চট্টগ্রাম: এখনও ফিকে হয়ে যায়নি বাংলা নববর্ষের আনন্দ। তাই বিউ ফুল আর নিমপাতায় সেজেছে চট্টগ্রামের সনাতন সম্প্রদায় ও শহরে বসবাসরত পার্বত্যাঞ্চলের বাসিন্দাদের ঘর।
নবযুগ পঞ্জিকা মতে, বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) ফুলবিউ, শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) মুলবিউ এবং শনিবার (১৫ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেবেন সনাতনীরা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের রীতি অনুযায়ী, ফুল বিউতে ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করে দরজায় ঝোলানো হয় ফুলের মালা আর নিমপাতা। নিমপাতা রোগবালাই তাড়াবে, আর ফুল জানাবে-স্বাগতম। চৈত্র সংক্রান্তি বা মূল বিউতে ভাতের সঙ্গে ১৮টি বা আরো বেশি সবজি দিয়ে রান্না করা পাঁচন খাওয়া হয় ঘরে ঘরে। পহেলা বৈশাখে ভোর হতেই স্নান সেরে নতুন কাপড় পরিধান করে ব্যবসায়ী ও দোকানিরা ব্যস্ত থাকেন হালখাতা খোলার কাজে। লক্ষ্মী ও গণেশের পূজার্চনা শেষে হলুদ আর সিঁদুরমাখা মুদ্রার ছাপ দেওয়া হয় লাল শালুতে মুড়িয়ে রাখা নতুন হালখাতার প্রথম পৃষ্ঠায়। ‘ওঁ শ্রী গণেশায় নমঃ’ কিংবা স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা এই হিসেবের খাতাটাই নতুন বছরের আয় ও সমৃদ্ধির প্রতিভূ। ফুল, কলাগাছ, আম্রপল্লব দেওয়া মঙ্গল ঘট দিয়ে সাজানো দোকানগুলোয় পরিচিত ও বাঁধা গ্রাহকদের জন্য মিষ্টিমুখের আয়োজনও চলে এদিন।
নগরের হাজারী লেইন ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে সীমিত পরিসরে হালখাতা খোলার অনুষ্ঠান করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও অনেক প্রতিষ্ঠান এখন কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে রাখছে তাদের যাবতীয় হিসাব। পাশাপাশি বাইন্ডিং হাউসগুলোতে ক্রেতাদের তেমন দেখা নেই।
এদিকে নগরের বকশিরহাটে নাড়ুর দোকানগুলোতে চলছে বিকিকিনি। বাকলিয়া ও বলুয়ার দিঘীর পাড় এলাকার কারখানায় তৈরি মোয়া-নাড়ু এখানকার দোকানগুলোতে মজুদ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে- খইয়ের নাড়ু, নারকেলের নাড়ু, জিরার নাড়ু, বরই নাড়ু, মুড়ি ও চিড়ার মোয়া, গুড় মেশানো খই, মুড়ি, চিড়া, তিলের নাড়ু, ঘস্যার টপি, বাদামের টফি, চানাচুর, মটর ভাজা, ছাতু (খইয়ের গুঁড়ো), বাতাসা ও আটকরই। আটকরইয়ে আছে মুড়ি, বুট, বাদাম, মিষ্টি জিরা, মিষ্টি কুমড়োর বিচি, শিম বিচি, মুগ বা খেসারি ডাল ও ভুট্টা। একসময় গ্রামে ঢেঁকিতে বানানো এসব নাড়ু এখন রেডিমেইড পাচ্ছেন নগরবাসী।
এছাড়া নগরের হাজারী লেইন, বকশিরহাট, হেমসেন লেইন সহ কাঁচাবাজারগুলোতে নিমপাতা ও বিউ ফুলের সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে পাঁচন রান্নার উপকরণ। নিমপাতা দুই আঁটি ১০-১৫ টাকা এবং বিউ ফুল প্রতিকেজি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
স্থানীয়ভাবে পরিচিত কাট্টইস, কাঁচা কাঁঠাল, তারা, ডুমুর, পুঁতি বেগুন, কলা গাছের অলি, গিমাশাক, চালকুমড়া, কাঁচা আম, কাঁচা কলা, সজনে ডাটা, মূলা, পটল, গাজর, লাউ, তিত করলা, টমেটো, কাঁকরোল, বরবটি, ঢেঁড়স, কচুর ছড়া, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, শালবন, শসা, আলু, কচুর লতিসহ শাক বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা ও তদুর্ধ্ব দামে। পুষ্টিগুণসম্পন্ন এই পাঁচন খেলে নানান রোগ সেরে যায় বলে মত দিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৩
এসি/টিসি