আগরতলা: হিন্দু ধর্মের ভগবানকে আরাধনার অন্যতম একটি অঙ্গ হলো কীর্তন। ভক্ত ও সাধকদের এ গান বিশুদ্ধ সুর ও তালে গাইতে একটি বিশেষ বাদ্যযন্ত্রের দরকার হয়।
মাটির অংশটিকে অন্য সব মাটির সামগ্রীর মতো তৈরি করার পর আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করা হয়। সবশেষে খোলের দুই অংশ ফাঁকা করে চামড়া বাঁধিয়ে বাজানোর উপযুক্ত করা হয়।
সব কুমারশিল্পী আবার এটি তৈরি করেন না। আগরতলা রাজ্যের খোয়াই জেলার কল্যাণপুর এলাকার কুমার নিত্যহরি রুদ্রপাল। তিনি খোল তৈরি করেন।
সুদর্শন নিত্যহরি রুদ্রপাল বাংলানিউজকে জানান, তার বয়স যখন ২৫ বছর বয়স, তখন থেকে মাটির সামগ্রীটি তৈরি করে আসছেন। এ কাজ শুরু করার বেশ কয়েক বছর আগে তাকে কীর্তনের দলে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। পরে তিনি খোল তৈরি করার কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তার বয়স ৫৩ বছর। এখনও সমান তালে খোল তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
ত্রিপুরা রাজ্যের খুব বেশি কুমার এটি তৈরি না করায়, খোয়াই জেলার পাশাপাশি আগরতলা, কৈলাসহর, কুমারঘাট, মনুঘাট, তেলিয়ামুড়াসহ রাজ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক এসে এগুলো নিয়ে যান। খোল তৈরির জন্য মাটি কিনে আনতে শ্রমিকের খরচ ও গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছানো- সব মিলিয়ে চার হাজার রুপি খরচ হয় তার। এক গাড়ি মাটি দিয়ে প্রায় ২শ’টি খোল তৈরি করা যায়।
একটি খোল ২শ রুপি করে বিক্রি করেন বলে জানান তিনি। তিনি বছরে প্রায় ৪শ খোল তৈরি করে থাকেন। খোল তৈরির পাশাপাশি তিনি তবলার বায়াসহ অন্য সব মাটির সামগ্রী তৈরি করেন বলেও জানান। তবে খোল তৈরির জন্য মাটিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বালিও মেশাতে হয়।
তার স্ত্রী, ছেলে, ছেলে বউ ও নাতি-নাতনি মিলিয়ে মোট সাতজন সদস্য রয়েছেন। তার দুই ছেলে থাকলেও তারা কুমারের পেশায় যুক্ত নন। তবে তার স্ত্রী মাঝে মধ্যে তাকে সহায়তা করেন। এক ছেলের ছোট একটি দোকান রয়েছে। অন্যজন গত কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ।
মূলত তাকেই পরিবারের প্রধান হিসেবে রোজগারের ব্যবস্থা করতে হয়। তবে আগের তুলনায় মানুষ এখন সামাজিক অনুষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে তাই এ ধরনের গান-বাজনা কম হচ্ছে। ফলে খোলের চাহিদাও কমছে দিন দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৬
এএটি/এসএনএস