চট্টগ্রাম: করোনা কারণে গত দুই রমজানে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের একসঙ্গে ইফতার আয়োজন বন্ধ থাকার পর এবছর আবার চালু হয়েছে রোজাদারদের ইফতার। মসজিদের খোলা বারান্দায় একাধিক সারিতে রমজানের প্রথমদিন থেকে কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রত্যেক রোজায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও বিভিন্ন মসজিদের খতিবরা আলোচক হিসেবে থাকেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিয়মিত ইফতারসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে খেজুর, শরবত, ছোলা, মুড়ি, জিলাপি, আলুর চপ, ছমুছা, অন্থন, পেঁয়াজু ইত্যাদি। এছাড়া মাঝে মধ্যে মওসুমি ফল এবং থাকে বিরিয়ানিও পরিবেশন করা হয়।
১৯৯৬ সাল থেকে এ মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা ছাইয়্যেদ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল মাদানী। ঐতিহ্যবাহী জুমা মসজিদের খতিবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ছোট পরিসরে ২০০১ সাল থেকে শুরু হলেও বড় পরিসরে ২০০৮ সাল থেকে ১৯ বছর ধরে এখানে আয়োজন করা হচ্ছে ধনী-গরিবের বৈষম্যহীন সুবিশাল ইফতার আয়োজন।
ধনী-গরিবের বৈষম্যহীন ইফতারে নগরের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। সেখানে সৃষ্টি হয় সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য পরিবেশ।
ইফতার আয়োজক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সারি সারি প্লেটে রাখা ইফতারি সামনে নিয়ে বসে আছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। মসজিদের বারান্দায় সারিবদ্ধভাবে বসে আছেন শত শত মানুষ। একসাথে ইফতারে বসার ক্ষেত্রে ধনী-গরিব কোনো ভেদাভেদ নেই। পুরো রমজান মাসজুড়েই এই আয়োজন চলবে।
শাহী জামে মসজিদের খতিবের সহকারী মোহাম্মদ হাছান মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, খতিব হুজুরের তত্ত্বাবধানে ইফতারের আয়োজন করা হয়। গত দুই রোজায় করোনার কারণে ইফতার আয়োজন বন্ধ ছিল। রোজা প্রথম সাপ্তাহে দেড় থেকে দুই হাজার এবং এরপর থেকে তিন থেকে চার হাজার রোজাদারের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয় ইফতারি। টাটকা ও স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারি যাতে সবাই খেতে পারেন সেই চেষ্টা করা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে ইফতারের নানান আইটেম তৈরির কাজ শুরু হয়। রোজাদারের জন্য ইফতার তৈরি করতে রমজান মাসজুড়ে ১২ জন বাবুর্চি কাজ করছেন। ইফতার সরবরাহের কাজে নিয়োজিত আছেন ১৫ জন খাদেম।
তিনি আরও বলেন, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এ ইফতারের আয়োজন করা হয়। এখানে যারা সহযোগিতা করেন তারা কেউ নামের জন্য করেন না। সবাই সওয়াবের উদ্দেশ্যে ইফতার আয়োজনে শরিক হন। এই আয়োজনে গত ৩১ মার্চ থেকে আমাদের কাছে ছোলা, তেল ও পেয়াজ ইত্যাদি দিয়ে মানুষ সহযোগিতা করে আসছেন। রোববারও একজন ব্যক্তি এক গাড়ি ইফতার তৈরি সামগ্রী পাঠিয়েছেন। মসজিদের একটি রুমে এই জিনিসপত্র রাখা হচ্ছে। প্রত্যেকদিন রোজায় যোহরের নামাজের পরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের সঙ্গে মুঘলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের ইতিহাস সুনিবিড়ভাবে জড়িত। কথিত আছে, কিল্লাটি মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল। ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি শায়েস্তা খাঁর ছেলে উমেদ খাঁ কিল্লার ভেতরে প্রবেশ করলে এর নাম হয়ে যায় আন্দরকিল্লা। পরে বিজয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে সম্র্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৭ সালে সেখানে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদে রয়েছে পাঁচটি প্রবেশদ্বার। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০ ফুট ওপরে পাহাড়ের টিলায় মসজিদটির অবস্থান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২২
এমআই/টিসি