দিল্লি: ভারতের নয়াদিল্লিতে প্রতিষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।
২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টা বাজতে না বাজতেই হঠাৎ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততা কেমন যেন বেড়ে গেল।
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। অথচ, এখনও পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ করার কাজটিই হয়ে ওঠেনি।
কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের পিএইচডি শিক্ষার্থী সুমিত কুমার বংশালের নেতৃত্বে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজে নেমে পড়লেন মাস্টার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আশফাকুজ্জামান চৌধুরী, নুরুল আমিন হক, ইব্রাহিম খলিল মারুফ, মো. ইউনুস আলী ও আনু মারমা।
তৌহিদুল বাসার আসাদ, মো. বাবু মিয়া, মো. রাশেদুজ্জামান খান দিপু এবং জুলিয়া নাসরিন তখন ব্যস্ত ফুল দিয়ে চারপাশ সাজানোর কাজে।
এরই মধ্যে রঙ্গিন কাগজ দিয়ে বর্ণমালা তৈরির কাজে বসে যান মো. তারেক এবং জাহিদ ওসমানী। তাদের সঙ্গে যোগ দেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্ঘশ্রী মুখোপাধ্যায়। দেশটা আলাদা হতে পারে কিন্তু ভাষাটা তো এক।
তাই বাংলা ভাষার প্রতি একটা টান কোথায় যেন রয়েই যায়। ব্যস, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাত ১১টা বাজার আগেই তৈরি হয়ে গেল শহীদ মিনার।
আর এই পুরো ব্যাপারটিতে সমন্বয় করেন সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সাংস্কৃতিক কমিটির বাংলাদেশি প্রতিনিধি সমাপ্তি চাকমা ।
ঘড়ির কাটা তখন রাত ১২টা ছুঁই ছুঁই। আর কয়েক মূহূর্ত পরেই শুরু হবে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্কভুক্ত সদস্য দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠলো সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।
সবাই ফুল হাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।
রাত ১২টা বেজে ০১ মিনিট। সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে প্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন ভাষা শহীদদের প্রতি।
এরপর একে একে সার্কভুক্ত ৮ টি দেশের শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান ভাষা শহীদদের প্রতি আর পেছনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...’।
এ যেন দেশের বাইরে থেকেও, অন্তরে বাংলাদেশকে অনুভব করতে পারার এক দুর্লভ মূহূর্তু।
শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ হলে সমবেত সবার উদ্দেশ্যে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং এর তাৎপর্য তুলে ধরেন উন্নয়ন অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শেষ বর্ষের ছাত্র মো. নজরুল ইসলাম পারভেজ।
নিজের ভাষার জন্য যে কোনো জাতি রক্ত দিতে পারে এ কথা বিশ্বাস করতে যেন খুব কষ্ট হচ্ছে ভিনদেশি শিক্ষার্থীদের।
এরপর ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
নয়াদিল্লীস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের আমন্ত্রণে বিকেল ৫টায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সমবেত হন বাংলাদেশ হাইকমিশনের মৈত্রী হলে।
সেখানে অমর একুশে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন তারা।
সন্ধ্যা ৭টায় সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য দেন সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ড. কবিতা শর্মা।
সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী আতিক শুভ।
বাংলা কোরাস গানে অংশ নেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সৌরভ সিনহা, শুচিস্মিতা সীমন্তি, আমিরুল ইসলাম সুজন, রুবিনা আক্তার, নাজমা খাতুন, ফারজানা
আহমেদ, তাহমিনা আক্তার এবং নাঈম।
রবীন্দ্রনৃত্য পরিবেশন করেন ভারতের শিক্ষার্থী তানিয়া শেঠ। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী নিয়ামত আলী এনায়েত এবং আফগানিস্তানের শিক্ষার্থী আবু বকর।
পাকিস্তানের শিক্ষার্থী মেহবুব ইয়াকুব পবিবেশন করেন একক সংগীত। বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ইফফাৎ তাহমিদ ফাতেমার নেতৃত্বে ফিউশন নাচে অংশ নেন নেপাল এবং ভারতীয় শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব ভাষায় আরও নানা পরিবেশনার মাধ্যমে সম্মান জানান মাতৃভাষার প্রতি এবং বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি।
জাতীয় পরিসর ছাড়িয়ে অমর একুশে লাভ করে এক আন্তর্জাতিক রূপ। পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ভারতের শিক্ষার্থী সঙ্ঘশ্রী মুখোপাধ্যায় এবং নেপালের শিক্ষার্থী ববিতা ঠাডারি।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬
এমএ/