ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

এক ‘অলৌকিক’ সৈনিকের গল্প

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
এক ‘অলৌকিক’ সৈনিকের গল্প ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চার কিলোমিটার ওপরে ভারত এবং চীনের সীমান্ত এলাকা নাথুলা। ঐতিহাসিক ‘সিল্ক রুট’ বলতে যে পথের কথা বলা হয়, সেই পথ ছিল নাথুলার পাশ দিয়ে।



এই সীমান্তেই ভারতের এক ‘অলৌকিক’ সেনা কর্মকর্তার স্মৃতিতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি মন্দির। নাম, ‘বাবা হরভাজান সিং’।

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, প্রতি মাসে ভারত-চীন সীমান্তে পতাকা বৈঠকে চীনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়। তাদের বিশ্বাস, ওই চেয়ারে বসেন প্রয়াত ক্যাপ্টেন হরভজন সিং।

ঘটনার শুরু ১৯৬৮ সালের ৪ অক্টোবর। প্রবল বর্ষার ফলে বন্যার মধ্যে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে নিখোঁজ হন ভারতীয় সিপাহি হরভজন সিং। বেশ কিছুদিন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। কিন্তু পরে ঘটে এক চমকপ্রদ ঘটনা।

প্রচলতি তথ্যমতে, ‘ওই এলাকায় কর্মরত এক সেনা জাওয়ান তার হারিয়ে যাওয়া সহকর্মী হরভজন সিংকে স্বপ্নে দেখেন। স্বপ্নে সিং বলেন, ওই পাহাড়ি এলাকায় তার দেহ আটকে আছে। সেনাবাহিনীর একাধিক জওয়ান সেই একই স্বপ্ন দেখতে থাকেন। বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি দল পাঠিয়ে স্বপ্নে দেখা জায়গায় খোঁজ করতেই পাওয়া যায় হরভজন সিংয়ের মরদেহ। সেই থেকে রহস্যের শুরু। স্থানীয় বাসিন্দা ও জওয়ানরা বিষয়টি ‘আলৌকিক’ ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন।

সহকর্মীদের স্বপ্নে হরভজন সিং দু’টি অনুরোধ করেছিলেন। এক. তার নামে যেন একটি সমাধি নির্মাণ করা হয়। দুই. মৃত্যুর পরেও একজন সেনা হিসেবে কাজ করে যেতে চান তিনি। সেই ইচ্ছা অনুযায়ী বৈঠকের সময় একটি চেয়ার ফাঁকা রাখার সংস্কৃতি চালু হয়।

জানা যায়, ভারত ও চীন সীমান্তে এক সেনা জাওয়ানকে একা ঘোড়ায় চড়ে পাহারা দিতে দেখেছেন দুই দেশেরই সীমান্ত রক্ষীরা। তিনিই হরভজন সিং বলে মনে করা হয়।

হরভজন সিংয়ের অবসরে যাওয়ার বয়স হওয়ার আগ পর্যন্ত তার বাড়িতে বেতনের চেক পৌঁছে দিত ভারতীয় সেনাবাহিনী। মৃত্যুর পর তাকে ক্যাপ্টেন পদেও উন্নীত করা হয়।

সমাধির সঙ্গে বানানো হরভজন সিংয়ের বিশ্রাম কক্ষের বিছানার চাদর প্রতিদিন এমন হয়ে থাকে, যা দেখে অনেকেরই মনে হয়, কেউ যেন রাতে সেখানে বিশ্রাম করেছেন। ওই মন্দিরে ভক্তরা প্রসাদ হিসেবে নিয়ে আসেন শুধু এক বোতল পানি। ভক্তদের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী সেখানে খাওয়া ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করে।

প্রতিবছর হাজার-হাজার মানুষ ১৪ হাজার ফুট (৪ কিলোমাটিরের অধিক) দূরত্ব অতিক্রম করে এই মন্দিরে যান। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বিষয় বাদ দিয়ে খুব নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ১৪ হাজার ফুট পাহাড়ের ওপর বরফে ঘেরা জমি আর কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসের মধ্যে হরভজন সিং এক লড়াকু মানুষের প্রতীক। যে লড়াকু মানসিকতা যেমন সীমান্তের প্রহরীদের সাহস যোগায়, ঠিক তেমনই সাহস যোগায় পৃথিবীর সব লড়াকু মানুষকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
ভিএস/আরএইচএস/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।