চট্টগ্রাম: রাত ১১টা ২৫। ফাইভ স্টারের মেঝেতে বসে বাচ্চাদের ফ্রকে পিন মারছিলেন রোকসানা বেগম।
তিনি জানান, আমরা গরিব শ্রমিক। পেটের দায়ে কাজ করছি। নতুন পোশাক বানাচ্ছি কিন্তু নিজের সন্তানের জন্য কিনতে পারিনি।
বিসমিল্লাহ ফ্যাশনে কাজ করছেন শেলী বেগম ও পিংকী বেগম। ঘাগড়া তৈরি করছেন তারা। দুপুর থেকে সেহেরি পর্যন্ত কাজ করছি। প্রতি পিসে ৭৫ টাকা মজুরি পান।
সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কবির আহমদ সওদাগর বিল্ডিং, দারোগা বিল্ডিং, ডাক্তার বিল্ডিং, আহমেদ শরিফ বিল্ডিং, শফি ম্যানশন, আক্তারুজ্জামান বিল্ডিং, চৌধুরী ম্যানশন, বায়তুন নুর জামে মসজিদ প্লাজা, দোস্ত মোহাম্মদ বিল্ডিং, নূর মোহাম্মদ বিল্ডিংসহ আশপাশের বাসা বাড়িতে শোরুম ও কারখানা আছে। সুলভ মূল্যে ২৪ ঘণ্টা চট্টগ্রাম বিভাগের পাইকাররা পণ্য নিয়ে যাচ্ছে।
পুরোনো পা চালিত মেশিন নেই এখানে। আধুনিক জ্যাক, ম্যাক, জুকি মেশিনে কাজ করছে কারিগররা।
জ্যাকি অটো মেশিনে কাজ করছেন মোহাম্মদ জাকির (৩৩)। এক ছেলে এক মেয়ে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বাড়ি। আট বছর খলিফাপট্টিতে কাজ করছেন।
তিনি জানান, রমজানে বেলা একটা থেকে রাত চারটা পর্যন্ত কাজ করছি। সেহেরি খেয়ে ঘুমাব। এর মধ্যে ২০টি জামা তৈরি করবো। কাজের চাপে তারিখ, বার কিছুই মনে থাকে না।
বন্ধু গার্মেন্টসের মালিক শামসুদ্দিন ফরহাদ জানান, তিন শতাধিক কারখানা আছে। একেক কারখানায় আট দশ জন শ্রমিক। গাউন, ফ্রক, বাবাই সুট, টাওজার, ত্রি কোয়ার্টার, ত্রিপিস, সুতির ফ্রক, পার্টির ফ্রক তৈরি করি আমরা। সেহেরি পর্যন্ত কাজ চলে। এ বছর মোটামুটি ভালো কাজ হচ্ছে।
মৌমিতা গার্মেন্টসের পরিচালক মীর হোসেন রবেল, অল্প লাভে পাইকারি বিক্রি করি। ১০০ টাকায় বাচ্চাদের সুতির ফ্রক বিক্রি করি। বেশ দামের মধ্যে সারারা, নেহারা ত্রিপিস ১২০০-২৫০০ টাকা বিক্রি করছি। দেশি বিদেশি কাপড়ে বিভিন্ন ডিজাইনের কাপড় তৈরি করি। ছয় পিসে এক বান্ডিল।
কাপড়ের দাম বেশি, সুতা, মেশিনসহ উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হচ্ছে। বাকিতে লেনদেন করায় পুঁজি আটকে থাকে।
রিয়াজউদ্দিন বাজার, সিডিএ মার্কেট, টেরিবাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা দোকানে সরবরাহ করি।
খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির কার্যালয়ে রাত ১০টায় কাজ করছিলেন অফিস সহকারী আবদুল করিম। তিনি জানান, সমিতির সদস্য ৩২৫ জন। ১০টি বিপণিকেন্দ্রে দোকান, কারখানা আছে প্রায় ৫০০। এ পর্যন্ত সবাই শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছেন।
মাসিক ভিত্তিতে কারিগররা আট থেকে ১৫ হাজার বেতন পান। ইফতার মালিক করান। সাগরেদরা (নতুন কাজ শিখছে এমন) ইফতার, সেহেরি, জামা কাপড়, থাকা সব মহাজন বা মালিক দেবে। সাগরেদ বাড়ি যাওয়ার সময় পাঁচ হাজার টাকা পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি