চট্টগ্রাম: চতুর্ভূজ আকৃতির একটি কাঠের ফ্রেম। তাতে টানটান করে আটকানো রয়েছে কাপড়।
এভাবেই জারদৌসি-কারচুপির নজরকাড়া কাজে তৈরি হচ্ছে শাড়ি, লেহেঙ্গা, সেলোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবি, বোরকাসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক।
‘বুটিক’ কারখানায় তৈরি এসব পোশাক বিপণি বিতান হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে ক্রেতাদের কাছে। আর ঈদের পোশাকে আভিজাত্য-ঐতিহ্যের প্রকাশ পায় জারদৌসি ও কারচুপির কাজে। আভিজাত্যের পাশাপাশি নিজেকে কিছুটা দৃষ্টিনন্দনভাবে উপস্থাপন করার জন্য অনেকেরই পছন্দের শীর্ষে থাকে জারদৌসি ও কারচুপি।
ক্রেতাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে জারদৌসি ও কারচুপির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রামের বিহারী পল্লীর কারিগররা।
ঝাউতলা বিহারী পল্লী ঘুরে দেখা যায়, পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে দিনরাত সমান তালে কাজ করছেন তারা। দম ফেলা ফুরসত নেই এতটুকু। নলি, পাল মতি, জরি, রেশমি সুতা, কাঠা পাথর, গ্লাস, ফেবিক্স গ্লু দিয়ে নকশা ভরা কাজ করছেন। তুলে আনছেন ঐতিহ্য। আর কাজে আছে বৈচিত্র্যের ছাপ। নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় থ্রিপিস, শাড়ি, ফতুয়া ও পাঞ্জাবিতে ঝলমলে নকশায় করছেন জারদৌসি ও কারচুপির কাজ।
কারিগররা জানান, রমজান শুরু হওয়ার আগ থেকেই ব্যস্ততা বেড়েছে। প্রতিটি কারখানায় ১০-১২ জন কারিগর কাজ করলেও ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত কারিগর নেওয়া হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে শুরু করে সেহেরির আগ পর্যন্ত কাজ চলছে।
ঝাউতলা স্টেশন রোড এলাকার বুটিকস হাউস এর স্বত্বাধিকারী মো. খালিদ জাফর পাপ্পু বাংলানিউজকে বলেন, এরই মধ্যে ৭০-৮০ হাজার টাকার কাজের অর্ডার পেয়েছি। আরও অর্ডার আসছে। মেয়েদের সেলোয়ার কামিজ আর লেহেঙ্গার অর্ডারই বেশি বলে জানান তিনি।
কাজের ব্যস্ততার কথা জানিয়ে পাপ্পু বলেন, হাতের কাজ গুছিয়ে আনতেই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। ঈদের আগেই এসব কাজ গ্রাহকদের বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ভোর পর্যন্ত কাজ করছেন কর্মীরা। অন্য সময়ে পাঁচজন লোক দিয়ে কাজ চললেও ঈদের কাজের চাপ সামলাতে আরো পাঁচজন বাড়তি লোক নিয়োগ দিতে হয়েছে।
জারদৌসি কারচুপির কারিগর ওয়াহিদ জানান, ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি নেওয়া হয়। কম দামি কাজগুলো তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। বেশি দামি কাজগুলো জটিল বলে ডেলিভারি দিতে সময় লাগে।
খলিফা পট্টিতে মেঝেতে বসে কাঠের ফ্রেমে টানটান করে রাখা কাপড়ে কাচের টুকরো লাগাচ্ছেন রাশেদ। তিনি বাংলানিউজকে জানান, ঈদকে সামনে রেখে থ্রিপিসের অর্ডারই বেশি। প্রতিটি থ্রিপিসের জন্য মজুরি নেন তিন হাজার টাকা করে। এছাড়া শাড়ি ১০ হাজার টাকা, লেহেঙ্গা ২০ হাজার টাকা। সবচেয়ে কম মজুরীতে পাঞ্জাবির কাজ করেন ৫০০ টাকায়। ডিজাইন ভেদে এসব কাজ করতে ১-১০ দিন সময় লাগে বলে জানান তিনি।
কারিগর শুভ বলেন, আমরা সব ধরনের পোশাকের কাজ করি। রঙিন সুতো, ধাতব নল, বহুমাত্রিক মোটিভ, পাথর, পুঁতি, মতি, প্লাস্টিকের পুঁতি, কদু পুঁতি ইত্যাদি ব্যবহার করে জারদৌসি ও কারচুপির কাজ করে থাকি। প্রায় ৯ বছর ধরে বিহারি কলোনিতে জারদৌসি ও কারচুপির কাজ করছি। ঈদের কাজের চাপে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও এখন কাজ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
এমআর/টিসি