চট্টগ্রাম: মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব ও আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ার বলেছেন, স্বাধীনতার ৫২ বছরে বাংলাদেশে জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা, মোবাইল মানি ট্রান্সফার, বিমানের টিকিট, ই-টেন্ডারিংসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বহুলাংশে বেড়েছে। এখন আমাদের গন্তব্য স্মার্ট বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের পটিয়ায় 'রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে স্মার্ট নাগরিক, সমাজ, অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে স্মার্ট হওয়ার জন্য, একটি স্মার্ট সরকার প্রতিষ্ঠাই প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত। একটি স্মার্ট সরকারের লক্ষ্য হলো নিরবচ্ছিন্ন আন্তঃএজেন্সি সমন্বয় অর্জন করা এবং পরিষেবা ও প্রক্রিয়াগুলোর ডিজিটাইলেজেশনের মাধ্যমে নাগরিকদের ওয়ান-স্টপ সমাধান দেওয়া। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা-বিভাগের মধ্যে যোগাযোগ কম। লালফিতা কাটা এবং দক্ষতা উন্নত করতে, প্রাসঙ্গিক মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে রিয়েল-টাইম ডেটা এবং তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। একটি কেন্দ্রীভূত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে সব সংস্থা ন্যূনতম ব্যাঘাতসহ উন্নয়নকাজ শুরু এবং সম্পন্ন করতে টেরিটরি ম্যাপ এবং পরিকল্পনা দেখতে পারে। বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে ই-গভর্নমেন্ট মাস্টারপ্ল্যানের মতো উদ্যোগ নিয়ে স্মার্ট হওয়ার অগ্রযাত্রায় শামিল হতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। আড়াই হাজারেরও বেশি সরকারি পরিষেবা এখন অনলাইনে রয়েছে। বাংলাদেশ তার ডিজিটাল যাত্রায় দ্রুত অগ্রসর হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপমতে, বাংলাদেশে এখন অর্ধেকের বেশি পরিবারে অন্তত একটি করে স্মার্টফোন আছে। ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট ব্যবহার, প্রাণবন্ত প্রযুক্তি খাত, ব্যাপকহারে স্মার্টফোন ব্যবহার আমরা এরই মধ্যে একটি সত্যিকারের ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত হয়েছি। আমাদের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে এবং উন্নত অর্থনীতিতে প্রবেশ করতে এখন স্মার্ট বাংলাদেশ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রযুক্তিকে আরও কৌশলগতভাবে এবং সামগ্রিকভাবে ব্যবহার করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। স্মার্ট গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা করে, সংযোগের ফলকে গণতন্ত্রীকরণ এবং পরবর্তী প্রজন্মের উদ্ভাবন প্রকাশ করে ২০৪১ সালের আগে আমাদের কাছে শুধু ডিজিটাল নয়, সত্যিকারের স্মার্ট হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি সবার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল ভবিষ্যতের দিকে সংস্কার, ভাবনা এবং অংশীদারিত্বকে প্রজ্জ্বলিত করার একটি দৃষ্টিভঙ্গি হোক।
এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে চট্টগ্রামের পটিয়ার দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন করা নিয়ে কবির বিন আনোয়ার বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটিয়ার মানুষের মনে কথা বুঝতে পেরে এবার প্রার্থী পরিবর্তন করেছেন। এবার আপনাদের দায়িত্ব মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে বিজয়ী করা। এবার পরীক্ষা দেওয়ার পালা। এখন আপনাদেরই প্রমাণ করতে হবে নৌকা বিজয়ী হবে নাকি দূর্বৃত্তায়ন বিজয়ী হবে। নৌকা বিজয়ী হবে নাকি ইয়াবা ব্যবসায়ী বিজয়ী হবে। নৌকা বিজয়ী হবে নাকি সন্ত্রাস মাদক বিজয়ী হবে। এজন্য দলের সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। যারা নৌকা প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে তাদেরও নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। সবাইকে নিয়ে সম্মিলিত ভাবে আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে।
নৌকা প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সম্পর্কে কবির বিন আনোয়ার বলেন, তার রয়েছে রাজনৈতিক ঐতিহ্য, তার রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, তার মাথার ওপর রয়েছে পৃথিবীর সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত। তার তো হারানোর কোনো ভয় নেই। তাহলে আমরা পরাজিত হবো কেন? সন্ত্রাস? আওয়ামী লীগ কখনো সন্ত্রাসের কাছে মথানত করে না। আমরা ছাত্রজীবনে স্লোগান দিয়েছিলাম ৭১ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। এবার পটিয়ায় প্রয়োজনে ৭১ এর হাতিয়ার আরেক বার গর্জে উঠবে। এবার সময় এসেছে পটিয়া থেকে সন্ত্রাস অত্যাচারী দুবৃর্ত্ত, মাটি বালু খেকো ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সমূলে বিতাড়িত করার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস পটিয়ার মানুষ তা করে দেখাতে পারবে। পটিয়ার দিকে আমাদের তীক্ষ্ণ নজর থাকবে। এবার পটিয়ায় আমাদের আদর্শিক বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। এবার সময় এসেছে গত ১৫ বছরের পটিয়ার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সময়োচিত জবাব দিয়ে পটিয়ার মানুষকে মুক্তি দেওয়ার।
বিএনপি জামায়াত সম্পর্কে কবির বিন আনোয়ার বলেন, আজ সমগ্র জাতি একটা যুগসন্ধিক্ষণে। একদিকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বিএনপি জামায়াত জোট তারা নির্বাচনে আসে না। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে। বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে পড়ে না। কারণ তাদের কোনো নেতৃত্ব নেই। যিনি নেতৃত্ব দেবেন তিনি জেলহাজতে। যারা নিজের পিতার নামে এতিমখানার টাকা মেরে খায় এরকম নেতৃত্ব। বিদেশে বসে দেশের ক্ষতি করার জন্য টাকা দিয়ে ক্রমাগত চক্রান্ত করে যাচ্ছে। তাদের না আছে গঠনতন্ত্র, না আছে আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র। তাদের কোনো লক্ষ্য নেই, আসলেই বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল না। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগ বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, বঙ্গবন্ধু বিরোধী, অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী লোকের একটা প্লাটফর্ম।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে পটিয়া কমিউনিটি সেন্টারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোট প্রার্থনা কর্মী (ক্যাম্পেইনার) প্রশিক্ষণ ও কর্মী সভা পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়। পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক আজিজুল হক মানিকের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাশ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, মেয়র আইয়ুব বাবুল, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী মাহবুবুর রহমান, মেজর রবিউল ইসলাম, ট্রেইনার অধ্যাপক কামরুল হাসান, টিটু চাকমা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন ফরিদ, মোহাম্মদ ছৈয়দ চেয়ারম্যান, অভিজিৎ বড়ুয়া মানু, বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, মর্তুজা কামাল মুন্সি, ডি এম জমির উদ্দিন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
এআর/টিসি