কলকাতা: নোট বাতিলের প্রভাব কি তবে সরাসরি পড়তে শুরু করলো মিডিয়ার ওপর! পূর্বভারতের বহুল প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা ও দ্য টেলিগ্রাফ ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কর্মী হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্যে যেমন রয়েছে সাংবাদিক, ঠিক তেমনি অন্যান্য বিভাগের কর্মীরা।
অন্যান্য কিছু মিডিয়ায় খবর নিয়েও জানা যাচ্ছে, একই ধরনের ঘটনা সেখানেও ঘটছে।
সূত্র আরও জানাচ্ছে, এবিপি গোষ্ঠীতে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করা হবে। তবে কর্মচারীদের চাকরি গেলেও তাদের 'বেসিক পে' তার অবসরের বয়স পর্যন্ত পেতে থাকবেন।
আনন্দবাজার পত্রিকার তরফে যদিও এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য জানানো হয়নি।
গত এক মাস আগে অভীক সরকার আনন্দবাজার পত্রিকার এডিটর-ইন-চিফ পদ থেকে ইস্তফা দেন। বর্তমানে আনন্দবাজার পত্রিকা ও টেলিগ্রাফ পত্রিকার চিফ এডিটরের পদটি সামলাচ্ছেন অভীক সরকারে ভাই অরূপ সরকার। অরূপ সরকারের ছেলে অতিদেব সরকার এবিপি গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পদটি সামলাচ্ছেন।
নোট বাতিলের পরে পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপন আসা বহুগুণ কমে। আনন্দবাজার পত্রিকা ছাড়াও অন্যান্য পত্রিকাগুলো তাদের পাতা সংখ্যা প্রায় অর্ধেক করে দিয়েছে।
সূত্র জানাচ্ছে, এবিপি গোষ্ঠীতে সাম্প্রতিক কালে প্রতিটি বিভাগ থেকে ৫০ শতাংশ কর্মী ছাটাই করার তালিকা তৈরি হয়। এই গোষ্ঠীর দু’টি পত্রিকা মিলে প্রায় ১২শ কর্মী কাজ করেন। এছাড়া এবিপি গোষ্ঠীর চারটি ভাষার চ্যানেলে আরও অনেক কর্মী কাজ করেন।
কর্মী সংকোচন না করলেও পাতার সংখ্যায় কাটছাট করছে অনেকেই। কারণ হিসেবে জনা যাচ্ছে, করপোরেটদের তরফ থেকে বিজ্ঞাপন আসা বন্ধের মুখে। পাতা কমিয়েছে বর্তমান, প্রতিদিন, এই সময়ের মতো পত্রিকাও। করপোরেট ছাড়াও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান যারা ছোট ছোট বিজ্ঞাপন দিতো তারাও বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করেছে। তাই সঙ্কটের মুখে পত্রিকাগুলো। অনেক ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন দাতারা ‘ক্যাশ’-এ বিজ্ঞাপন দিতেন। তারাও নোট সংকটে বিজ্ঞাপন দিতে পারছেন না।
১৯৯৭ সালেও এবিপি গোষ্ঠী থেকে কর্মী ছাটাই করা হয়েছিল। ইতোমধ্যেই সংবাদপত্র দু’টির অতিরিক্ত পাতা অনেক কমিয়ে ফেলা হয়েছে। কমে গেছে মূল পত্রিকার পাতার সংখ্যাও। কেউ কেউ মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের ফলেই তড়িঘড়ি কর্মী ছাটাইয়ের কারণ হতে পারে। আবার অনেকে মনে করছে প্রতিযোগিতা এই সিদ্ধান্তের একটি বড় কারণ। কেউ কেউ সরকারি বিজ্ঞাপনের দিকটি তুলে ধরছেন।
গত দুই বছরের ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এবিপি গোষ্ঠীর খবরের কাগজগুলোতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া বিজ্ঞাপন অনেক কম। সেই সঙ্গে ওয়েবসহ অন্যান্য মাধ্যম এবং অন্যান্য খবরের কাগজ আনন্দবাজার পত্রিকার পাঠক ছিনিয়ে নিয়েছে।
যদিও এবিপি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এই খবরের কোনো সত্যতা স্বীকার করা হয়নি, তবে ৯৪ বছরের পুরনো এ পত্রিকার এই বড় মাপের কর্মী ছাটাইয়ের খবর, ভারতের মিডিয়া মহলে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করতে চলেছে এই কথা নিশ্চিত করে বলা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
ভিএস/এসএনএস