কলকাতা: সারা জীবন নিজের মায়ের পরিচয়ে বড় হয়েছেন জয়ললিতা। সম্ভবত সেখানেই তার জীবনে নারী চরিত্রের শক্তিশালী প্রতীক হওয়ার বীজ রোপণ হয়েছিলো।
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের মান্ডিয়াম আয়েঙ্গার পরিবারে জন্মগ্রহণ করা জয়ললিতা নিজেকে কখনও কন্নড় (কর্ণাটকের ভাষা) বলতেন না। তিনি তার মায়ের পরিচয় সামনে এনে নিজেকে তামিল হিসেবেই বেশি ভাবতেন।
জয়ললিতার মা ভেদাভাল্লি ছিলেন তামিলনাড়ুর একজন জনপ্রিয় স্টেজ শিল্পী এবং ফিল্ম অভিনেত্রী। মায়ের কাছেই জয়ললিতার অভিনয়ের প্রথম হাতেখড়ি।
১৯৬১ সাল, শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ হয় তার। ‘এপিস্টল’ নামে একটি ইংরেজি ছবিতে প্রথম শুটিং শুরু করেন। ২২-২৩ বছর বয়েসে এরপর কন্নড় ও হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেন।
এছাড়া ‘কারনান’, ‘চিনাদা গম্বে’ ইত্যাদি বিখ্যাত ছবিতে অভিনয় করেন জয়ললিতা।
আরও পড়ুন: নায়িকা থেকে তামিলনাড়ুর ‘আম্মা’
পড়াশোনায় যথেষ্ট ভালো ছাত্রী ছিলেন তামিলনাড়ুর সবার ‘আম্মা’। তার সুন্দর ইংরেজি বলার ক্ষমতার জন্য তিনি রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে সমসাময়িকদের থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে ছিলেন।
অভিনয় জগতে পরিকল্পনা করে আসেননি। ঘটনাচক্রে তিনি জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্র জগতে। ১৯৬৫ সালে তার প্রথম তামিল ছবির নাম ‘ভেনিরা আদাই’।
তারপর তিনি তামিল, তেলেগু, কানাড়া এবং একটি হিন্দি মিলিয়ে ১৪০টি ছবিতে অভিনয় করেন।
তার জীবনে আসেন প্রবাদ প্রতিম শিল্পী এম জি রামচন্দ্রন। জুটি বেঁধে একের পর এক হিট চলচ্চিত্র উপহার দেন তারা। ১৯৬৫ সালে ‘আইরাথিল অরুভান’ এর সাফল্যকে তামিলনাড়ুর অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তাকে।
জয়ললিতার সঙ্গে এম জি রামচন্দ্রনকে জড়িয়ে তামিল রূপালি জগতে যথেষ্ট গুঞ্জন ছিলো। মনে করা হয় এম জি রামচন্দ্রন তাকে হাত ধরে নিয়ে আসেন রাজনীতিতে।
তবে এম জি রামচন্দ্রনের সঙ্গে বছর পাঁচেকের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয় জয়ললিতার। তার মৃত্যুর পর দল দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ক্ষমতার কেন্দ্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন জয়ললিতা।
তামিলনাড়ুতে সস্তায় খাওয়ার ‘আম্মা ক্যান্টিন’। চাষিদের জন্য ‘আম্মা সিডস’, ‘আম্মা হেলথ চেক আপ ক্যাম্প’ ইত্যাদি করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন তিনি।
তবে বিতর্ক কখনই পিছু ছাড়েনি জয়ললিতার। একের পর এক দুর্নীতির মামালায় তিনি জড়িয়ে পড়েছেন। কখনও নিজের পালিত ছেলের বিয়েতে ১০ কোটি রুপি খরচ করে আবার কখনও আয় আর সম্পত্তির বিস্তর ব্যবধান নিয়ে দুর্নীতির কথা উঠেছে।
পালিত ছেলের বিয়েতে জয়ললিতা দেড় লাখ অতিথিকে নিমন্ত্রিত করেছিলেন। যা গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নথিভুক্ত হয়। তবে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেতন নিতেন মাত্র এক রুপি।
জয়ললিতার মৃত্যুতে তামিল রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এখন দেখার তামিল রাজনীতির ধারা জয়ললিতার পরে কোন খাতে বইতে শুরু করে।
জয়ললিতার মৃত্যুতে সাতদিন শোক ঘোষণা করা হয়েছে তামিলনাড়ুতে। রাষ্ট্রীয়ভাবে একদিনের শোক ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬
এসএস/এমএ