কলকাতা: ভারতে ৫০০ এবং ১০০০ রুপির নোট বাতিল হয়েছে আট দিন পার হয়ে গেলো। তবুও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি মোটেও কমেনি এক রত্তি।
মারকিউ স্ট্রিট অঞ্চল এবং তার আশপাশের হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং দোকানগুলো এক প্রকার মাছি তাড়াচ্ছে বললেই চলে। যেখানে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পা ফেলবার জায়গা থাকতো না, সেখানেই আজ গড়ের মাঠ। মনে হচ্ছে দোকানের কর্মীরা হরতালের ছুটিতে জমিয়ে আড্ডা মারছেন। শুধু হাসি নেই মালিকপক্ষের।
এখানকার হোটেলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হোটেলের রুমগুলো ফাঁকা। যেখানে রুম পাবার জন্য সারাবছরই রীতিমত লাইন পড়ে থাকে। সেখানে গড়ে একটি বা দু’টি রুম বুকিং আছে। এরফলে রুমগুলোর দাম নেমে গেছে অনেকটাই। যে সমস্ত রুমের ন্যূনতম ভাড়া ছিলো ২ হাজার থেকে বাইশশো রুপি। এখন সেখানে ১ হাজার রুপিতেই ঘর পাওয়া যাচ্ছে।
হোটেলের কর্মচারীরা জানাচ্ছেন, দাম কমালেও চাহিদা নেই ঘরের। ৫০০ এবং ১০০০ রুপির নোট বাতিলের ঘোষণা আটদিন পার হয়ে গেলেও পরিস্থিতি এখনও জটিল। কারণ নতুন নোট এখনো সেভাবে বাজারে এসে পৌঁছায়নি।
নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই ডিসেম্বর মাসের বুকিং শুরু হয়ে যায়। প্রতি বছর প্রবল চাহিদার জন্য ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই অগ্রিম বুকিং নেওয়া বন্ধ করে দেয় এ অঞ্চলের হোটেলগুলো।
এ বছরে চিত্র একেবারেই উল্টো। হোটেলের কর্মচারীরা জানাচ্ছেন গত সাত দিনে অগ্রিম বুকিংয়ের সংখ্যা নেই। একাধিক হোটেলে গত সপ্তাহ থেকে একটিও অগ্রিম বুকিং আসেনি। ফলে আগামী মাসের ব্যবসা নিয়েও তারা চিন্তিত। একই চিত্র এ অঞ্চলের রেলের এবং বিমান টিকিট এজেন্সি গুলোতেও।
নিউ মার্কেটেও একই চিত্র। যেখানে পর্যটকদের ভিড়ে পা রাখা যেতো না, সেখানেও মালিকদের গালে হাত। দোকানগুলোতে ভিড় নেই। তবে দিন কয়েক বাদেই পশ্চিমবঙ্গে শুরু হচ্ছে বিয়ের মৌসুম। ওইটুকুই আশার আলো তাদের কাছে।
নিউমার্কেটের দোকানদার রাজেশ আগরওয়াল বলেন, ব্যবসায় যে সাময়িক ক্ষতি হয়েছে মেনে নিচ্ছি। তবে দেশের সুরক্ষা আর দেশের স্বার্থের কথা ভেবেই মেনে নিচ্ছি এসব।
নিউ মার্কেট, মারকুইস স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, সদর স্ট্রিটে এমন ফাঁকা ছবি শেষ দেখা গিয়েছিল কলকাতার ৪২ ডিগ্রি গরমে। হাসতে হাসতে এমন কথা জানালেন আর এক ব্যবসায়ী শেখ জামাল।
কলকাতাসহ ভারতে সমস্ত জায়গায় নতুন নোটের তীব্র অভাব আজ অব্দি। আর এ নতুন রুপির অভাবের ফলেই মারকুইস স্ট্রিট সংলগ্ন অঞ্চলের ‘কারেন্সি এক্সচেঞ্জের’ দোকানগুলোর সামনে "নো ক্যাশ" বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারেন্সি এক্সচেঞ্জের’ দোকানগুলোতে কথা বললে তারা জানায়, তাদের কাছে নতুন নোট নেই। ফলে কাজ বন্ধ রেখেছে।
সূত্র মতে, কারেন্সি এক্সচেঞ্জের নামে চূড়ান্ত কালোবাজারি হচ্ছে। যেখানে ডলার এবং বাংলা টাকার ও অন্যান্য কারেন্সির বিনিময় মূল্য রির্জাভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) ঠিক করেছে, সেখানে নির্ধারিত মূল্যের থেকে অনেক কম রুপি দেওয়া হচ্ছে। তাই মঙ্গলবার থেকে অঞ্চলে অঞ্চলে সাদা পোশাকে পুলিশ নজরদারি শুরু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ফলে কালোবাজারি কারেন্সি এক্সচেঞ্জরা’ হাত গুটিয়ে নিয়েছে।
বিশেষ প্রয়োজনে এবং চিকিৎসার জন্য থাকা বাংলাদেশিদের কাছ থেকে জানা যায়, তারা কলকাতা থেকে বর্ডারে এসে মানি এক্সচেঞ্জ করেছেন। তবে তাতে যে তাদের সুবিধা হয়েছে তা মোটেই নয়। মোটা টাকার বিনিময়ে রুপি হাতে পেয়েছেন এনারা। তবে সেখানে সাদা পোশাকে পুলিশের খবর পাওয়া যায়নি।
এত কিছু সমস্যা থাকলেও আশার আলো একটাই। পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিকের দিকে। আশা করা হচ্ছে আর দিন পনেরোর মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা বদল হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, ১৬ নভেম্বর, ২০১৬
ভি.এস/এসএইচ