফলভাবে রান তাড়ায় উইন্ডিজের এই ইনিংস আছে পঞ্চমস্থানে। প্রথমটিতেও তাদের নাম। ২০০৩ সালে সেন্ট জোন্সে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রান তাড়া করে জিতেছিল ক্যারিবিয়ানরা।
ব্যক্তিগত অর্জনেও চট্টগ্রাম টেস্ট দু’হাত ভরে দিয়েছে মায়ার্সকে। চতুর্থ ইনিংসে দ্বিশতক পাওয়া ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান তিনি। গর্ডন গ্রিনিজের পর দ্বিতীয় ক্যারিবিয়ান হিসেবে এই তালিকায় নাম লেখালেন মায়ার্স। ১৯৮৪ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪২ বলে ২১৪ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলে উইন্ডিজকে জয় এনে দিয়েছিলেন গ্রিনিজ।
এছাড়া দ্বিতীয় ক্যারিবিয়ান হিসেবে লরেন্স রো’র পরে অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি পেলেন মায়ার্স। টেস্ট অভিষেকে স্বতন্ত্র সর্বোচ্চ রানে সাবেক শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন কুরুপ্পুকে টপকে পঞ্চম স্থানে ওঠে এসেছেন তিনি। ১৯৮৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকে দ্বিশতকের দেখা পেয়েছিলেন কুরুপ্পু। এই তালিকায় ২৮৭ রান নিয়ে শীর্ষে আছেন টিপ ফস্টার।
উইন্ডিজকে ঐতিহাসিক জয় এনে দেওয়ার পাশাপাশি দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ম্যাচ সেরার পুরস্কারও ওঠেছে মায়ার্সের হাতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২১
ইউবি