চট্টগ্রাম: নগরের এনায়েত বাজার এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন শিবু দাশ। দীর্ঘদিন ছিলেন দেশের বাইরে।
একই অবস্থা ২০ বছরের তরুণী সানজিদা খানমের। স্থায়ী ঠিকানা সাতকানিয়ায় হলেও চট্টগ্রাম নগরেই পড়া-লেখা, বেড়ে ওঠা। তাই ভোটারও হতে চান এখানেই। তিনিও এসেছেন নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে। কিন্তু ভোটার হতে এসে ভোগান্তির শেষ নেই।
শিবু দাশের অভিযোগ, গতবছর বিদেশ থেকে আসার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নির্বাচন কার্যালয়ে এসেছি। কিন্তু তাদের ভাষ্য, বর্তমান ঠিকানায় ভোটার হওয়া যাবে না। স্থায়ী ঠিকানায় ভোটার হতে হবে। বেশ কয়েকদিন ঘোরাঘুরির পরও সমাধান মিলেনি।
শিবু দাশ ও সানজিদার মতো প্রায় প্রতিদিনই এমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ভোটার হতে আসা সাধারণ নাগরিকদের। সমস্যার সমাধান পেতে এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ধরণা দিয়েও মিলেনা সমাধান। সমস্যা জানানোর মতো নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় দিনের পর দিন ঘুরতে হয় নির্বাচন কমিশনের বারান্দায়। এমনকি, ভোটার হতে আবেদন করলেও ছবি তোলা বা এনআইডি কার্ড পেতে পোহাতে হয় মরণ যন্ত্রণা।
গ্রাহকদের অভিযোগ, সমাধানযোগ্য একটি বিষয় সমাধান না করে অন্য অফিসে কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে গ্রাহক প্রতিবাদ করলে ফাইল আর সামনের দিকে আগায় না।
সরজমিন দেখা গেছে, শুধু আঞ্চলিক কার্যালয় নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ভোগান্তি আরও বেশি। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৬ উপজেলা পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়ায় ভোটার হতে গিয়ে শত বাধার মুখে ভুক্তভোগীরা।
কার্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির পর থেকে নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে চায় না দায়িত্বরতরা। এ নিয়ে দুদকের একাধিক মামলা থাকায় এবং কেলেঙ্কারির ভয়ে কাজ এড়িয়ে চলতে চান অনেকে। এমনকি ঝুঁকি এড়াতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে এড়িয়ে যান। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়ছে।
ভোটার হতে ভোগান্তির বিষয়টি সাধারণ মানুষের আধুনিক প্রযুক্তির প্রতি অজ্ঞতা বলে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বচান কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অনলাইনে আবেদনের বিষয়ে সাধারণ মানুষ এখনও পারদর্শী নয়। তারা আবেদন করার পর আমরা সেটা গ্রহণ করি। তাদের মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু তারা সময়মতো পরবর্তী প্রক্রিয়া শেষ করতে আসে না। তাই আবেদন প্রক্রিয়াধীন থেকে যায়। তাছাড়া তারা যে আবেদন করেছে, তার স্বপক্ষে বেশকিছু কাগজপত্র দরকার হয়। যদি তারা তা না দেয়, আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবো কি করে?
এদিকে বুধবার (২ মার্চ) সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও ভোটার দিবস উদযাপন করেছে জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, রক্ষা করবো ভোটাধিকার’। সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে এ উপলক্ষে বের করা হয় র্যা লি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার আশফাক উদ্দিন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২২
এমআর/এসি/টিসি