চট্টগ্রাম: সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণকারী রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুধু অ্যাক্সপান্ডেন্ট ডেঙ্গু সিনড্রোমের কারণে মারা গেছেন ৪১ শতাংশ রোগী। যা উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মৃত্যু হওয়া রোগীদের মধ্যে ১৬ জন বা ৪১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ অ্যাক্সপান্ডেন্ট ডেঙ্গু সিনড্রোমে, ১২ জন বা ৩০ দশমিক ৭৬ শতাংশ ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে এবং বাকি ১১ জন বা ২৮ দশমিক ২০ শতাংশ ডেঙ্গু হোমোরেজিক ফিভার সহ বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে অ্যাক্সপান্ডেন্ট সিনড্রোমে মৃত্যু হওয়া ১৬ জনের মধ্যে ১১ জনই নারী, ৫ জন পুরুষ।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুর চারটি ধরন রয়েছে। যারা আগে একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এবং দ্বিতীয়বার এই চারটি ধরনের যেকোনও একটি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি।
অ্যাক্সপান্ডেন্ট সিনড্রোমে নারীরা বেশি আক্রান্ত হন, কারণ তারা দেরিতে চিকিৎসা নিতে যান। এ ছাড়া বাংলাদেশের নারীদের দীর্ঘদিনের সমস্যা পুষ্টিহীনতাও রয়েছে। সঠিক সময়ে হাসপাতালে না যাওয়ার কারণেই মৃত্যু হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হামিদুল্লাহ মেহেদি বাংলানিউজকে জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত যেকোনও রোগীর বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। শক সিনড্রোম মূলত পালস, রক্তচাপ কমে যাওয়া। এ জটিলতা দেখা দিলে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত চলাচল কমে যায়, বিভিন্ন অঙ্গের কোষে যে অক্সিজেন দরকার সেই অক্সিজেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন: ব্রেন, হার্ট, কিডনি- এগুলোতে রক্ত ও অক্সিজেন পৌঁছাতে না পেরে অঙ্গগুলো আস্তে আস্তে কাজ করা বন্ধ হয়ে যেতে থাকে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) এর মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধানে গবেষণা জরুরি।
তিনি বলেন, বর্তমানে অ্যাক্সপান্ডেন্ট সিনড্রোম ডেঙ্গুর আরেকটি সমস্যা। ডেঙ্গুতে অনেক সময় মারাত্মক কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে। এসব জটিলতায় সাধারণত লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ইত্যাদি অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। এসব অঙ্গ যখন আক্রান্ত হয় তখন অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এ জটিলতাগুলোকে ‘অ্যাক্সপান্ডেন্ট ডেঙ্গু সিনড্রোম’ বলছি। থ্যালাসেমিয়ার রোগীরাও এ সমস্যায় পড়ছে। অ্যাক্সপান্ডেন্ট ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার বাড়ছে।
কেন অ্যাক্সপান্ডেন্ট ডেঙ্গু সিনড্রোমে রোগীর মৃত্যু বেশি হচ্ছে এমন প্রশ্নে এই দুই চিকিৎসক বলছেন, ডেঙ্গু হওয়ার পর হাসপাতালে দেরিতে আসা, ডেঙ্গুর পাশাপাশি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকার কারণে মৃত্যুঝুঁকি বেশি দেখা যায়। তাছাড়া আগে কোনো একটি ডেঙ্গু সেরোটাইপ বা ধরনে আক্রান্ত হলে এবং নতুন করে আরেকটি ধরন বিশেষ করে সেরোটাইপ-২ এ আক্রান্ত হলে অ্যাক্সপান্ডেন্ট সিনড্রোমের ঝুঁকি বেশি।
চট্টগ্রামে গত ১১ মাসে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। এর মধ্যে চলতি নভেম্বরের ১৯ তারিখ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৪ জন। এছাড়া এ বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ জনের মৃত্যু হয় গত সেপ্টেম্বরে। অক্টোবরে মারা গেছেন ৯ জন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২ জন, মার্চ, জুলাই ও আগস্টে মারা গেছেন একজন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৪
এমআর/টিসি