ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘ধাক্কা খায়নি, তাই আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষজন আসেনি’ 

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (টেকনাফ থেকে) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৯ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
‘ধাক্কা খায়নি, তাই আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষজন আসেনি’  এখনো ফাঁকা টেকনাফের কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র। ছবি: উজ্জ্বল ধর

কক্সবাজার: শনিবার (১৩ মে) দিবাগত রাত সোয়া একটা, টেকনাফ পৌরসভার মহেষ খালীয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকজন যুবক লুডু খেলছিল। সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়।

তাদের একজন বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী মো.বেলাল।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, টেকনাফ পৌরসভার মানুষ ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এখনো ধাক্কা খায়নি।

যার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ আসেনি। গত শুক্রবার থেকে আমি বিদ্যালয়ে অবস্থা করতেছি। আমার পরিবারের সদস্যদের পাকা বাড়িতে নিয়ে রেখেছি। রোববার সকালে আশ্রকেন্দ্রে নিয়ে আসব।

শনিবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, টেকনাফ পৌরসভার বায়তুশফর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্ররাসার বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র, টেকনাফ মডেল হাইস্কুলে ও কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রেও ঠাঁয় নেইনি কেউ।  

বায়তুশফর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্ররাসার বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র ভবনে মাদরাসার একাধিক শিক্ষার্থী ঘুমিয়ে আছে। সেখানের আশ্রয়কেন্দ্রও একেবারে ফাঁকা। কোনো মানুষ-জনের দেখা মেলেনি।

এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল হাইস্কুল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তারেক বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়ে সারাদিন আমাদের টেকনাফে মাইকিং করা হয়েছে। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষজন আসেনি। গরু-ছাগল থাকার কারণে অনেকেই আসতে চাচ্ছে না। আশাকরি ভোরে আশ্রয়কেন্দ্রে আসবে মানুষ।  

বায়তুশফর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্ররাসার বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র ভবনে সামনে বয়োবৃদ্ধ আব্দুল করিমের সঙ্গে কথা হয়।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে টেকনাফ পৌরসভা এলাকায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সেই সময় কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু ৯৪ সালে ঘূর্ণিঝড়ে টেকনাফে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এখন সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়ে মাইকিং করেছে প্রশাসন। দশ নম্বর বিপদ সংকেত চলছে নাকি? কিন্তু এরপরও আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ জন আসেনি। বাড়িতে গরু-ছাগল আছে। বাতাসের গতি ও বৃষ্টির অবস্থা বুঝে আশ্রয়কেন্দ্রে যাব।

আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে আড্ডা দেওয়া সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়ে টেনশনে আছি। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে এখন যাচ্ছি না। রোববার সকালে চিন্তা করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসব।

রাত দেড়টার দিকে মহেষ খালীয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে আসার পথে টেকনাফ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে রাতে দায়িত্বে থাকা রিয়াজের সঙ্গে কথা হয়।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, টেকনাফ পৌরসভারসহ বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হয়েছে। আমাদের স্টেশনের দুইটি ইউনিট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলা প্রস্তুত রয়েছে। সন্ধ্যায় শাহপরীর দ্বীপ আশ্রয়কেন্দ্রের পানি বিতরণ করা হয়েছে।  

কলাতলী হোটেল মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বাংলানিউজকে বলেন, কক্সবাজারে দুর্যোগপূর্ণ সময়ের কথা বিবেচনা করে শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। এতে করে অন্তত অর্ধলাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। শনিবার রাতে শতশত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগে ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে বাঁচতে টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপের সকল হোটেল মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৯টি মেডিকেল টিম। দেড় শত মেট্টিক টন চাল, ৬.৯ মেট্রিক টন শুকনো খাবার, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন, ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ১৯ হাজার নগদ টাকা মজুদ করা হয়েছে। একই সাথে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ কক্সবাজার থেকে ৪৫০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ওঠে যাচ্ছে ২৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত। বর্তমানে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার গতিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ কিলোমিটার। রোববার  দুপুরের দিকে উপকূলে আঘাত হানার সময় সময় গতিবেগ থাকবে ২১০ কিলোমিটারের মতো।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, মোখা ১৪ মে  সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। মোখার ভয়াবহতা বিবেচনায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া মোংলা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ দশ  নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩ 
এমআই/টিসি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।