দিল্লি থেকে: সত্যি জাদু আছে দিল্লি জাতীয় জাদুঘরে। অন্যতম বড় এ জাদুঘরটি ভারতেরও জাতীয় জাদুঘর।
সভত্যতার ইতিহাস যেখানে শুরু সেই হরোপ্পা ও মাহেঞ্জোদারো থেকে শুরু করে মুঘল, ব্রিটিশ আমলের চোখ ধাঁধানো সব নিদর্শন রয়েছে এখানে।
দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে তাই বাংলাদেশের তরুণদের নেওয়া হলো সোজা দিল্লি জাদুঘরে।
ভারতবর্ষের শিল্প-সাহিত্য-ইতিহাস-সভ্যতা জানার জন্য জাদুঘরে সংক্ষিপ্ত চক্কর। অবশ্য যে জাদুঘর দেখার জন্য সময় প্রয়োজন কয়েকদিন, তাতে আমরা সময় পেলাম মোটে ঘণ্টাখানেক।
২ লাখ শিল্পকর্ম রয়েছে এখানে, যার অনেকগুলো ৫ হাজার বছর আগের। এগুলোই জাদুঘরের প্রাণ।
রিসিপশন পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাবে ১২শ’ শতকে রাজস্থানে পাওয়া বিদ্যাদেবী সরস্বতীর মূর্তি।
ডেলিগেশন টিমের সদস্যদের জন্য তিনটি গ্রুপ করে তিনজন গাইড দিয়ে দেওয়া হলো ইংরেজিভাষী। চাইলে এখানে যে কেউ ইংরেজি, হিন্দি, স্প্যানিশ, ডাচ ভাষায় বর্ণনা শুনতে শুনতে দেখতে পারেন পুরো জাদুঘর।
কানে লাগিয়ে রাখতে হবে শুধু হেডফোন। তবে এর জন্য খরচ অর্থকরতে হবে।
১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটিতে রয়েছে প্রাক-সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্য আলাদা বিভাগ। এভাবে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে সাজানো হয়েছে জাদুঘরটি।
স্থাপত্যশিল্প, শিলালিপি, বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্মের জন্য আলাদা ভাগ,এন্টিকস, জুয়েলারি, নৃতত্ত্ব, ব্রোঞ্জশিল্প, কাঠশিল্প, কয়েন প্রভৃতির আলাদা সংগ্রহশালা।
মুঘল, ব্রিটিশ শাসনামলের নানান নিদর্শন, ইতিহাস, প্রথাও জানা যাবে এখানে।
পাথর, ব্রোঞ্জ, টেরাকোটার অসংখ্য সংগ্রহ সমৃদ্ধ করেছে জাদুঘরটিতে। শুরতেই হরোপ্পা, মাহেঞ্জোদারো সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন।
এ সভ্যতার মানুষ যে অগ্রসর ছিলো, সভ্যতাকে কত এগিয়ে নিয়েছে তা গোটা পাঁচেক কক্ষের সংগ্রশালা দেখলেই বোঝা যায়।
সে সময়ের জীবনযাত্রার বিভিন্ন উপকরণ আজও জাদুর মতো টেনে রাখছে দর্শনার্থীদের। মাটি খুঁড়ে হরোপ্পা সভ্যতার সময়ে হরিয়ানায় পাওয়া একটি কংকালও সংরক্ষিত রয়েছে এখানে।
রয়েছে একই সময়ের কিছু টেরাকোটা ও মৃৎশিল্প নিদর্শন।
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ থেকে প্রথম শতক পর্যন্ত আলাদা একটি গ্যালারি রয়েছে। এতে রয়েছে ধনদেবতা কুবেরের পাথরের আবক্ষমূর্তিটি আকর্ষণীয়।
আর ব্রোঞ্জ গ্যালারিতে দেবতা নটরাজের প্রলয় নৃত্য সত্যি জাদুটানা। সপ্তম থেকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত রাজপ্রথার সময়ের যে নিদর্শনগুলো পাওয়া যায় তার অধিকাংশ দেব-দেবীর মূর্তি।
১৭ হাজারের বেশি মিনিয়েচার আর্ট রয়েছে এখানে। এগুলো আবার মুঘল, হায়দ্রাবাদি, রাজস্থানি-ই বেশি।
শিল্পকর্মগুলো আবার তালপাতা, কাঠ, কাপড়, চামড়ার উপরেই বেশি। সম্রাট জাহাঙ্গীর ও শাহজাহান শিল্পের কদর করতেন বেশি।
তাই ওই আমেলের কাজ বেশি দেখা গেলো। প্রাচীন পুঁথির সংগ্রহও চোখে পড়ার মতো। বিনিময়প্রথার দীর্ঘ ইতিহাস ও মাধ্যমের নানান নিদর্শন টেনে রাখে দর্শনার্থীদের।
ভাষার বিবর্তনের দীর্ঘ ইতিহাসও দারুণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে। তিনতলায় সাজানো জাদুঘরে কেনাকাটার জন্যও রয়েছে একটি স্যুভেনির হাউজ।
তবে দাম বেশ চড়া। সোমবার বাদে যে কোনো দিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঘুরে দেখলে একনজরে জেনে নিতে পারবেন ভারতীয় উপমহাদেশ ও এশীয় কয়েকটি দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাসের আকর।
বাংলাদেশের ইয়ুথ ডেলিগেশন টিম অতি সংক্ষিপ্ত সময়ে কিছুটা হলেও সমৃদ্ধ হয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক, নৃ-তাত্ত্বিক- শিল্পীদের স্বর্গ এ জাদুঘর।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬
এএ/