ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ জুলাই ২০২৪, ২৪ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছার গল্প শোনালেন বাবর আলী

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৮ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৪
এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছার গল্প শোনালেন বাবর আলী এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছার গল্প শোনালেন বাবর আলী।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: এভারেস্টজয়ী ডা. বাবর আলী বলেছেন, হালদা পাড় থেকে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছানো মোটেও সহজ ছিল না। আমার দেশের পাহাড় বান্দরবান থেকেই ক্লাইম্বিং শুরু করেছিলাম।

মাউন্টেইন ক্লাইম্বিংকে মানুষ একটা স্পোর্টস হিসেবে না বরং জীবনাদর্শ হিসেবে দেখে থাকেন। যখন আমি কোনো পাহাড়ে উঠতে যাই তখন এটাকে শুধু একটি যাত্রা নয়, তীর্থযাত্রা মনে করি।
যখন পাহাড়ে উঠি তখন নিজেকে একদম ছোট্ট মনে হয়। এই জিনিসটি আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। সবাইকে এভারেস্ট জয় করতে হবে এমন কোনো কথা নেই, প্রত্যেকের জীবনেই অনেক এভারেস্ট রয়েছে সেটা জয় করুন।

চিটাগং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটির (সিইউআরএইচএস) উদ্যোগে আয়োজিত 'টেডএক্স চিটাগাং ইউনিভার্সিটি' অনুষ্ঠানে এভারেস্ট জয়ের গল্প শোনান ডা. বাবর আলী।

মঙ্গলবার (০৪ জুন) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চবির মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে  'টেডএক্স চিটাগাং ইউনিভার্সিটি'।

এ সময় বিজ্ঞান, গবেষণা, পরিবেশ, অটিজম, বাকস্বাধীনতা, সঙ্গীত, সাহিত্য, পর্বত আরোহন এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন ৮ জন আমন্ত্রিত অতিথি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, বিশেষ অতিথি চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে, মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম, আবুল খায়ের গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার এএনএম ওয়াজেদ আলী।  

বক্তব্য দেন সিইউআরএইচএসের মডারেটর ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান, সিইউআরএইচএসের উপদেষ্টা ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ড. অধ্যাপক অলক পাল।  

নুসরাত আফরিন ও সিলভিয়া নাজনীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বাধীনতা পদক বিজয়ী বিজ্ঞানী অধ্যাপক হাসিনা খান, বিতার্কিক ও উপস্থাপক ডা. আব্দুন নুর তুষার, গীতিকার আসিফ ইকবাল, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বাসনা মুহুরি, চবি অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরীয়া, এভারেস্টজয়ী ডা. বাবর আলী এবং মিস বাংলাদেশ ২০০৭ জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া।  

উপাচার্য বলেন, কিছু মানুষ এটা চিন্তা করে যে বিশ্ববিদ্যালয় একটা প্রতিষ্ঠান মাত্র। কিন্তু আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় হলো নতুন কিছু উদ্ভাবন করার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নত করতে যতকিছু করার দরকার আমি তা করব। আমি চাই আমার বিশ্ববিদ্যালয় হোক উদ্ভাবনী শক্তি সম্পন্ন। আমার শিক্ষার্থীদের নব আবিষ্কারকে আমি সবসময় সাধুবাদ জানাই।  

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নতুন আইডিয়া ও আবিষ্কারকে সবার সামনে তুলে ধরেছি। আমি সবসময় নতুন আইডিয়া জেনারেটরদের প্রশংসা করি, তাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে সবসময় প্রস্তুত আছি।  

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ও পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বলেন, পাট বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক। এটি আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য যা আমাদের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস। পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নতমানের পাট উৎপাদন হয় বাংলাদেশ থেকে। এটি বাংলাদেশের পরিবেশের সঙ্গে মানানসই একটি উপাদান। আজ থেকে ৩০ বছর আগে আমরা যখন শুরু করি তখন জানতামই না কীভাবে এর জিন বের করতে হয়। পাটের জিনোম আবিষ্কার আমাদের এতোটা সাহস জুগিয়েছে যার মাধ্যমে ভবিষ্যতেও নতুন নতুন আবিষ্কার করতে আগ্রহ জোগাবে।  

বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত আনিসুল হক বলেন, সাধারণত মানুষের পাঁচটি আঙুল হয়ে থাকে, কিন্তু লেখক, সাহিত্যিকদের ছয়টি আঙুল। ষষ্ঠ আঙুলটি হলো কলম। খড়ির ঘরে আমার জন্ম। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসে দেখলাম এখানে সাহিত্য নেই। কবিতা ছাপানো সহজ করার জন্য আমি সাংবাদিকতা শুরু করি। মানুষ অনেক কারণে লেখালেখি করে থাকে। ইগোর কারণে লিখে থাকে। আমি নারীর চিত্ত জয় করার জন্য কবিতা লিখতাম। সৌন্দর্যের জন্য মানুষ লিখে।  ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেও আমি লেখালিখি করি। রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে অনেকে লিখে থাকেন। আমি এই চার কারণে লিখি।  

তিনি বলেন, একটি জাতি এগিয়ে যাওয়ার জন্য স্বপ্নের প্রয়োজনীয়তা অনেক। স্বপ্ন ছাড়া কেউ উন্নতি করতে পারে না। বাংলাদেশের লেখক সবাই মিলে বিশ্বের মধ্যে চলমান বৈষম্য তুলে ধরে সাম্যের কথা বলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে লিখে যেতে হবে।

ডা. বাসনা মুহুরি নিজের ছেলের উদাহরণ টেনে দেশের অটিজম শিশুদের করুণ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি দেশ, সমাজ ও পরিবার চাই যেখানে প্রত্যেকটি মানুষ অধিকার নিয়ে বাঁচবে। একসময় আমার ছেলের জন্য বিভিন্ন ভাবে অপমানিত হতে হতো। কিন্তু এখন মানুষ অনেকটা সচেতন হয়ে গেছে। অটিস্টিক শিশুদের করুণা না করে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র নদী হালদা, যেটা বাংলাদেশে শুরু হয়ে বাংলাদেশেই শেষ হয়েছে। পৃথিবীর একমাত্র নদী যেটা থেকে কার্প মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। হালদা নদী থেকে বছরে কোটি টাকা আয় হচ্ছে। এটা চট্টগ্রামের লাইফ লাইন। প্রতিদিন হালদা নদী থেকে ১৮ লাখ লিটার পানি সংগ্রহ করা হয়। আমি হালদা পাড়ের সন্তান। আমি যখন ৮ম শ্রেণিতে পড়ি আমার স্কুল টিচার আমাকে একটি কবিতা লিখতে বলেছিলেন। আমি লিখেছিলাম হালদা নদী কবিতাটি। আমরা দূষণমুক্ত নদীর উদাহরণ দিতে লন্ডনের টেমস নদীর উদাহরণ দিই। কিন্তু আমরা অতি শিগগিরই হালদা নদীকে উদাহরণ দিতে পারবো দূষণমুক্ত নদী হিসেবে। 'নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। ' শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা নদী নিয়ে সচেতনতা তৈরি করি। হালদা নদী নিয়ে আমাদের সফলতা হলো বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।  

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২৪
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।